দেউন্দি টি কোম্পানি মালিকানাধীন চা শিল্প প্রতিষ্ঠানে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এবং সরকার প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব পেয়ে থাকে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় অতিরিক্ত বালু বোঝাই বিভিন্ন পরিবহন চলাচল কারণে দেউন্দি চা বাগান – শাহজীবাজার সড়কে ” শনিবাইর ব্রীজ ” মাঝামাঝি স্থানের বীম এবং দুপাশে পিলার ভেঙে পড়ায় দুর্ঘটনার শঙ্কা নিয়ে এর উপর দিয়ে হাজার হাজার চা শ্রমিক ও যান চলাচল করছে । চা পাতা নিয়ে বিপাকে পরেছে বাগান কর্তৃপক্ষ ।
দেউন্দি চা বাগানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় , উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নে দেউন্দি চা বাগান – লাল চান্দ চা বাগান – শাহজীবাজার এলজিইডি প্রধান সড়কে যান ও পণ্য বাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দেউন্দি চা বাগান কারখানার সামনে ৮ ও ১০ নম্বর চা সেকশনের এলাকায় “শনিবাইর ব্রীজের মাঝামাঝি বীম নেই এবং ব্রীজের দুপাশে পিলার ধ্বসে পড়ে । কোন রকম গাছের কুটি ও বাঁশের উপর দাঁড়িয়ে আছে ।
এছাড়া দু’পাশে পিলারের নীচে সিমেন্ট ঢালাই ঝড়ে গেছে । আর দুই পিলারের গোড়ার অংশে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে । বীজের মাঝখানে নুয়ে পড়ছে ।যে কোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে ।
দেউন্দি চা বাগানের ডিপুটি ব্যবস্থাপক দেবাশীষ দাস টিটো জানান , আনুমানিক ১৯৮৪ – ৮৫ সালের দিকে তৎকালীন এরশাদ সরকার আমলে হবিগঞ্জে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী এলজিইডি মাধ্যমে ” শনিবাইর ব্রীজটি নির্মাণ করা হয় । দীর্ঘ বছর ধরে এই শনিবাইর ব্রীজটি ঝুঁকি পূর্ণ হয়ে পড়েছে । এই বিপদ জনক ব্রীজ দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলে বাগান কর্তৃপক্ষ ব্রীজের সামনে লাল নিশান বাঁশ দিয়ে টাঙিয়েছে সতর্ক বাণী। যে কোনো সময় এই ব্রীজ ধ্বসে পড়তে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে দেউন্দি চা বাগান কর্তৃপক্ষ জানান ।
২০১৩ সালে ৩ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে অবগত করে আবেদন করেন এবং এরপরে বেশ কয়েকটি জেলা প্রশাসক , উপজেলা নির্বাহী অফিসার , উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী কর্তৃপক্ষের আবেদন করলে ও এখন পর্যন্ত ঝুঁকি পূর্ণ ব্রীজের তদারকি নেই । ব্রীজের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যাওয়ার ফলে দেউন্দি চা বাগান ও লাল চান্দ চা বাগানের উৎপাদিত চা পাতা আটকা পড়ছে ।
দেউন্দি চা বাগানের ডিপুটি ব্যবস্থাপক দেবাশীষ দাস টিটো আরো জানান , বাগানের গোডাউন চা-পাতা মজুদ রয়েছে । এ শনিবাইর ব্রীজ টি ভেঙে যাওয়ায় দেউন্দি চা বাগানের চা-পাতা গুলো চট্টগ্রাম প্রেরণ করা সম্ভব হচ্ছে না । পাশাপাশি বাগান থেকে উত্তোলনকৃত কাঁচা চা-পাতা কারখানা প্রেরণ করা ও সম্ভব হচ্ছে না ।
তিনি আরো বলেন , দেউন্দি চা বাগান থেকে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় যাওয়ার যে বিকল্প সড়ক রয়েছে কিন্তু এই সড়কে বদর গাজী নামক স্থানে সুতাং নদীর উপর দীর্ঘ দিন আগেই ব্রীজ ভেঙে পড়ে।
বর্তমানে দুই দিকে ব্রীজ ভাঙে যাওয়ার কারণে বাগানের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ।
লাল চান্দ চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোফাজ্জল হোসেন জানান , বাগানের উৎপাদিত কাঁচা চা-পাতা বাগানের কারখানাতে পরিবহন করতে হয় । দেউন্দি চা বাগানের ৮ ও ১০ নম্বর সেকশনের সামনে ” শনিবাইর ব্রীজ ” বীম ভেঙে পড়ায় এখন কাঁচা চা-পাতা উত্তোলন করে পরিবহন করে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চা উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাওয়ার পাশাপাশি চায়ের গুণগত মান ও কমে যাবে এবং আমরা এ ব্রীজের কারণে মহা সমস্যা পড়েছি ।
স্থানীয় বাগানের চা শ্রমিক নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য কার্তিক বাকতি জানান , বাগানের হাজার হাজার শ্রমিক এলজিইডি দুটি সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে থাকি এবং আমাদের বাগানের অনেক সন্তান স্কুল – কলেজে চলাচল করে থাকে এ সড়কের উপর নির্ভর । বদরগাজী ব্রীজ ভেঙে যাওয়ার পর এখন দেউন্দি – শাহজীবাজার সড়কে “শনিবাইর ব্রীজ ” ভেঙে যাওয়ায় আমরা এখন মারাত্মক বেকায়দায় পড়েছি ।
বাগানের গাড়ি চালক মোহন লাল জানান, বাগানের শনিবাইর ব্রীজের উপর দিয়ে ট্রাক্টর নিয়ে কাঁচা চা-পাতা আনা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না ।ব্রীজ নড়নড়ে । ব্রীজের উপর দিয়ে রাতের আধারে বালু বাহী গাড়ি চলাচল করছে । বর্তমানে ব্রীজ যে অবস্থা আছে , যে কোনো সময় চা শ্রমিক সহ বস্তি এলাকার লোকজন নিয়ে ভেঙে পড়তে পারে । এই ব্রীজ প্রচলিত নাম হচ্ছে – ” শনিবাইরা ব্রীজ ” দীর্ঘ বহু বছর পূর্বে হবিগঞ্জে নির্বাহী প্রকৌশলী ব্রীজ নির্মাণ করার পর নজর ধারী নেই উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী কর্মকর্তারা।
বাগান সূত্রে জানা যায় , দেউন্দি টি কোম্পানি মালিকানাধীন অধীনে ছিল দেউন্দি চা বাগান থেকে শায়েস্তাগঞ্জ সড়ক এবং চানপুর চা বাগান থেকে শাহজীবাজার পর্যন্ত সড়ক। পরে এ দুটি সড়ক ও ব্রীজ স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর ( এলজিইডি) অধীনে সড়ক ও ছোট-বড় ব্রীজ নির্মাণ করে। ২০২২ সালে ” শানিবাইরা ব্রীজ ” এলজিইডি মাধ্যমে হালকা কিছু মেরামত করে যেতে না যেতেই একবছর পরে আবারও আস্তে আস্তে ঝুঁকি পূর্ণ হয়ে পড়ে । ঝুঁকি পূর্ণ ব্রীজ রক্ষার জন্য দেউন্দি চা বাগানের কর্তৃপক্ষ কিছু দিন পর পর শ্রমিক দিয়ে বালু বস্তা , গাছের কুটি ও বাঁশ দিয়ে ব্রীজ আটকিয়ে রাখা হলে ও পাহাড়ি বৃষ্টির ঢলে ও ভারী গাড়ি চাপে ব্রীজ নড়বড়ে হয়ে যায় ।
এদিকে গত আগস্ট মাসে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢলে ব্রীজের মাঝামাঝি স্থান থেকে বীমের পিলার পানিতে পড়ে যায় । তারপরও ও বাঁধা উপেক্ষা করে বালু বাহী যান চলাচল করায় এ ব্রীজ মারাত্মক ঝুঁকি পূর্ণ হয়ে পড়েছে ।
বাগানের পাশে বস্তি লোকজন জানান , দেউন্দি চা বাগান থেকে শাহজীবাজার সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত চা শ্রমিক ও বস্তির লোকজন চলাচল করে আসছে।
এছাড়া বাগানের চা পাতা সহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দেউন্দি – শাহজীবাজার এবং দেউন্দি – শায়েস্তাগঞ্জ সড়কে আনা নেওয়া হয়। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বাগানের শনিবাইরা ব্রীজ ।
চা শ্রমিকর সহ লোকজন ব্রীজের চলাচলে অনেক ভয় পেয়ে রাতে চলাচল করে না। অনতিবিলম্বে শনিবাইরা ব্রীজটি সংস্কার না করলে চা বাগানটি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে ।
পাইকপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ ওয়াহেদ আলী জানান, শনিবাইরা ব্রীজ শুধু চা বাগান নয়, বরং তাঁর ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার জনগণের চলাচল একমাত্র অবলম্বন চা বাগানের সড়কের প্রতি বেশি । তাই অনতিবিলম্বে দেউন্দি চা বাগান থেকে লাল চান্দ চা বাগানের সড়কে “শনিবাইরা ব্রীজ ” ও বদর গাজী ব্রীজ সংস্কারের দাবী জানান তিনি ।
চুনারুঘাট উপজেলা এলজিইডি স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করে ও সাড়া না পাওয়ায় এ ব্যাপারে এলজিইডি হবিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলামের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।