ভারতের অযোধ্যায় বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানে একটি মন্দির গড়ার জন্যই সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট অবশেষে রায় দিয়েছে। মন্দির গড়ার জন্য সরকারকে একটি ট্রাস্ট গঠন করতেও বলা হয়েছে।
তবে অযোধ্যাতেই অন্যত্র একটি মসজিদ গড়ার জন্যও সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি বরাদ্দ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অযোধ্যার যে ২.৭৭ একর জমিকে বিরোধের মূল কেন্দ্র বলে গণ্য করা হয়, তা বরাদ্দ করা হয়েছে ‘রামলালা বিরাজমান’ বা হিন্দুদের ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের বিগ্রহকে। যার অর্থ সেখানে রামমন্দিরই তৈরি হবে।
ভারতের শীর্ষ আদালতে পাঁচ সদস্যের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এই রায় দিয়েছে।
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক আদালত এই রায় দিয়েছে।
দিল্লি থেকে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা শুভজ্যতি ঘোষ জানিয়েছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কোন সুযোগ নেই, কারণ এটিই ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টে একটানা ৪০ দিন শুনানি হওয়ার পরে রায় লেখার জন্য মাসখানেক সময় নেয়া হয়।
প্রধান বিচারপতি ছাড়া বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন এস এ বোডবে, ওয়াই ভি চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ ও এস আবদুল নাজির।
অযোধ্যার বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানটি যে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে, সেখানে ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বারো হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অযোধ্যায় কারফিউ জারি রয়েছে গত প্রায় দুসপ্তাহ ধরে।
এদিন রায় ঘোষণার আগে গতকাল প্রধান বিচারপতি গগৈ গতকাল শুক্রবারই রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উত্তরপ্রদেশের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলেন।
উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক ও রাজস্থান-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আজ স্কুল-কলেজ সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখা হয়েছে। শনিবার হওয়ার কারণে বেশির ভাগ সরকারি অফিসেও ছুটি।
১৯৯২ সালে কট্টর হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার পর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় কমবেশি ২০০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল।
কট্টরপন্থী হিন্দুরা দাবি করেন বাবরি মসজিদের জায়গাতেই ভগবান রামের জন্ম হয়েছিল এবং একটি রামমন্দির ভেঙ্গে মোগল আমলে সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল।
বাবরি মসজিদ আর রাম জন্মভূমি নিয়ে বিতর্ক কয়েক শতাব্দী ধরে।
এ নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বারে বারে দাঙ্গা হয়েছে।
ব্রিটিশ সরকার ভেতরের অংশটা মুসলিমদের আর বাইরে চত্বরটা হিন্দুদের ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল।
কিন্তু ১৯৪৯ সালে মসজিদের ভেতরে কে বা কারা রামের মূর্তি রেখে দেয়। মুসলিমরা তখনই প্রতিবাদ করেন এবং সরকার জমিটিকে বিতর্কিত ঘোষণা করে তালা বন্ধ করে দেয়।
জমির মালিকানা কার সেটা ঠিক করতে সেবছরই আদালতে প্রথম মামলা হয়।
এরপরে ফৈজাবাদের জেলা আদালত ১৯৮৬ সালে তালা খুলে হিন্দুদের পূজার অনুমতি দেন। আর তখন থেকেই রাম জন্মভূমি আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে মামলাও চলতে থাকে।
২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় যে বিতর্কিত জমিটি তিনভাগ হবে – দুভাগ পাবেন হিন্দুরা আর এক ভাগ পাবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড।
তার বিরুদ্ধে সবপক্ষই সুপ্রিম কোর্টে যায় ২০১১ সালে।
সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বাইরে সব পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছিল।
কিন্তু তা ব্যর্থ হওয়ায় মামলাটি বিশেষ বেঞ্চ শুনানি শুরু করে।