আনোয়ার শাহজাহানঃ সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের একটি সার্বভৌম আরব রাষ্ট্র। আয়তনের দিক দিয়ে এদেশটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় আরব দেশ এবং আলজেরিয়ার পরে আরব বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। ইসলামের দুই পবিত্র মসজিদ মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর কারণে সৌদি আরবকে দুই পবিত্র মসজিদের দেশ বলা হয়।
সৌদি আরবের উত্তরে জর্দান ও ইরাক, উত্তরপূর্বে কুয়েত, পূর্বে কাতার, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত অবস্থিত, দক্ষিণপুর্বে ওমান ও দক্ষিণে ইয়েমেন অবস্থিত। সৌদি আরবের বৃহত্তর শহর ও রাজধানী হল রিয়াদ।
সৌদি আরবের আয়তন ২১,৪৯,৬৯০ বর্গকিলোমিটার (৮,৩০,০০০ বর্গমাইল) এবং ২০১৭ সালে আনুমানিক হিসেবে লোক সংখ্যা ৩ কোটি ৩০ লাখ।
প্রথম করোনা রোগী সনাক্তঃ
সৌদি আরবে করোনা ভাইরাসের প্রথম রোগী সনাক্ত হয়ে ২ মার্চ সোমবার। ঐদিন দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করে। সৌদি গেজেট ও আরব নিউজ সংবাদ প্রকাশের পর সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি সৌদি নাগরিক। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সৌদি নাগরিকের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। ওই ব্যক্তি সম্প্রতি ইরান থেকে বাহরাইন হয়ে দেশে ফিরেছেন।
এর আগে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে, সর্বপ্রথম করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। পরে বাহরাইন, কুয়েত, লেবানন ও মালয়েশিয়াতেও করোনাআক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে কুয়েতে।
সৌদি আরবে প্রথম মৃত্যুঃ
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সৌদি আরবে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে মদিনা শরিফে। ২৪ মার্চ সোমবার রাতে আফগানিস্তানের এক নাগরিকের মৃত্যু হয়। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানিয়েছে সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরের দিন মঙ্গলবার সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড. মোহাম্মদ আল আব্দ আল আলাই এক ব্রিফিংয়ে জানান, মদিনায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৫১ বছর বয়েসি একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আফগানিস্তানের নাগরিক।
সৌদি আরবে বাংলাদেশিঃ
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সৌদি আরবের মদিনা শরিফে কোরবান নামে এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। ২৪ মার্চ সোমবার মদিনার আল জাহরা হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল বলে জেদ্দায় অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেটকে এ তথ্য নিশ্চিত করে হাসপাতাল কতৃপক্ষ।
কোরবানের বাড়ি ঢাকার সাভারের নগর কোণ্ডার সাদাপুর পুরান বাড়ি এলাকায়।
১৯ এপ্রিল পর্যন্ত সৌদি আরবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৩ জন প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্র থেকে তথ্য পাওয়া গেছে।
১১ এপ্রিল সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ হাজার ৬৫১ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৮৫ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৭ জন। দূতাবাস এবং কনস্যুলেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সৌদিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১১ জন বাংলাদেশি প্রবাসী। যা মোট মৃত্যুহারের ২০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে মদিনায় ৭ জন এবং তাদের চারজনই চট্টগ্রামের।
মদিনা শহরে চার হাজার শ্রমিকের করোনাভাইরাসের পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করা দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের শ্রম কাউন্সিলর করোনায় আত্রান্ত হয়েছেন। দেশের বাহিরে কূটনীতির দায়িত্বে থাকা ঢাকার কোনো কর্মকর্তার করোনা আক্রান্তের ঘটনা এটাই প্রথম।
১৮ এপ্রিল শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করে। জানা যায়, বাংলাদেশ মিশন জেদ্দায় কর্মরত কাউন্সিলর (লেবার) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বাংলাদেশি ৪ হাজার শ্রমিককে করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় রাজি করাতে গত সপ্তাহে তিনি মদিনায় একটি ক্যাম্পে সৌদি প্রশাসনের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এই কূটনীতিক জেদ্দায় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্তায় উল্লেখ করা হয়।
২০ এপ্রিল পর্যন্ত সৌদি আরবে ২১ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তথ্য পাওয়া গেছে।
সর্বশেষঃ
২০ এপ্রিল সোমবার ১১২ জন আক্রান্ত এবং ৬ জন মারা যান। এর আগের দিন রোববার এ সংখ্যা ছিল, আক্রান্ত ১০৮৮ জন এবং নিহত ৫ জন। তবে আক্রান্তের দিক দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সৌদির অবস্থান প্রথম। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। সৌদি আরবে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০৪৮৪এবং মৃতের সংখ্যা ১০৩। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ১৪৯০ জন সুস্থ হয়েছেন এবং এবং শতকরা ৬ ভাগ মারা গিয়েছেন বলে সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।