জুয়েল চৌধুরীঃ হবিগঞ্জ শহরবাসীর কাছে দিন দিন অসহনীয় দূর্ভোগের কারণ হয়ে উঠছে গরিবের গণপরিবহন খ্যাত টমটম। বিশেষ করে টমটমের ভাড়া নিয়ে ভোগান্তির মাত্রা দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া বর্তমানে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো সমিতি। যাচ্ছেতাইভাবে ভাড়া নির্ধারণ করে তা জনসাধারণের উপর চাপিয়ে দেয়া যেন অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে তাদের কাছে।
সরকারি ঘোষণার দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ভাড়া নিয়ে প্রায় দুই শতাধিক যাত্রীদের সাথে টমটম চালকদের বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এক কথায় পৌর এলাকার ভেতরে চলাচলকারী মানুষ সবচেয়ে অসহায় হয়ে পড়ছেন টমটম চালকদের কাছে। শহরবাসীর কাছে টমটমের এই অব্যবস্থাপনা এখন দুঃসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। স্বল্প কিংবা বেশি দূরত্বেই হোক কোথাও যাওয়ার জন্য টমটমে উঠতে গেলেই নাগরিকদের এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।
একেতো অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে তার উপর আবার পৌরসভার অনুমোদন ব্যতীত অসংখ্য টমটম চলাচল করায় অফিসে যাওয়া, বিয়ে-দাওয়াত, এমনকি রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া-প্রয়োজনীয় কোনো গন্তব্যে সময় মতো পৌঁছানোর কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ অনুমোদিত টমটমগুলোর এলোপাতাড়ি চলাচলের কারণে শহরের প্রধান সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। প্রধান সড়কে চলাচলে তিলধারণের ঠাই থাকে না। এ অবস্থায় মানুষজনের ভোগান্তির কোনো সীমা-পরিসীমা নেই।
বর্তমানে সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশে চলছে করোনা মহামারি। আর এ সুযোগ নিচ্ছে হবিগঞ্জ শহরে চলাচলত টমটম মালিক ও চালকরা। করোনা মোকাবিলায় দেশব্যাপী গণপরিবহনের ভাড়া আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে সরকার। চালকের পাশের দুই সিট ফাঁকা রাখা, অর্ধেক যাত্রী বহনসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালাতে বলা হয়। এজন্য ভাড়াও বাড়িয়ে দেয়া হয়।
কিন্তু এইসব শর্ত থাকলেও তা মানছে না হবিগঞ্জ শহরে চলাচলরত টমটম চালকরা। তারা মাস্ক পরছে না, গাড়িতেও রাখছে না হ্যান্ড সেনিটাইজারসহ ভাইরাস প্রতিরোধী সরঞ্জাম। অর্ধেক যাত্রী তো দূরের কথা চালকের পাশের দুই সিটেও যাত্রী বহন করা হচ্ছে। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ডাবল ভাড়া।
দুইদিন আগেও শহরে টমটমে চলাচলের ক্ষেত্রে ভাড়া যেখানে ছিল ৫ টাকা সরকারি ঘোষণার অজুহাত দেখিয়ে এখন টমটমে উঠলেই দিতে হচ্ছে ১০/১৫ টাকা। এক্ষেত্রে তাদের কাছে সড়কের দূরত্ব যেনো কোনো ব্যাপারই না।
যাত্রীরা বলছেন, রিকশাও তিন চাকার, টমটমও তিন চাকার। এগুলো চলে চার্জের ব্যাটারীতে, বিদ্যুতের অপচয় হয়। অথচ তারা পাল্লা দিতে চায় বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য বড় পরিবহণের সাথে। দেখা যায়, সরকার যখন ভাড়া বাড়ায় তারাও বাড়ায়, কিন্তু সরকার যখন ভাড়া কমায় তারা কিন্তু কমায় না, তাদের ভাড়াই বহাল রাখে।
আর এ নিয়ে শহরে চলাচলকারী যাত্রীদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। শুধু ক্ষোভই নয়, চালকদের সাথে যাত্রীদের বাকবিতন্ডাসহ হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। যে কোনো সময় এ নিয়ে ঘটতে পারে অপ্রীতিকর ঘটনা।
যাত্রীদের অভিযোগ, কিছুদিন আগেও টমটমের ৫ টাকা ভাড়া নিয়ে শায়েস্তানগর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। যদি আবারও এরকম ঘটনা ঘটে তবে এর দায়ভার কে নেবে?
অবাক করা বিষয় হচ্ছে যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধির কথা চালকদের বললেও তা মানার ব্যাপারে তারা চরম উদাসীন। বিশেষ করে মাস্ক পরতে তাদের বড়ই অনীহা। আবার কেউ পরলেও তা থুতনিতে ঝুলে থাকে।
জানা যায়, করোনার কারণে গত বছরের ১ জুন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালু করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে আগের ভাড়া বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হলেও সকল গণপরিবহণ আগের ভাড়ায় ফিরে যায়, তবে ফিরেনি হবিগঞ্জের সড়কে চলা-অবৈধ টমটম চালক মালিকরা।
আগে শহরের ভেতর উঠানামা যেখানে ৫ টাকা ছিল সেখানে কথিত টমটম সমিতি সড়কের সীমানা ঠিক করে দিয়ে মনগড়া ভাড়া নিতে থাকে। যেমন, আগে শহরের পোদ্দারবাড়ি থেকে চৌধুরী বাজার পর্যন্ত ভাড়া ছিল ১০ টাকা। আর যেকোনো জায়গা থেকে উঠে নেমে গেলে ৫ টাকা। কিন্তু সরকারি ঘোষণার সুযোগ নেয় কথিত টমটম মালিক সমিতি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, করোনা মহামারীর কারণে ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে হবিগঞ্জ শহরে পূর্বের ভাড়া ৫ টাকা হলে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত যাত্রীদের দিতে হবে ১০ টাকা। যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে গতকাল শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকার পরও কিছু কিছু স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। যে সকল চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া ও যাত্রী বহন করেছে তাদেরকে অর্থদন্ড দেয়া হয়েছে। তাদের অভিযান নিয়মিত চলবে।
তবে জেলা প্রশাসক জানান, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে মেয়র আতাউর রহমান সেলিম বলেন, পৌর শহরের ভেতর চলাচলে টমটমের ভাড়া ৫ টাকা। মহামারী করোনার কারণে সাময়িক সময়ের জন্য ডাবল ভাড়া করা হয়েছে। সে অনুযায়ী যাত্রীরা ১০ টাকা ভাড়া দেবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টমটমের অনুমতি দিয়েছে পৌরসভা, জনস্বার্থে ভাড়াও নির্ধারণ করে দেবে পৌরসভা, কোনো সমিতি নয়। আগামী ১৫ এপ্রিল সরকার যদি ভাড়া কমানোর নির্দেশনা দেয় তবে আগের ৫ টাকা ভাড়াই বহাল রাখা হবে। তবে কেউ যদি ডাবল ভাড়া ১০ টাকার স্থলে ১৫ টাকা চায় তাকে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তরের পরামর্শ দেন তিনি।