আজ ২৭ জুলাই বুধবার সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংগঠন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এর ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
১৯৫৭ সনের ২৫ ও ২৬ জুলাই দুই দিনব্যাপী পুরানো ঢাকার সদরঘাট এর রূপ মহল সিনেমা হলে তৎকালীন পাকিস্তানের সর্ব বৃহত্তম গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ২৭ জুলাই জন্ম নেয় সারা পাকিস্তানভিত্তিক সর্বপ্রথম সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, গণতান্ত্রিক ও অসম্প্রদায়িক দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ।
ন্যাপ গঠনে নেতৃবৃন্দের মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, পীর হাবিবুর রহমান, মহিউদ্দিন আহমেদ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ, সৈয়দ আলতাফ হোসেন, মোহাম্মদ তোয়াহা, পূর্ণেন্দু দস্তিদার, দেওয়ান মাহবুব আলী, সেলিনা বানু, সৈয়দ আশরাফ হোসেন, আহমেদুল কবির, অধ্যাপক আহসাব উদ্দিন প্রমুখ। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ছিলেন সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গফফার খান, ইফতেখার উদ্দিন, জিএম সৈয়দ, মাহমুদুল হক ওসমানী, গাউস বক্স বেজেনজো ও মিয়া ইফতেখার উদ্দিন প্রমুখ।
১৯৬৭ সালে রাজনৈতিক মতবিরোধের ফলে ন্যাপ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। তখন সারা পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি হন খান আবদুল ওয়ালী খান ও পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি হন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ।
মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সকল অসাম্প্রদায়িক গনতান্ত্রিক আন্দোলন ও বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে ন্যাপের নিরবিচ্ছিন্ন অংশগ্রহন ও নেতৃত্বদানে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পরিক্রমায় অগণিত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন, জেল-জুলুম, অত্যাচার সহ্য করেছেন। ন্যাপ-ই একমাত্র দল হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা আন্দোলনে সমর্থন প্রকাশ্যে করেছিল। ১৯৬৯ সালে স্বৈরশাসক আইয়ুব ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি (DAC) গঠনে ন্যাপ প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকহানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলে পরে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করতে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে ন্যাপ এবং ন্যাপের প্রয়াত সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের অবদান ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্ঠামন্ডলীর অন্যতম সদস্য মনোনীত হন। তিনি ন্যাপ-কমিউনিষ্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনী গঠন করেন এবং ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের সমর্থন আদায়ে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদান করেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হবার পর ন্যাপের নেতাকর্মীরা সারাদেশে খুনীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, প্রচারপত্র বিলি করেন। ফলে অনেক নেতাকর্মী কারাবরণ করেন, অনেক নেতাকর্মী আত্মগোপন করতে বাধ্য হন।
১৯৮২ সালে উপমহাদেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল হিসেবে ন্যাপ নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে ‘সামাজিক বিজ্ঞান পরিষদ’ প্রতিষ্ঠা করে এবং ন্যাপ সহ সমমনা প্রগতিশীল দলের নেতাকর্মীদের জন্য সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ চালু করে।
ন্যাপের ৬৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকাস্থ মনি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্টের শহীদ মুনীর আজাদ কক্ষে আজ ২৭ জুলাই ২০২২ বুধবার বিকাল চারটায় এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী প্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন ন্যাপের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশের আপামর জনগণকে রক্তিম শুভেচ্ছা ও অভিবাদন জানাচ্ছি।