জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

আর কতকাল এই নৈরাজ্য – অমিতা বর্দ্ধন

কবিংশ শতাব্দিতে দাঁড়িয়ে উন্নয়নের মডেল হিসাবে যে দেশ দেখার আশা ছিল তা কি আমরা দেখতে পেরেছি? কিছু মানবরূপী দানব দেশকে করে তুলেছে উত্তেজিত, কায়েম করেছে ত্রাসের রাজত্ব। কিছুদিন আগে একের পর এক দেশের বিভিন্ন স্থানে স্মরণকালে নিকৃষ্টতম লোহমর্ষক ঘটনাবলি দেশের সাধারণ মানুষকে আতংকিত করে তুলেছে। কিছুদিন আগে ঝিনাইদহে এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে বখাটেরা। এর রেশ কাটতে না কাটতেই আরেক অষ্টম শ্রেণীর মাদ্রাসা ছাত্রীকে কয়টি বখাটে ধর্ষণ করে অচেতন অবস্থায় ড্রেনে ফেলে রেখে যায়। ধর্ষণ মহামারিতে রূপ নিয়েছে একমাত্র বিচারহীনতার কারণে। পৃথিবীর সব দেশেই ধর্ষণের শাস্তি খুব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় এবং তা খুব কঠিন। ভারতে যাবজ্জীবন আবার ক্ষেত্র বিশেষে মৃত্যুদন্ডও দেয়া হয়। ফ্রান্সেও একই পদ্ধতি। চায়নাতে মৃত্যু দন্ডই একমাত্র শাস্তি। একজন অপরাধীর দ্রুত শাস্তি দেখে অন্য অপরাধীরা সাবধান হবে। আমরা কবে সেই দিনে পৌঁছাব। যেখানে নুসরাত, নিতু এবং আরো হতভাগা মেয়েদের বিদেহী আত্মারা সুবিচারের আশায় গুমরে কাঁদবে না? সে অপেক্ষা কি বিফলে যাবে? তনুরা আর কতদিন কাঁদবে?

 

আজকাল পত্রিকার পাতা ও ইন্টারনেটে যে সমস্ত ঘটনা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে তা কোন সভ্য দেশের জন্য শুভকর হতে পারে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোমলমতি শিশুরা দানবদের লালসার শিকার। ৩ বৎসরের শিশু থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধারাও রেহাই পাচ্ছে না দানবদের কুৎসিত দৃষ্টি থেকে। কিছু বিকৃত মনমানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের দ্বারাই এই নোংরা পরিস্থিতি ঘটছে আর এর শিকার হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েরা। মোকাবেলা করতে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি এলার্ম আসছে। কিছুদিন আগে চলন্ত পাবলিক বাসেও এমনভাবে নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটেছে। মেয়েরা আজ নিরাপদ কোথাও নেই। আমি আমেরিকাতে দেখেছি, সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত মেয়েরা কি স্বাধীনভাবে চলছে। বাসে বিভিন্ন পোশাক (খোলামেলা) পরে। কেউ কারো দিকে তাকানোর প্রয়োজন মনে করে না। আইনের শাসন আছে ওদের দেশে। আমাদেরও আইন আছে কার্যকারিতা নেই। আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বুঝে না তাদের দায়িত্ব কি? ফলে অপরাধ দিন দিন বেড়েই চলছে নানা প্রক্রিয়ায়। এইবার অপরাধের সাথে এমন সব অপরাধী জড়িত যাদের কর্তব্য হলো অপরাধ দমন করা। সরিষায় যদি ভূত থাকে, ভূত তাড়াবে কে? তাই সক্রিয়ভাবে কেউ এগিয়ে আসছে না। থলের বেড়াল যে বেড়িয়ে আসবে। তাই ধুম্রজাল সৃষ্টি করে ধামাচাপা দেওয়ার পায়তারা। এমন সব কলংকিত অধ্যায় সৃষ্টি হচ্ছে যে স্বামীর সামনে স্ত্রী, ভাইয়ের চোখের সামনে বোন, বাবার সামনে মেয়েকে নির্যাতন করা হচ্ছে। স্ত্রী হারাচ্ছে স্বামীকে, বোন ঝুলছে ফাঁসিতে, মায়ের কোল হচ্ছে খালি। এসব অন্যায় অপরাধ সহ্য করার মতো নয়। মানবতা আজ ভুলুন্ঠিত হচ্ছে, চলছে দানবদের উত্তাল নৃত্য। এর কি শেষ নেই? এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম? বিচারদন্ড আজ নিভৃতে কাঁদে। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ যেন থামছে না। একটি অপরাধের স্লোগান বন্ধ হতে না হতেই আরেকটি এসে নেমে যায়। এভাবে পাহাড়সম অপরাধের বোঝা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। 

