হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জে হাওড়ে কিশোর ইজিবাইক(মিশুক)গাড়ি চালক আরজাহান হত্যাকান্ডের ঘটনায় স্হানীয় শহীদ মিনারে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এছাড়াও এমন ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঢাকা থেকে আওয়ামীলীগের সদ্য বিজয়ী নবাগত সংসদীয় এমপি হবিগঞ্জ ০২(বানিয়াচং আজমিরীগঞ্জ) আসনের এডভোকেট ময়েজউদ্দিন শরীফ রুয়েল।
তিনি খবর শুনার সাথে সাথেই ঢাকা থেকে পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করার তাগিদ দিয়ে আসছিলেন।
অপরদিকে ১১জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বানিয়াচংয়ের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
৭ বছরের শিশু ছাত্রী বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে জানতে ১২ জানুয়ারি(শুক্রবার)বিকাল ৩টা ০৯মিনিটে মুঠোফোন প্রতিবেদক এর সাথে যোগাযোগ করে জানতে চান, বানিয়াচং উপজেলা সদরের হেদায়েত উল্বা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭বছরের শিশু ছাত্রী নিখোঁজ এর বর্তমান আপডেট কি,তখন শিশু বাচ্চাটিকে পরিবারের সদস্যগন রাতেই খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলে একটু সময়ের জন্য উনাকে শান্ত মনে হয়েছিলো।
তারপর ঐ তিনি আবার ২নং উত্তর পশ্চিম ইউনিয়নের চানপাড়া মহল্লার ইজিবাইক কিশোর চালক আরজাহান হত্যার ঘটনার বিষয়েও আলাপ আলোচনা করে জানান,তিনি নির্বাচনের পর ঢাকায় শপথ অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রীসভার পরিচিতি অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য অবস্থান করছেন।
কিন্তু তার নির্বাচনী উপজেলায় এমন হত্যাকান্ডের ঘটনা শুনার পর পরই, হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা ও আজমিরীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি)ডালিম আহমেদসহ সবার সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে চলছেন।
এমনকি এই ঘটনার জন্য তারা যেন দ্রুততার সহিত তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনায় জড়িত হত্যাকারীদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসেন।
এব্যাপারে দফায় দফায় খুঁজ খবর নিচ্ছেন এবং তাগিদও দিয়ে যাচ্ছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানাযায়।
উল্যখ্যে,১১ জানুয়ারি আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ৫নং শিবপাশা ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর হাওড় থেকে বানিয়াচং উপজেলা সদরের ২নং উত্তর পশ্চিম ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের চান পাড়া মহল্লার বশির মিয়ার পুত্র আরজাহান(১৬) নামের এক কিশোর ইজিবাইক(মিশুক)গাড়ির চালককে হত্যা করে তার গাড়িটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
আজমিরীগঞ্জ থানা পুলিশ উদ্ধার করে এঘটনার তদন্তে বিভিন্ন স্হানে অভিযান পরিচালনা করে রাত ৮টার দিকে বানিয়াচং উপজেলা সদরের ৪নং দক্ষিণ পশ্চিম ইউনিয়ন এর কুন্ডরপার এলাকার পরিত্যক্ত একটি স্হান থেকে ব্যাটারি ছাড়া গাড়ির বডিটি উদ্ধার করে থানা পুলিশ।
১২জানুয়ারি (শুক্রবার) আরজাহানের লাশ
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করা হয়।
সেখানে ময়না তদন্তের কাজ সম্পন্ন করে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেন আজমিরীগঞ্জ থানা পুলিশ।
এদিকে পরিবারের লোকজন বাড়িতে লাশটি নিয়ে আসলে মা,বাবা ও পরিবারের লোকজনের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
এমনকি এলাকাবাসীও শোকে কাতর হয়ে পড়েন।
মাগরিবের আজানের পর চান পাড়া করিমউল্বা জামে মসজিদ মাঠে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ছেলের দাফন কাজ সম্পন্ন করে আজমিরীগঞ্জ থানায় যাওয়ার জন্য বলেন অফিসার ইনচার্জ।
তাই বশির আহমেদ তার এক ভাতিজাকে সঙ্গে নিয়ে আজমিরীগঞ্জ থানায় পৌঁছে ১১জানুয়ারি তার ছেলে আরজানকে হত্যার ঘটনায় ১২ জানুয়ারি ময়না তদন্ত শেষে রাতে পুত্রের লাশ দাফন করেই আজমিরীগঞ্জ থানায় উপস্থিত হয়ে একটি হত্যা মামলার লিখিত অভিযোগ করেন।
বশির আহমেদ এর অভিযোগটি রাত সাড়ে ১২টার দিকে ১৩ জানুয়ারি(শনিবার) থানায় রেকর্ড করা হয়।
এ ব্যাপারে আজমিরীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) ডালিম আহমেদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,ঘটনার পর থেকে তারা বিভিন্ন স্হান থেকে ক্লু উদঘাটন করে যাচ্ছেন।
