হবিগঞ্জ সদর উপজেলা শহরের টাউন হল রোডে অবস্থিত ‘সেন্ট্রাল হসপিটাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্ট্রারে’ টিউমার অপারেশন করতে গিয়ে এক নারীর জরায়ু কেটে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে ডা. আরশেদ আলীর বিরুদ্ধে। বর্তমানে ওই নারী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত সোমবার (২৪/০৮/২০২০ ইং) রাতে সেন্ট্রাল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এসে রোগীর স্বজনরা বিক্ষোভ করেন। এছাড়াও ঘটনায় হাসপাতাল চত্তরে ভীড় জমাট বাঁধলে এলাকার বয়োজৈষ্ঠ মুরব্বিরা এগিয়ে এসে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিবেশ শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে তারা পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এ ঘটনায় রোগীর স্বজনরা ‘সেন্ট্রাল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ ও ডা. আরশেদ আলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে জানা গেছে – বানিয়াচং উপজেলার মক্রমপুর গ্রামের মৃত নোয়াজিশ মিয়ার স্ত্রী খদর চাঁন (৬৫) জরায়ু টিউমারে আক্রান্ত হন। গত ১ সপ্তাহ আগে তিনি হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি হন। গত রবিবার সকালে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. আরশেদ আলী তাকে অপারেশনের জন্য শহরের টাউন হল রোডে অবস্থিত ‘সেন্ট্রাল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ অপারেশনের পরামর্শ দেন। আরশেদ আলীর পরামর্শে সাথে সাথে ওই নারীকে সেন্ট্রাল হসপিটালে ভর্তি করেন তার স্বজনরা।
ঐদিন বিকেলে ডা. আরশেদ আলী সেন্ট্রাল হসপিটালে ওই নারীর জরায়ু টিউমারের অপারেশন করেন। কিন্তু অপারেশন শেষে ওই নারীকে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করার কয়েক ঘন্টা অতিবাহিত হলেও জরায়ুতে লাগানো ক্যাথেটার দিয়ে প্রস্রাব আসা বন্ধ থাকে। রাত প্রায় ১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও এক ফোঁটা প্রস্রাবও বের হয়নি। এমনকি ওই নারীর পেট ফোলে উঠে। এক পর্যায় রাত ১টার দিকে পুণরায় ডা. আরশেদ আলীকে খবর দিলে তিনি হাসপাতালে গিয়ে ওই নারীর চিকিৎসা করেন। কিন্তু এরপরও বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় ভোরে তাকে সিলেট প্রেরণ করা হয়।
এদিকে, মূমুর্ষ অবস্থায় ওই নারীকে সিলেট পাঠালেও রোগীর সাথে দেয়া ছাড়পত্রে সীল দেয়নি সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। যার ফলে সিলেটের কোন হাসপাতাল ওই রোগীকে ভর্তি নেয়নি। এতে রোগীর অবস্থা আরও শঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠে। সারাদিন সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও রোগীকে ভর্তি করতে না পারায় গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে আবারও রোগী নিয়ে হবিগঞ্জ ফিরে আসেন স্বজনরা। পরে তারা সেন্ট্রাল হসপিটালে এসে বিক্ষোভ করলে হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এক পর্যায়ে ছাড়পত্রে সীল নিয়ে আবারও তারা রোগীকে নিয়ে সিলেট চলে যান।
এ ব্যাপারে রোগীর ভাগ্নে মহিবুল ইসলাম শাহীন জানান- ‘ডাক্তার আরশেদ আলী ও সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে মৃত্যুর মুখে পড়েছে আমাদের রোগী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্রে সীল না দেয়ার কারণে সিলেটের কোন হাসপাতালই আমাদের রোগীকে ভর্তি নেয়নি।’
তাছাড়াও তিনি আরও বলেন- ‘ডা. আরশেদ আলী অপারেশনের সময় রোগীর জরায়ু কেটে দিয়েছেন। যার ফলে সে এখন মৃত্যু পথযাত্রী।’
এ ব্যাপারে সেন্ট্রাল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার অসীম দেব বলেন- ‘এই রোগীকে রিলিজ দেয়ার সময় আমি ছিলাম না। তবে এখন আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ওই নারীকে সিলেট নিয়ে যাচ্ছি এবং রোগীর সুস্থতার জন্য যা করার প্রয়োজন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা করবে।’
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে নারীর অপারেশন করা সেই চিৎিসক আরশেদ আলীকে বার বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য- ডা. আরশেদ আলীর বিরুদ্ধে এর আগেও ভুল চিকিৎসা, রোগীদের সাথে অসধাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সদর হাসপাতালে আসা রোগীদের অপারেশনের জন্য বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শও তিনি নিজেই দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হবিগঞ্জ জেলার সচেতন মহল ঘটনার সুষ্ট ও সঠিক তদন্ত দাবি করে ডাঃ আরশেদ আলীকে শাস্তির আওত্বায় আনার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্রে কেন সীল দেয়নি সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখার জন্য দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি আক্ষেপ করে বলেছেন, আমরা আজ খেলার পুতুল হয়ে গেছি। সাধারণ জনতা আজ তাদের নিজেদের স্বাধীনতা হারিয়েছে। দিন দিন হবিগঞ্জে ডাক্তারদের দূর্নীতি ও অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোন দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থার চিত্র এখনও চোখে পড়েনি।
তিনি আরও বলেন, হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নিয়ে ঘটে যাওয়া দূর্নীতির ব্যাপারে নজরে আসার মতো কোন ব্যবস্থা এখনও হবিগঞ্জবাসী দেখে নি। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা দিব্যি বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে। প্রকৃত পক্ষে এই সকল অন্যায়কারীদেরকে কারা প্রশ্রয় দেয় তা খুঁজে বের না করলে এইসব অপরাধ থামবে না বলে তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।