 

হিংস্রতা নৃশংসতা এর জাল থেকে যতক্ষণ বেরিয়ে আসা যাবে না ততক্ষণ আমরা বলতে পারবো না ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে’। উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন থেকেই যাবে। মানবিকতা মনুষ্যত্ববোধ ও বিবেক এগুলি হারাতে বসছে। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই না। ছাত্র যুবকদের হাতে কলমের পরিবর্তে অস্ত্রের ঝলকানি নয়। কিছু নরপশুদের অত্যাচারে দেশ আজ ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে। মূল সন্ত্রাসীরা পার পেয়ে পুণরায় লিপ্ত হচ্ছে অন্যায় কাজে।

 

চলছে চাঁদাবাজি, ফুটপাতে গাড়ির স্ট্যান্ড বানিয়ে সাপ্তাহিক বা মাসিক চাঁদা গ্রহণ, অপরাধ শুধু একদিকে নয়, সর্বাঙ্গে ব্যথা ঔষধ দেব কোথায়- এ প্রবাদটি সমাজে ফুটে উঠেছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে পর্যায়ে দাড়িয়েছে তাতে সহজেই বলা যায় যে, পরিস্থিতি ক্রমেই নৈরাজ্যের দ্বারে উপনীত হচ্ছে। কোন সভ্য দেশ এভাবে চলতে পারে না। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সুষ্ঠ কঠোর আইন কার্যকর করতে হবে অতি দ্রুত গতিতে। 

 

বর্তমানে প্রতিটি হত্যা ধর্ষণ বিশ্লেষণ করলে হিংস্রতা ও নৃশংসতা কত যে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তা অনুধাবন করা যায়। দেশের যুব সমাজকে এক শ্রেণির  উচ্চবিত্ত ও রাজনৈতিকমহল ব্যবহার করছে নানাভাবে, কারো প্রতিহিংসা বা ব্যক্তিগত প্রতিশোধ হিসাবে; মাদকের হাতিয়ায় হিসাবে যুব সমাজ আজ দিশেহারা হয়ে এসব করছে, বেকারত্ব তাদের গ্রাস করছে, উচ্চ ডিগ্রী নিয়ে মা, বাবার ঘাড়ে ওরা কতকাল কাটাবে? তাই মাদক ও নানা অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে দেশের বেকার সমস্যা একটি প্রধান কারণ। যুবকদের দ্রুত কর্মসংস্থান করতে হবে। উচ্চবিত্ত যুবকরা বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে, কাজের সন্ধানে। ফলে দেশ একসময় মেধাশূন্যও হয়ে পড়বে। বিভীষিকাময় এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ চায় দেশের সাধারণ জনগণ। বিচার ব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আশ্রয় দেয়া যাবে না। দলীয়করণ দূর করতে হবে। ধর্ষণের ও হত্যার কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করলে অচিরেই সব অপরাধ বন্ধ হতে বাধ্য। দেশে সুবিচার আমরা দেখতে পাব সে সুদিনের অপেক্ষায় জনগণ তাকিয়ে আছে।

 

লেখিকাঃ

অমিতা বর্দ্ধন

উপদেষ্টা, ড. মঞ্জুশ্রী একাডেমি।