জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

একজন অসাধারণ মাহমুদ হাসান স্যার!

হারুন-অর-রশিদ সাগরঃ মাহমুদ হাসান স্যার! একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের উদাহরণ। স্যার শুধু একজন সিভিল সার্ভেন্টই নন, বরং তিনি নানা গুণে গুণান্বিত একজন মহান ব্যক্তি। মাহমুদ হাসান স্যারের সাথে আমার পরিচয় ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে ৩০তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পরপরই। স্যার তখন আমার নিজ জেলা হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক। সেসময় তিনি হবিগঞ্জ জেলায় বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সকলকে তাঁর বাসায় ডিনারের আমন্ত্রণ করেন।

চাকুরিতে যোগদানের পূর্বেই স্যার একজন জুনিয়র সহকর্মী হিসেবে যে দিকনির্দেশনা ও ভালবাসা প্রদর্শন করেছেন তা খুবই বিরল। ঐ সময় তিনি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন আজও তা আমার কাছে বিস্ময়। তারপর থেকে আমি স্যারের মত একজন সৎ, আদর্শবান কর্মকর্তা হিসেবে স্যারকে অনুসরণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করি। পরবর্তীতে হবিগঞ্জে থাকাকালীন বিভিন্ন প্রোগ্রামে স্যারের অনেক বক্তৃতা মুগ্ধ হয়ে শুনেছি।

জেলার সব কর্মকর্তার জন্য তিনি ছিলেন রোলমডেল। কথাবার্তা, চালচলনে ছিলেন জুনিয়র সহকর্মীদের কাছে অনুকরণীয়। ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় সুন্দর বাচনভঙ্গি দিয়ে যে কোনো লোককে তিনি আকৃষ্ট করতে পারতেন। আমি যখন অর্থ বিভাগে কর্মরত, স্যার তখন একজন সিনিয়র কর্মকর্তা হয়েও আমাকে দেখার জন্য স্বয়ং আমার অফিস কক্ষে চলে এসেছিলেন যা আামাকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছিল।

গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পশ্চিম খন্ড গ্রামের হাজী মমতাজ উদ্দীন মাস্টারের বড় ছেলে মাহমুদ হাসান স্যার। স্যার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিষয়ে পড়াশুনা করেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর দুটিতেই প্রথম শ্রেণি। এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষাতেও প্রথম বিভাগ। অসাধারণ ফলাফল নিয়ে তার সিভিল সার্ভিসে যাত্রা।

তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে সহকারী কমিশনার হিসেবে পঞ্চগড়, ফরিদপুর, সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও সীতাকুন্ডে, ইউএনও হিসেবে মৌলভীবাজার সদর ও কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে সাতক্ষীরায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের ডিডি, জেলা প্রশাসক হিসেবে হবিগঞ্জে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক, বরিশালের ডিএলআরসি, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের উপসচিব, বিসিএস প্রশাসন একাডেমির পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক, ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে দক্ষতা ও সুনামের সহিত কাজ করেছেন।

বর্তমানে স্যার বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি করোনা মোকাবেলায় কুড়িগ্রাম জেলায় সরকারের কর্মকান্ড পরিচালনায় অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশের সকল বিভাগে কাজ করার মাধ্যমে স্যার মাঠ প্রশাসনে এক অনন্য নজীর সৃষ্টি করেছেন।

২০১০ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে তৎকালীন সমাজকল্যাণমন্ত্রী হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান মরহুম এনামুল হক মোস্তফা শহীদ হবিগঞ্জের জন্য একজন সৎ, কর্মঠ এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের একজন জেলা প্রশাসক পদায়নের অনুরোধ করেছিলেন। তখন মাহমুদ হাসান স্যারকে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করা হয়।

গত বছর মাহমুদ হাসান স্যার এক জটিল রোগে আক্রান্ত হন। অজ্ঞাত কারণে তার রক্তের প্লাটিলেট ভেঙে যেতে থাকলে স্যারকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়লে স্যারের ব্যাচমেটরা স্যারকে সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান হতে তিনি সবার দোয়ায় ভালো হয়ে ফেরত আসেন।

এরপর স্যারকে দেখতে আমি ময়মনসিংহে গিয়েছিলাম। স্যার তখন কমিশনার বাংলোতে যে আপ্যায়ন করেছিলেন তাও কখনো ভুলবার নয়। চলতি বছরের ২৩ মে হঠাৎ করে স্যারের করোনা পজিটিভ হওয়ায় যখন স্যারকে এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো, তখনও আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে স্যারকে আবার ফিরে পাব কিনা। খুব কষ্ট হচ্ছিল স্যারের জন্য।

হবিগঞ্জের অনেকেই তখন ফোন করে আমার কাছে স্যারের আপডেট জানার চেষ্টা করত। তাই মন বলছিল হাজারো মানুষের দোয়া নিশ্চয়ই বিফলে যাবেনা। মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় দীর্ঘ ৪৫ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর করোনা জয় করে সুস্থ হয়ে স্যার গতকাল বাসায় ফিরেছেন।

অসম্ভব মনোবলের অধিকারী মাহমুদ হাসান স্যারের সবকিছুকে জয় করার একটি শক্তি ছিল, আছে এবং থাকবে। স্যারের দুই ছেলে সীমান্ত ও সমুদ্রও স্যারের মত বিনয়ী ও মেধাবী। স্যারের এই নতুন জীবন, সবার দোয়ার ফসল। এই নতুন জীবনে স্যারকে স্বাগতম। স্যারের তো দেশ ও জাতিকে আরো এখনো অনেক কিছু দেবার বাকী রয়েছে। তাই নতুন করে দেশের সেবায় নিয়োজিত করার জন্য মহান আল্লাহ স্যারকে তৌফিক প্রদান করুক এই কামনা করছি।

লেখকঃ সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মৌলভীবাজার।