বর্তমান এক সময়ের মহা আতঙ্ক ও মহামারী আকার ধারণ করা নান হল করোনা ভাইরাস । এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৮১ জন মারা গেছেন বলে জানা গেছে । হাসপাতালে ভর্তি আছেন আরও হাজার হাজার মানুষ ।
দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি ঠেকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে চীন। বাদুড়ের স্যুপ থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে দাবি করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা।
তারা বলছেন, কেবল ফ্রুট ব্যাট বা মেগাব্যাটের মধ্যে পাওয়া ভাইরাসের সঙ্গে চীনের উহানে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের মিল রয়েছে।
বাদুড়ের স্যুপ উহানে খুবই জনপ্রিয় খাবার। এই শহরেরই একটি মাছ বাজার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে।
আরেকটি গবেষণায় বলা হচ্ছে, সাপ থেকেই এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে। করোনাভাইরাসের কোন প্রতিষেধক নেই। প্রতিষেধক আবিষ্কারে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিজ্ঞানীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মার্কিন বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা আক্রান্তদের শরীরে ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সক্ষম হবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (এনআইএইচ) বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, প্রতিশেধক আবিস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ করোনাভাইরাসের জেনেটিক ক্রমবিন্যাস শনাক্তে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি চায়না সায়েন্স বুলেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, বাদুড়ের শরীরে পাওয়া যায় এমন একটি ভাইরাসের সঙ্গে নতুন করোনাভাইরাসের সম্পর্ক রয়েছে। এর আগে প্রাণঘাতী সার্স ও ইবোলা ভাইরাসের বিস্তারও উড়ন্ত কোনও স্তন্যপায়ী থেকে হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা ভেবেছিলেন, নতুন ভাইরাস মহামারী আকার নেবে না, কারণ আগে যেসব ভাইরাসের প্রকোপ দেখা গেছে, সেসব ভাইরাসের জিন ভিন্ন ছিল।
চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেস, পিপলস লিবারেশন আর্মি ও ইন্সটিটিউট পাস্টোর অব সাংহাই যৌথভাবে নতুন গবেষণা পরিচালনা করেছে। সেখানে দেখা গেছে, মানবদেহে থাকা এসিই২ নামের একটি প্রোটিনের সঙ্গে এই ভাইরাসের একটি ‘দৃঢ় সম্পর্ক’ রয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, এই বান্ডিং প্রোটিনের সঙ্গে সার্স ভাইরাসের উচ্চমাত্রা মিল হয়েছে। ২০০২-২০০৩ সালে ছড়িয়ে পড়া ওই ভাইরাসে প্রায় ৮০০ জনের মৃত্যু হয় এবং বিশ্বজুড়ে আট হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়।
সরকারি একটি ডাটাবেজে করোনাভাইরাসে নতুন স্ট্রেইনের বিবর্তন শনাক্ত করেছেন এবং বিবর্তন ট্রি থেকে জানতে পেরেছেন এটা বেটাকরোনাভাইরাসভুক্ত।
তাদের দুটির মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ জিনগত মিল রয়েছে, যা শূকর ও মানুষের সাদৃশ্যের চেয়ে কম। গবেষকরা জানিয়েছেন, উহান করোনাভাইরাসের প্রাকৃতিক হোস্ট বাদুড় হতে পারে। কিন্তু বাদুড় ও মানুষের মাঝখানে একটি অজ্ঞাত মাধ্যম থেকে থাকতে পারে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন এই ভাইরাসটি একটি আরএনএ ভাইরাস। অর্থাৎ স্পলপক্স বা গুটি বসন্তের মতো ডিএনএ ভাইরাসের ১০০ গুণ দ্রুত রূপান্তর ঘটে এই আরএনএ ভাইরাসের।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দাবি করেছেন, বাদুড় থেকে ভাইরাসটি মানবদেহে প্রবেশ করেছে সাপের মাধ্যমে। উহানের হুয়ানান সিফুড মার্কেটে অন্যান্য বণ্যপ্রাণীর সঙ্গে সাপও বিক্রি করা হয়। আর সেখান থেকেই এই ভাইরাস মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ার আগে অন্য কোনও প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করে থাকতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, নতুন ২০১৯-এনসিওভি ভাইরাসটি বাদুড়কে আক্রান্ত করে এমন একটি করোনাভাইরাস এবং আরেকটি অজানা করোনাভাইরাসের সমন্বয়।
জার্নাল অব মেডিকেল ভিরোলজিতে এক আর্টিকেলে গবেষকরা জানিয়েছে, আমাদের বিবর্তন বিশ্লেষণ থেকে এই প্রথমবার দেখা গেছে, ২০১৯-এনসিওভি ভাইরাসের আধার হিসেবে সম্ভবত কাজ করে সাপ।