ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনসহ আর কোনও নির্বাচনেই অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠক থেকে বেরিয়ে রাত ৯টার দিকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানান।
ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনেই যাবো না। এমনকি স্বতন্ত্রও কেউ প্রার্থিতা করতে পারবে না। কেন যাবো তাদের অধীনে নির্বাচনে? কোনও লাভ আছে, নেই। তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে জানে না।’
বৃহস্পতিবার রাত সোয়া নয়টার দিকে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিএনপি এখন থেকে এই সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনেই অংশ নেবে না। ডিএনসিসি, উপজেলা নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এরইমধ্যে প্রমাণ হয়েছে, এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তাই আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত— আমরা উপজেলা ও সিটি নির্বাচনে অংশ নেবো না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও সরকারের অধীনে নির্বাচন মানেই প্রহসন। তাই আমরা উপ-নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন ও ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে অংশ নেবো না।’
জাতীয় সংসদের কিশোরগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচন ও গাইবান্ধা-৩ আসনের ভোটেও অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে তারা আলোচনা করে সর্বসম্মতভাবে একমত হয়েছেন— বর্তমান সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়া ঠিক হবে না। এক্ষেত্রে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কারাগারে থাকা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে বারবার পেছনে ফেলা হচ্ছে। এ কারণে দলের সব মনোযোগ এখন চেয়ারপারসনের মুক্তির দিকে।
বৃহস্পতিবার স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বৈঠকের আগে দলীয় প্রধানের আইনজীবী প্যানেলের সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করে বিএনপি। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় খালেদা জিয়ার দ্রুত মুক্তির বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়ার। এজন্য আইনত যা যা করণীয়, তাই করার সিদ্ধান্তে একমত হন নেতারা। তবে এ বিষয়ে আরও বিশদ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য আগামী ৩১ জানুয়ারি নির্বাচিত আইনজীবীদের নিয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব, চেয়ারপারসনের মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মামলার বিষয়গুলোকে জোর দিচ্ছি, তার মুক্তির ব্যাপারটিকেই প্রাধান্য দিচ্ছি, এটাকে আরও বেশি সক্রিয় করা হবে।’
মাহবুব উদ্দিন খোকনের ভাষ্য, বেগম জিয়ার জামিনের বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত। এ কারণে তার জামিন হচ্ছে না। আমাদের আলোচনা হয়েছে, আরও আলোচনা হবে।’
খালেদা জিয়ার মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘আজকে অইনজীবীদের বৈঠক হয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি সিলেক্টিভ আইনজীবীদের বর্ধিত সভা হবে। সেখানে আরও বিস্তারিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি নিজের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদেরকে তাগিদ দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট মামলা রয়েছে ৩৭টি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটা থেকে অনুষ্ঠিত দুই বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এজে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের আজকের বৈঠকে খালেদা জিয়ার কারাগারে থাকার একবছর উপলক্ষে কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য। তিনি জানান, সম্ভবত আগামী বৈঠকে কর্মসূচি প্রণীত হবে। তবে পোস্টার, লিফলেট প্রকাশ করা হবে। এছাড়া, অন্যান্য আয়োজনও থাকবে।