এছাড়াও কিছু কিছু উপজেলা থেকে সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করে এই হত্যাকান্ডের ঘটনার জড়িতদের বের করার লক্ষ্য নিয়ে ক্লু উদঘাটনে বানিয়াচং উপজেলার ভিতরে তিনি নিজে অভিযান পরিচালনা করছিলেন বলে রাতের আলাপকালে নিশ্চিত করেন।
এব্যাপারে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বানিয়াচং আজমিরীগঞ্জ (সার্কেল)পলাশ রঞ্জন দে জানান, হত্যাকান্ডের পর থেকে মূল হত্যাকারীদের বের করতে আজমিরীগঞ্জ থানা পুলিশকে নিয়ে তিনি নিজে কাজ করে যাচ্ছেন,যদিও তিনি আশাবাদী হত্যাকারী অপরাধীদেরকে দ্রুততার সহিত গ্রেফতার আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবেন।
তবে বিভিন্ন স্হান হতে সিসি ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহের উপর করতে হচ্ছে চুল-ছেঁড়া বিশ্লেষণ।
তবে আশা রাখছেন তাদের কাজের সফলতা আসবেই অভিযানের মাধ্যমে।
চালক আরজাহান
হত্যার ২দিন হলেও কোন অপরাধী গ্রেফতার না হওয়ায় বানিয়াচংয়ের ১নং উত্তর পূর্ব ইউনিয়ন ও ২নং উত্তর পশ্চিম ইউনিয়নের বড়বাজার ও বাবুর বাজার এলাকার টমটম মিশুক গাড়ি সমিতির নেতৃবৃন্দের উদ্যেগে ১৩ জানুয়ারি(শনিবার) স্হানীয় শহীদ মিনারের সামনে বেলা ৩টায় এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বড়বাজার ও বাবুর বাজার গাড়ি সমিতির সভাপতি জুয়েল রহমান এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মিয়ার সঞ্চালনায় শত,শত লোকজনের উপস্থিতিতে স্হানীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে একাত্মতা প্রকাশ করেন ৪নং দক্ষিণ পশ্চিম ইউনিয়নের টমটম মিশুক গাড়ি সমিতির সভাপতি সেতু মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান মিয়াসহ সমিতির অন্যান্য সদস্যগন।
এছাড়াও নিহত আরজাহান এর মেঝো ভাই শাহজাহান এনং এলাকার লোকজন সহকারে বাজারে আসা লোকজন উপস্থিত হয়ে মানব বন্ধনে অংশ নেওয়ার খবর পাওয়া যায়।
অনুষ্টিত মানব বন্ধনে অংশ নেওয়া নেতৃবৃন্দ ইজিবাইক(মিশুক)গাড়ি চালক কিশোর আরজাহান(১৬)কে আজমিরীগঞ্জের শিব পাশা আব্দুল্লাহ্ পুর হাওড়ে নিয়ে হত্যা করে গাড়িটি ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উপস্থিত জনতার সামনে তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করে বলেন, পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর
রাত ৮টার দিকে অভিযান চালিয়ে বানিয়াচং উপজেলা সদরের ৪নং দক্ষিণ পশ্চিম ইউনিয়নের কুন্ডরপার এলাকার একটি পরিত্যক্ত জায়গা থেকে ব্যাটারি বিহীন শুধু বডিটি উদ্ধার করতে সক্ষম হন পুলিশ।
কিন্তু আজ ২দিনেও কোন হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে দেখা যায়নি।
আগামী ২৪ ঘন্টার ভিতরে আরজাহান হত্যাকারীদের গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দিয়ে ও বিচারের দাবি জানানো হয়।
আর এমনটা সম্ভব না হলে সামনে বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়।
হবিগঞ্জ থেকে নিহত আরজাহানকে বাড়িতে নিয়ে আসার খবর পেয়ে ২নং উত্তর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার উজ্জামান খান ধন মিয়া ছুটে যান বশির মিয়ার বাড়িতে তার পুত্র এক নজর দেখার জন্য।
সেই সাথে পরিবারের সবার প্রতি সমবেদনা ঞ্জাপন করে পুলিশ প্রশাসনকে দ্রুত হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার আহবান জানান।
এছাড়াও ২নং উত্তর পূর্ব ইউনিয়নের সকল ইউপি সদস্য/সদস্যাগন এর পক্ষে এমন জঘন্যতম হত্যাকান্ডের নিন্দা প্রকাশের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের প্রতি জোরালো দাবি জানিয়েছেন ইউপি সদস্য পরিষদ।
আরজাহান হত্যাকারীদেরকে যেন দ্রুত গ্রেফতার করা হয়।
এমনটাই সকলের পক্ষে জানিয়েছেন ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য(মেম্বার)জিতু মিয়া।
উল্লেখ্যে,গত১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার আজমিরীগঞ্জ থানা পুলিশ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ৫নং শিবপাশা ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর হাওড়ের ফুনাতলা আরজাহান এর লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।
থানা সুত্রে জানা যায়,এই হাওরের গরু দেখাশোনা করার সময় এক শিশু রাখাল আরজাহান মিয়া(১৬)লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন ও চেয়ারম্যানকে অবগত করেন।
তারপর আমরা সংবাদটি পাওয়ার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরী করে লাশটি উদ্ধার করি এবং পোস্ট মর্টেমের জন্য হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করা হয়।