২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ৯:৩৩

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

অবৈধ খাদ্যের মজুদ রোধে কঠোর হচ্ছে সরকার

খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন – ২০২০ এর খসড়া করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ১৯৫৬ সালের দ্য ফুড (স্পেশাল কোর্ট) অ্যাক্টও পরিবর্তন করতে যাচ্ছে সরকার।

নতুন আইন অনুযায়ী খাদ্য দ্রব্যের উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণনের ক্ষেত্রে অপরাধের শাস্তি কঠোর হবে।বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নতুন আইন করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই শাস্তি বাড়বে। বিশেষ খাদ্য আদালতের আওতায় এসব অপরাধের বিচার হবে।

এ ব্যাপারে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, “ ১৯৭৯ সালের আইন অনুযায়ী কেউ এ ধরনের অপরাধ করলে তিন মাসের আটকাদেশ দেওয়া যেত। সেভাবে কোনো শাস্তির কথা ছিল না। ১৯৫৬ সালের ফুড স্পেশাল কোর্ট অ্যাক্টও যুগোপযোগী করা হবে। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন আইনে উল্লেখ করা অপরাধগুলোর বিচার হবে স্পেশাল কোর্ট অ্যাক্টের আওতায়। আমরা এখন আইনের খসড়ার বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিচ্ছি। ”

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, যেকোনো প্রকার দানাদার খাদ্যশস্য যেমন-চাল, ধান, গম ইত্যাদি ভোজ্যতেল যেমন-সয়াবিন, পামওয়েল, সরিষা, সানফ্লাওয়ার ওয়েল, অলিভ অয়েল, সরিষার তেল এবং অন্য সব প্রকার ভোজ্যতেল, খাদ্যদদ্রব্য প্রস্তুতের কাঁচামাল, পেঁয়াজ, লবণ, চিনি, ডাল, প্রক্রিয়াজাত যেকোনো খাদ্যদ্রব্য এবং অন্যান্য প্রচলিত আইনে সংজ্ঞায়িত খাদ্য হিসেবে বিবেচিত।

আইনের খসড়ায় খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন এবং এসংশ্লিষ্ট অন্য কাজের ক্ষেত্রে নানা কার্যক্রমকে অপরাধ হিসেবেও গণ্য করা হয়েছে।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত ভোগের উদ্দেশ্য ছাড়া কোনো যানবাহন, গুদামে বা যেকোনো স্থানে সরকার ঘোষিত পরিমাণের বেশি খাদ্যশস্য মজুদ রাখা বা মজুদ করা খাদ্যশস্যের হিসাব যথাযথ কর্তৃপক্ষকে দেখাতে ব্যর্থ বলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। মজুত করা খাদ্যশস্যের উৎস সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করা বা গোপন করাও অপরাধ। মজুদ খাদ্যশস্যের মান বজায় রাখার উদ্দেশ্য প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক যথাযথ পরিচর্যা নিশ্চিত না করায় খাদ্যশস্যের গুণগতমান কমে যায়।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যশস্য সংরক্ষণ ও মজুত রাখাও হবে অপরাধ। অ্যাসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট-১৯৫৬ এবং প্রচলিত অন্যান্য আইনের আওতায় প্রয়োজনীয় লাইসেন্স গ্রহণ না করা, পুরোনো চাল বা অন্য খাদ্যশস্য অবৈধভাবে গুদামে মজুত রেখে অসৎ উদ্দেশ্যে পলিশিং বা অন্যরূপে মিশ্রণ করে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের আওতায় সরকারি গুদামে সরবরাহ করা এবং অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের সময় গুদামে আমদানি করা চাল বা গম সরকারি গুদামে সরবরাহ করা অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।

স্থানান্তরকালে খাদ্যশস্যের মান বজায় রাখার জন্য প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত না করাও অপরাধ। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া খাবারের অনপোযুক্ত খাদ্যশস্য স্থানান্তর করা, জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপায়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া খাদ্যদ্রব্য বিনষ্ট বা নিষ্পত্তি করা, ইনভয়েস বা চালানে উল্লেখ করা কেন্দ্রে খাদ্যশস্য খালাস না করে অন্যভাবে মজুদ স্থানান্তর দেখানো এবং পরিবহনকালে ইনভয়েস বা চালানের সঙ্গে দেওয়া নমুনা মোতাবেক খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের খাদ্যদ্রব্য গুদামে হস্তান্তর করা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

যথাযথ চালান বা ডকুমেন্ট ছাড়া সরকারি-বেসরকারি খাদ্যশস্য একস্থান থেকে অন্যস্থানে পরিবহন এবং পরিবহনকালে খাদ্যশস্য আত্মসাৎ বা বিনষ্ট করলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

