শেখ শাহাউর রহমান বেলাল ও মিলাদ মাহমুদ: দরিদ্র ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন সচ্ছল পরিবারের লোকজন। হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের কাকাইলছেও ইউনিয়নে অর্ধেকের মত ঘর পেয়েছেন যাদের বসতভিটা ও ঘর রয়েছে। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজের পছন্দমত লোকদেরকে ঘরগুলো বরাদ্দ দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বঞ্চিত পরিবারের লোকজন।
সরকারি আইন অনুযায়ী বসতবাড়ি এবং জমি নেই এমন ভূমিহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে। এলাকায় সে রকম পরিবার না পাওয়া গেলে ১০ শতকের কম জমি আছে এমন পরিবারকে ঘর বরাদ্দ দিতে হবে। কিন্তু আজমিরীগঞ্জের কাকাইলছেও ইউনিয়নে ভূমিহীন পরিবার থাকা সত্বেও অর্ধেকের মত ঘর পেয়েছেন সচ্ছল লোকজন।
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় গুচ্ছ গ্রাম হিসেবে ওই ইউনিয়নে দেয়া হয় ৫৯ টি ঘর। আর কিছুদিন পরেই বুঝিয়ে দেয়া হবে ঘরের চাবি। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পাওয়া ৫৯ টি পরিবারের মধ্যে ২৯ টি পরিবারই সচ্ছল। তাদের জমি, বসতভিটা ও ঘর রয়েছে। আবার অনেকের আছে অর্ধ পাকা ঘরও।
এদের মধ্যে ওই গ্রামের রতন তালুকদার। তার রয়েছে ২৬ শতক জমির উপর একটি ঘর। এমন ব্যাক্তি রয়েছে বেশ কয়েকজন। সচ্ছল হওয়ার পরও কীভাবে ঘর বরাদ্দ পেলেন জানতে চাইলে তাঁরা চেয়ারম্যান নুরুল হক ভূইয়ার দয়াতেই পেয়েছেন বলে জানান অনেকে।
ওই গ্রামের ভূমিহীন বিউটি বেগম বলেন, ‘আমরার ঘর, জমিজমা কিছুই নাই। ১২ বছর ধরে মাইনসের বাড়িত থাকি। চেয়ারম্যানের কাছে ছবি কগজ জমা দিয়াও ঘর পাইনি।
ভূমিহীন জাকির হোসেন বলেন, আমরা অন্যেও বাড়িতে থাকি। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরের খবর পেয়ে ভেবেছিলাম এবার বুঝি মাথাগুজার ঠাই হবে। চেয়ারম্যান আমাদের কাছ থেকে ছবি কাগজ নিলেও পরে দেখি যাদের বসতভিটা ও জমি-ঘর আছে তারাই এ ঘর পেয়েছে।
বীরমুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দীন জানান, আমাদের চেয়ারম্যান কারো সাথে যোগাযোগ না করেই নিজের ইচ্ছেমত নাম দিয়ে সচ্ছল লোকদেরকে ঘর পাইয়ে দিয়েছেন।
খালিকুজ্জামান নামে এক সচেতন নাগরিক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর যারা এখানে পাচ্ছে এর বেশিরভা লোকই সচ্ছল। কি করে কেমন করে তারা এ ঘর পেয়েছে অবশ্যই তা তদন্ত করে দুষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হউক।
এদিকে ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার আজিজুর রহমান সওদাগর এই প্রতিবেদককে জানান, আমার ওয়ার্ডে অসংখ্য ভূমিহীন পরিবার থাকা সত্বেও তাদেরকে না দিয়ে সচ্ছল লোককে তিনি ঘর দিয়েছেন। তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেন, চেয়ারম্যান নিজে জেনে শুনে দরিদ্রদের ঘর অনিয়ম করেছেন।
এছাড়া অনেকেই বলেন, চেয়ারম্যান নুরুল হক ভূইয়া উৎকোচ নিয়ে সচ্ছল লোকদেরকে ঘর দিয়েছেন। তাদের দাবী প্রকৃত ভূমীহীনরা হয়েছেন বঞ্চিত।
চেয়ারম্যান নুরুল হক ভূইয়ার ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মিছবাহ উদ্দীন ভূইয়া বলেন, দু’একটি ঘর এমন হতে পারে। কারণ উপজেলা থেকে অনেক সময় এমন চাপ দেয়া হয় যে, এই মুহুর্তে নাম দিতে হবে। তখন যাচাই বাছাই করার সময় থাকে না। তবে অনিয়ম হয়েছে এটা সত্য নয়।
কাকাইলছেও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল হক ভুইয়া ঘর বরাদ্দ দেওয়ার অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে নির্বাহী কর্মকর্তা ও পিআইওকে দোষারূপ করে বলেন, ঘর বরাদ্দের লিস্ট পিআইওকে নিয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা করেছেন। তিনি আমাদেরকে সাথেও নেননি। পিআইও ও নির্বাহী কর্মকর্তা মিলে ঘর বরাদ্দের লিস্ট করেছেন। উনারা লিস্ট তৈরী করে বলেছেন স্বাক্ষর দেয়ার জন্য। তাই আমরা শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি।
এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ সদস্য এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান বলেন, কাকাইলছেও ইউনিয়নে ৫৯টি ঘর তৈরী হচ্ছে। এরমধ্যে ১০টি ঘরের উদ্ভোধন আমি নিজে করে এসেছি। তিনি বলেন, ২শতাংশ জমিসহ পাকা ঘর দেয়া হবে। তবে যদি কারো জমি আছে, ঘর আছে এমন ব্যাক্তি ঘর পাবে না। তবে ভুল বশত যদি কারো নাম তালিকায় আসে তা অবশ্যই বাতিল করা হবে এবং যথযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মতিউর রহমান খান তালিকা তৈরীর বিষয়ে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করেই তালিকা করা হয়। এছাড়া একটা কমিটিও গঠন করা হয়। প্রত্যেকের মতামতের উপর ভূমিহীনদের তালিকা হয়।
সচ্ছল হওয়ার পরও কীভাবে ঘর বরাদ্দ পেলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন বেশ কয়েকটা অভিযোগ আমি পেয়েছি এবং আমি ইতিমধ্যে দেখেছি কয়েকজন সচ্ছল ব্যক্তিও রয়েছে। আগামী মিটিং এ এটি নিয়ে আলোচনা করে যারা সচ্ছল তাদেরকে আমরা বাদ দিবো।