২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ১০:৫৭

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

আমাদের রত্নগর্ভা ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরী – জামাল আহমেদ

ছড়াকার, কবি, সাহিত্যিক সুমন বিপ্লব। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুশ্রী একাডেমি। জন্ম সুদূর খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার শাহপুর গ্রামে। যার স্বপ্ন ছিল সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সাহিত্য জগতে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া। ছোটকাল থেকেই লেখালেখির অভ্যাস ছিল। কিন্তু পরিবারের বিভিন্ন আপত্তিকর কারণে নিজেকে সুশিক্ষায় গড়ে তুলতে পারেনি। তবুও তার আশার বাঁধ ভাঙ্গেনি। ১৯৮৩ সালে তিনি নিজের আত্মবিশ্বাসকে হাতিয়ার করে অথৈ সাগরে পারি জমান। অবশেষে বিভিন্ন জল্পনা কল্পনার অবসান কাটিয়ে ১৯৯৪ সালে তীর ভিড়ান সিলেট জেলার বিশ্বনাথ থানার আকিলপুর গ্রামে। যার চিন্তা ছিল উন্নয়নমূলক, শিক্ষামূলক, সমাজমূলক। তিনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নিজেকে বিলিয়ে দিতে নারাজ। তিনি এখন আমাদের বাড়িতে থাকেন। একদিন গল্পে গল্পে সুমন বিপ্লব বলে উঠেন আচ্ছা! জামাল তুমি কি কখনও ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরীর নাম শুনেছ? আমি বললাম আমি যখন ১৯৯৭ সালে সপ্তম শ্রেণিতে পড়তাম তখন ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরীর লেখা রূপসী বাংলাদেশ নামে একটি গদ্য পড়েছিলাম।

– তোমার কাছে এই গদ্যটি কেমন লেগেছিল?
– যদিও আমার পাঠ্য বইয়ের শুরুতেই গদ্যটি ছিল। এরপরও ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরী যেভাবে বাংলার রূপ এঁকেছেন তা অতুলনীয়। এমনভাবে ছয় ঋতুর বর্ণনা দিয়েছেন তা যে কোন পাঠকদের বুঝতে কষ্ট হবে না।
– আমি যদি বলি ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরী আকিলপুর গ্রামের বধু।
– এটা কি করে সম্ভব? এত বড় মাপের একজন শিক্ষাবিদ, কবি, সাহিত্যিক এ গ্রামের বধু এটা আমি বিশ্বাস করি না। তবে এটা আমি জানি ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরীর বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার কাদিপুর গ্রামে। সুমন বিপ্লব আমার এ অসম্ভবকে সম্ভব করাতে , অভিশ্বাসকে বিশ্বাস করাতে ড. মঞ্জুশ্রীর কিছু জীবনবৃত্তান্ত কাগজপত্র আমাকে দিলেন। এক এক করে সব কাগজগুলো পড়লাম। এরপরও যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারলাম না। তাই এই অবিশ্বাসের অবসান মেটাতে আব্বুর শরণাপন্ন হলাম। আমার আব্বু জনাব লালা মিয়া সাবেক চেয়ারম্যান। আব্বুকে গিয়ে প্রশ্ন করলাম- আব্বু আপনি কি ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরীকে চিনেন?

-আব্বু মৃদু হাসি দিয়ে আমাকে বললেন- এমন একজন মহান ব্যক্তিকে কে না চেনে। তিনি আমাদেরই গ্রামের জমিদার বংশের বধু। ১৯৪৫ সালের আমাদের আকিলপুর গ্রামের স্বনামধন্য প্রভাবশালী ও অভিজাত জমিদার প্রয়াত দেওয়ান শরৎচ্চন্দ্র চৌধুরীর পুত্র শ্রী শৈলেন্দ্র কুমার চৌধুরীর সঙ্গে শিক্ষাবিদ ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরীর যৌতুকবিহীন বিয়ে হয়। ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরীর পিতা প্রয়াত ক্ষিরোধ বিহারী সোম প্রথম চাকুরী সিলেট গভর্মেন্ট হাইস্কুলে। পরে আসামে। লো-অপারেটিং সোসাইটির এসিস্ট্যান্ট রেজিস্টার। তিনি ছিলেন সাহিত্যিক ও সংগীত বিষয়ে পারদর্শী।

ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরী সাংসারিক জীবনে তিন সন্তানের জননী। জ্যেষ্ঠ পুত্র ড. শুভাগত চৌধুরী, এমবিবিএস, এম ফিল, এফ সি পি এস। কনিষ্ঠ পুত্র ড. অরূপ রতন চৌধুরী। তিনি দাঁতের যত্ন আর ধুমপান নয় ও তামাক পাতা জর্দ্দা গ্রন্থের লেখক। এ ছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও সংগীত শিল্পী। ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরীর একমাত্র কন্যা ড. মধুশ্রী ভদ্র। এত সব জেনেও আরো জানার লোভ বেড়ে গেল। ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরীর রেখে যাওয়া উত্তরাধিকার আমাদের গর্ব আমাদের অহংকার। ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরীর অক্লান্ত পরিশ্রমের সুনাম শুধু একা আমাদের আকিলপুরবাসীর জন্য নয়। ৬৮ হাজার গ্রাম বাংলার মানুষের গর্ব ও অহংকার। ডা. শুভাগত চৌধুরী, ড. অরূপ রতন চৌধুরী ও ড. মধুশ্রী ভদ্র গর্বিত এমন এক মহীয়সী নারীর গর্ভে জন্মধারণ করে। আর আমরা গর্বিত এমন এক রত্নগর্ভার শ্বশুরের গাঁয়ে, স্বামীর গাঁয়ে জন্ম নিয়ে।

লেখকঃ জামাল আহমেদ, আকিলপুর, পরগনাবাজার, বিশ্বনাথ, সিলেট।