জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

আকিলপুরে অরূপ রতন || মো. লালা মিয়া

২০১৯ সালের এক সন্ধ্যায় বসে আছি। সুমন বিপ্লব আমাকে একটি কাগজ দিল। খুলে পড়লাম। কাগজে লেখা সাবেক জমিদার শৈলেন্দ্র কুমার চৌধুরীর ছোট ছেলে ড. অরূপ রতন চৌধুরীকে নিয়ে ড. মঞ্জুশ্রী একাডেমি থেকে “আকিলপুরের অরূপ রতন” নামে বই প্রকাশ পেতে যাচ্ছে। পড়ার সময় হঠাৎ চোখের পাতায় দুটি ভালোবাসার চিত্র ভেসে উঠল। রাত ১১ টায় সুমনকে বললাম,

– সুমন আমার একটা লেখা নিও।

১৯৮৫ সালে সম্ভবত হবে। কোন এক কাজে ঢাকা গিয়েছিলাম। মনে মনে ভাবলাম শৈলেন্দ্র বাবুর বাসার ঠিকানা যখন কাছে আছে ঘুরে যাই বাসা তখন আজিমপুর। আমি এক কেজি মিষ্টি হাতে নিয়ে বাসার দরজার কাছে এসে কলিং বেল টিপ দিলাম। দরজা খুলে বললেন,
-কাকে চাই?
-আমি সিলেট থেকে আসছি?
-বস। সিলেট তোমার বাড়ি কোথায়?
-আকিলপুর, আমি সরকুম মড়লের নাতি।

শৈলেন্দ্র বাবু ও তাঁর স্ত্রী মঞ্জুশ্রী চৌধুরী খুব খুশি হলেন। আমাকে অনেক কিছু খাওয়ালেন। এতো ভালোবাসা যা আজও ভুলতে পারিনি কখনো ভুলতে পারবো না। তখন ছিল বিকেল বেলা। বিদায় নেওয়ার সময় তারা আমার হাতে ৫০০ টাকা দিয়ে বললেন কিছু খেয়ে নিও। আমি টাকাটা পকেটে রেখে বিদায় নিয়ে চলে এলাম।

২০১৫ সাল ৩০ বছর পরে আরেকটি ঘটনা। যে কথা বলতে ভুলতে পারব না কখনো। আমার শরীর খুব খারাপ ছিল সিলেটে অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে। অসুখ কমেনি। আমার বাড়িতে সুমন থাকে সে বলল,
-শৈলেন্দ্র বাবুর দুই ছেলে বাংলাদেশের বড় ডাক্তার ঢাকা বারডেম হাসপাতালে চাকরি করেন কিন্তু তারা বেতন নেন না। ছোট ছেলে ড. অরূপ রতন চৌধুরীর কাছে চলেন। তিনি ভাল চিকিৎসা ও পরামর্শ দিতে পারবেন। আমি সুমনের কথায় রাজি হয়ে গেলাম। সে অরূপ দাদার সাথে মোবাইলে আলাপ করল। তিনি নিয়ে যেতে বললেন। একটি গাড়ি ভাড়া করা হলো। এক রাতে আমরা ৯ জন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সকাল ৬ টায় আমরা বারডেম হাসপাতালে পৌঁছাইলাম। বসার কোন জায়গা নেই সুমন দাদার কাছে মোবাইলে ফোন করলে তিনি পাঁচ তলায় গিয়ে বসার জন্য বললেন। আমরা দাদার রুমের সামনে বসলাম। এক সময় দাদা এলেন ভিতরে গিয়ে আমাদের ভিতরে যেতে বললেন। ভিতরে যেতেই দাদা বললেন,
-আপনারা বসেন। রিপোর্ট দেখান আগে আগে চিকিৎসা তারপর কথা বলবো।

দাদার হাতে রিপোর্ট দিতেই তিনি মনোযোগ সহকারে দেখলেন। কি যেন মনে মনে ভাবলেন ও বললেন। সিলেটে বারডেম হাসপাতাল আছে। সেখানে ভাল ডাক্তার আছে। ইচ্ছা করলে সেখানে দেখাতে পারেন। ঢাকায় আসা কত কষ্ট। আপনারা নিচে এক ডাক্তারের কাছে যান ফোন করে বলে দিচ্ছি। আমরা নিচে ডাক্তারের কাছে যেতে খুব গুরুত্ব দিয়ে রিপোর্ট দেখে আমাকে কিছু পরামর্শ দিলেন। আমরা আবার দাদার রুমে এলাম তিনি প্রাণ খুলে আলাপ করলেন আমাদের সবাইকে খাওয়ালেন। এত মহান মানুষ আমি কখনো দেখিনি। তিনি আমাদের মাটি ও মানুষকে কত ভালোবাসেন তা বলার মত না। দাদাকে আকিলপুরে আনার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। তিনি সময়ের অভাবে আসতে পারছেন না। আর সুমন বিপ্লব আমার বাড়িতে ২৫ বছর ধরে থাকে। তার একমাত্র স্বপ্ন ড. মঞ্জুশ্রী একাডেমি করা। কিভাবে একাডেমি সুন্দর করা যেতে পারে। সুমন এক ধনী পরিবারের ছেলে। বাড়িতে টাকা পয়সার অভাব নেই। তার দাদা ছিলেন জমিদার। কোটি টাকার সম্পদ পড়ে আছে। আমার জানা নেই কেন সে পড়ে আছে। বর্তমানে তার সম্পদ তার দুই ভাই খাচ্ছে।

মো. লালা মিয়া
আকিলপুর, পরগনা বাজার, বিশ্বনাথ, সিলেট।