হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে কয়েকদিন ধরে জেঁকে বসেছে শীত। গত কয়েকদিন ধরে শীতের আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
তীব্র শীতে স্বাভাবিক জীবন বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া শ্রমিক। শীতের কারণে মানুষ ঘর থেকে বাইরে কম আসায় নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমতে শুরু করেছে।
গত মঙ্গলবার থেকে এখন পর্যস্ত সূর্যের তেমন একটা দেখা মিলেনি। তবে সূর্যাস্তের পর শীতের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। তবে সকাল থেকে আজমিরীগঞ্জ পৌরসভাধীন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শীত বাড়ায় বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় পুরনো কাপড়ের দোকানে বেশ ভিড় বেড়েছে।
এছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নৌ-টার্মিনাল, লঞ্চঘাট ও চরবাজারের বেশ কিছু এলাকায় পুরনো কাপড়, কাগজ ও গাছের ডালপালা পুড়িয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় নিম্নআয়ের লোকেদের।
এলাকার নিম্নআয়ের ক্ষুদ্র দোকানিদের দেখা যায়, প্রচন্ড শীত ও কূয়াসা উপেক্ষা করে ফেরি করে বা ফুটপাতে পশরা সাজিয়ে বসে থাকতে ।
বাদাম বিক্রেতা নৃপেশ কুরি বলেন, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার বেচাকেনা খারাপ যাচ্ছে। অন্য সময় আমার বিক্রি হতো পাঁচ’শ থেকে আট’শ টাকা। শীতের রাতে বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে পাঁচ’শ টাকা।
লঞ্চঘাট রোডের পিঠা বিক্রেতা জোসনা বেগম বলেন, শীতকাল আসায় আমার পিঠার দোকানে বেচাকেনা বেড়েছে। কিন্তু শীত হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় পিঠা বিক্রি কমতে শুরু করেছে। শীতের তীব্রতা বেশি থাকায় মানুষ ঘর থেকে বাইরে কম আসছে। এ কারণেই পিঠা বিক্রি কম হচ্ছে। দুইদিন আগেও পিঠা বিক্রি করেছি ২’শ থেকে ৫’শ টাকার। শীত বাড়ার কারণে বিক্রি আরও কমে গেছে।
শীতের সকালে কাজ করছিলেন রাজমিস্ত্রি আবুল হোসেন। চরবাজারের একটি দোকানে রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। কথা হলে তিনি বলেন, আমরা দিন আনি দিন খাই। আমাদের শীত, বৃষ্টি, রোদ বলে কিছু নেই। যখন কাজ থাকে তখনই কাজ করতে হয়। অনেক সময় টানা চার-পাঁচ দিন মিস্ত্রির কাজ পাই না, তখন বসে থাকতে হয়। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজমিস্ত্রির কাজ করে ৭০০ টাকা মজুরি পাই। এ টাকা দিয়ে আমি নিজে চলি ও বউ-বাচ্চাদের ভরণপোষণ করি। যখন কাজ পাই না তখন জমানো টাকা ও মানুষের কাছ থেকে ধার-দেনা করে চলতে হয়।
সিএনজি স্ট্যান্ডে ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা প্রদীপ বলেন, শীত বেড়ে যাওয়ার আমার চায়ের বেচাকেনা কমতে শুরু করেছে। গত দুইদিন ধরে আমার বেচাকেনা খুবই কমে গেছে। মানুষজন ঘর থেকে বাইরে আসতে চাচ্ছেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২ টায় আজমিরীগঞ্জের তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাত বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা আরও কমতে শুরু করবে। সকাল ৭ টায় তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নামার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া সূত্র জানায়। প্রচন্ড শীতে বিশেষকরে শিশু ও বয়স্কদের শ্বাসকষ্ট সহ নানা ধরণের শীতজনিত রোগের তীব্রতা বেড়ে যায়। তবে চলতি শীত মৌসুমে ছিন্নমূল মানুষের শীত নিবারণে ব্যাক্তিগত বা সরকারি পর্যায়ে গরম কাপড় প্রয়োজনের তুলনায় কম বিতরণের খবর পাওয়া গেছে।