কর্মসূচির নামাঙ্কিত বিতরণকৃত সিল ছাড়া সরকারি গুদাম থেকে খাদ্যশস্য ভর্তি বস্তা গ্রহণ, স্থানান্তর, মজুদ, হাতবদল বা পুনরায় বিক্রি করাও অপরাধ। বিতরণ করা সিলযুক্ত খাদ্যদ্রব্য ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয়কালে এ সম্পর্কিত লেনদেনের উপযুক্ত দলিল দেখাতে ব্যর্থ হলে এবং পুরোনো বা বিতরণ করা সিলযুক্ত বস্তা সরকারি গুদামে সরবরাহ করাও অপরাধ বলে গণ্য হবে।

সরকারের কোনো কর্মসূচির আওতায় ব্যবসায়ীরা ডিলার বা প্রকল্প চেয়ারম্যান বা অন্যকোনো ব্যক্তির মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য বিতরণকালে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম বিতরণ করা এবং ভোক্তা বা উপকারভোগীর কার্ড আটক রাখা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

খসড়া আইন অনুযায়ী যদি খাদ্যসামগ্রী বিক্রি বা বিতরণের জন্য বি. এস. টি. আইয়ের নির্ধারিত মানের বাটখারা বা পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার এবং সঠিক ওজনে ভোক্তার নিকট খাদ্যসামগ্রী বিক্রয় বা বিতরণ না করা হয় তা হলে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।

এছাড়া খাদ্যদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কিত লেনদেনের হিসাব ও এসংক্রান্ত প্রমাণ সংরক্ষণ না করা, আইনের অধীন শ্রমিক, কর্মচারী, ঠিকাদার, মিল মালিক, ডিলার বা অন্য কোনোভাবে নিযুক্ত ব্যক্তিদের খাদ্যদ্রব্য মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন বা এ সংক্রান্ত কোনো কর্ম সম্পাদনে বিরত থাকা বা কাউকে কর্তব্য পালনে বিরত থাকতে বাধ্য করা বা প্ররোচিত করা, অসন্তোষ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করাও অপরাধ হবে।

উল্লেখ্য, কী পরিমাণ খাদ্যপণ্য বা খাদ্যসামগ্রী (চাল, ধান, গম, চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল) কতদিন মজুদ করা যাবে তা নির্ধারণ করে-১৯৫৬ সালের কন্ট্রোল অব অ্যাসেনশিয়াল কমোডিটির অ্যাক্টের অধীনে ২০১১ সালের ৪ মে একটি আদেশ জারি করে সরকার। সেখানে চালের বিষয়ে বলা হয়েছে, সরকারের দেওয়া লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী এক টনের বেশি চাল বা খাদ্যশস্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না।

লাইসেন্সধারী আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী ও চালকল মালিক বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন পরিমাণ চাল মজুত রাখতে পারবেন। পাইকারি পর্যায়ে একজন ব্যবসায়ী ৩০০ মেট্রিক টন ধান ও চাল ৩০ দিন পর্যন্ত মজুদ রাখতে পারবেন। ধান ও চালের ক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে ১৫ টন ১৫ দিন মজুদ রাখা যাবে।

আমদানিকারক শতভাগ ধান-চাল ৩০ দিন পর্যন্ত মজুত করতে পারবেন। চালকল মালিক পর্যায়ে অটোমেটিক, মেজর ও হাসকিং চালকলের ক্ষেত্রে পাক্ষিক (১৫ দিনে) ছাঁটাই ক্ষমতার পাঁচগুণ ধান ৩০ দিন পর্যন্ত মজুত করা যাবে। তবে চালের ক্ষেত্রে অটোমেটিক ও মেজর মিলের ক্ষেত্রে অনুমোদিত মজুতের পরিমাণ পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার দ্বিগুণ। এ পরিমাণ চাল ১৫ দিন মজুত রাখা যাবে।

আমদানিকারক বা পাইকারি বিক্রেতা অনুমোদিত মেয়াদ ও মজুত তার নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে বিক্রি করতে না পারলে অনুমোদিত মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন দিনের মধ্যে নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত কর্মকর্তাকে জানাবে।

অনুমোদিত ব্যবসায়ীকে খাদ্যসামগ্রী আমদানি, ক্রয়, মজুত ও বিক্রয়ের হিসাব লাইসেন্স দেওয়া কর্তৃপক্ষের কাছে পাক্ষিক ভিত্তিতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। অপরদিকে সরকারের মনোনীত কর্মকর্তা ও লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষকে প্রাপ্ত তথ্যাদি প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে।