জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

করোনায় আটকে গেল অনেকের বিয়ে; কবে হবে তারও নিশ্চয়তা নেই

পিএইচডি শেষ করে আমেরিকা থেকে গত ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশে আসেন ইমতিয়াজ আহসান। শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাবা মার একমাত্র সন্তান। পরিবারের সদস্যরা ইমতিয়াজকে বিয়ে দিতে প্রস্তুতি শুরু করেন। এখানে ওখানে খোঁজ নিয়ে ডাক্তার পাত্রী ঠিক করা হয়। পাত্রী পক্ষও ইমতিয়াজকে পছন্দ করেন।

উভয়পক্ষের আলোচনায় ১২ এপ্রিল বিয়ে ও ১৯ এপ্রিল বউভাতের দিন ধার্য করা হয়। অগ্রিম অর্থ দিয়ে কমিউনিটি সেন্টার বুকিং দেয়া হয়। বিয়ের কেনা-কাটা চলতে থাকে। কিন্তু বিধিবাম। বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণ দেখা দেয়। বাংলাদেশও বাদ যায় না। করোনার আঘাতে আপাততঃ বিয়ের সব আয়োজন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন ইমতিয়াজ ও তার পরিবার।

রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক্ নয়ন রহমান। তার বাবার দুইটি কিডনিই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তিনি ছেলের বউ দেখতে চান। বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হল ৩০ মার্চ। নয়নের বাড়ি খুলনা জেলায়। সেখানেই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে প্রতিদিনই রোগী বাড়তে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে নয়ন যেখানে কাজ করে সে হাসপাতালের চিকিৎসক্দের সকল ছুটি স্থগিত করা হয়।

এছাড়া চিকিৎসক্ হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে নয়ন রহমানের পক্ষেও রোগী ফেলে বিয়ে করতে যাওয়া সম্ভব নয়। করোনার কারণে আপততঃ বিয়ে বন্ধ। কবে হবে তারও ঠিক নেই। তার অসুস্থ বাবা ছেলের বউ দেখে যেতে পারবেন কি না কে জানে!

করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় জনসমাগম হয় এমন সব অনুষ্ঠান বন্ধ করতে সরকারি নির্দেশ থাকায় বিয়ের কার্ড ছাপিয়েও মিশু মারজানা ও নাভিদ রাসেল বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন।

শুধু ইমতিয়াজ, নয়ন, মিশু ও নাভিদ নয়, সারা দেশে এমন অনেকে আছেন যারা করোনা সংক্রমণের কারণে আপাততঃ বিয়ের সব আয়োজন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। কবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে তাও অনিশ্চিত।

করোনা সংক্রমণরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে। ঘরের বাইরে বের না হতে সরকারি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নজরদারিতে আছে আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনী। জেলায় জেলায় চলছে লক্ডাউন।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের এক এলাকায় আরেক এলাকা থেকে প্রবেশ আটকাতে বিভিন্ন কৌশল নেয়া হয়েছে। ওষুধ ও নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া সকল দোকান বন্ধ করা হয়েছে। বিকাল ৫টার পরে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের না হতে কঠোর সরকারি নির্দেশ দেয়া হয়েছে

এমন পরিস্থিতিতে বিয়ের আয়োজন সম্ভব নয় বলে হাতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
মিরপুর ১৩ নম্বরের বাসিন্দা গৃহিণী সামিয়া জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, আমার ননদের বিয়ের জন্য পাত্র দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা ব্যাধির সংক্রমণরোধে আমি গত ২০ দিন বাসা থেকে বের হয়নি।

তার ব্যবসায়ী স্বামী বাজার ও ওষুধ কেনা ছাড়া বাসা থেকে বের হননি বলেও জানান সামিয়া জামান।

করোনার কারণে বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার, ক্লাব, রেস্তরা বন্ধ থাকায় কোথায় বিয়ের অনুষ্ঠান করবেন এমন প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় সারা বছরই বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলে রাজধানীর বনানী এলাকায় অবস্থিত মহুয়া পার্টিসেন্টারে। এখানকার কর্মকর্তা আব্দুর রহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, গত কয়েক বছর থেকে পহেলা বৈশাখের আগের মাসে প্রতি দিনই বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলত এখানে। আমাদের রোজগারও ভালো ছিল। এবারেও গত ১৫ মার্চ থেকে প্রতিদিন বিয়ে চলেছে।

গত ২০ মার্চ থেকে সব বন্ধ। যারা বুকিং দিয়েছেন তারা হয় পাত্র পক্ষ, না হয় পাত্রী পক্ষ। করোনার কারণে বিয়ের অনুষ্ঠান আপততঃ করবেন না বলে যারা বুকিং দিয়েছেন তারা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। কবে আবার বুকিং দেবেন, প্রশ্ন করা হলে সবাই পরে জানাবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।

মিরপুর বেনারসী পল্লীর শাড়ির দোকান নোলকের বিক্রয় কর্মকর্তা মোঃ ইদ্রিস কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতি বছর বসন্তে, না গরম, না ঠাণ্ডা এমন আবহাওয়ায় বিয়ের শাড়ি বিক্রি বেশি হয়। অনেকে বিয়ের কনে ও বিয়েতে অংশ নেয়া অন্যদের শাড়িও অর্ডার দিয়েও কিনে থাকেন। এবারে অনেক অর্ডার ছিল। কিন্তু সব বাতিল করে দিয়েছেন। করোনার কারণে দোকান বন্ধ। বিক্রি নেই।

বিয়ে ঘিরে সোনার গহনার বিক্রিও বাড়ে। বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সহ সভাপতি দিলীপ কুমার আগরওয়াল কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতি বছর বৈশাখের আগে বিয়ের আয়োজন তুলনামূলক বেশি হয়। এদেশের চিরচেনা নিয়েমে বিয়েতে সোনার গহনা বেশি ব্যবহৃত হয়। আমাদের জন্য সময়টাও ভালো যায়। এবারে দোকানই খুলতে পারিনি। বিয়ের গহনা সাধারণ মানুষ কোথা থেকে কিনবে?