জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

ছন্দ ছড়ায় সুমন বিপ্লব এবং ড. মঞ্জুশ্রী একাডেমি

ছন্দ ছড়ায় সুমন বিপ্লব এবং ড. মঞ্জুশ্রী একাডেমি
আফছার উদ্দিন আহমদ চৌধুরী

ঢিলে ঢালা লোকটা
ভাল লাগেনা নজরে
সিলেটেতে এসেছিল
১ লা মার্চ ৯৪ ইং ফজরে।
সিলেটেতে এসেই প্রথম
মাজারেতে যায়
ঐখানেতে ক্ষণিক বসে
খোদার দয়া চায়।
ঢিলে ঢালা লোকটার
সম্পদ ছিল দুই
পরিহিত কাপড় আর
কাল প্রাণের সুঁই।
অর্থাভাবে খায়নি খাবার
দু’দিন যাবত তাই
পেটের মাঝে ক্ষিদের জ্বালা
পেটটা পুড়ে ছাই।
কড়ি বিনে পায়নি কিছু
পানি ছাড়া আর
পানি পানেই রাখছে ধরে
কাল জীবনটা তার।
মুখের কথা ঘুরছে মুখে
পারছেনা যে বলতে
হৃদয় তারে মানছে না আর
পারছে না তাই চলতে।
মুড়া ছিন্ন শাপলা যেমন
নুইয়ে পড়ে তাপে
তেমনি বেটা পড়ছে নুইয়ে
চরম ক্ষিদের চাপে।
তাইতো বেটা বেদিশ হয়ে
ব্যথা ভরা বুকে
পথের পানে তাকিয়ে থাকে
সহায়হীনা চোখে।
মনের মাঝে একটি আশা
চোক্ষে দেখলে দুঃখের ঢেউ
দুঃখ মোছনে আসতে পারে
দরদী হয়তো কাছে কেউ।
আশায় কিন্তু গুঁড়েবালি
বাড়া ভাতে ছাই
বেশ ভূষাতে দরদী সবে
আসল দরদী নাই।
হল্লা করে চলছে কত
ছায়া মেরে লোক।
কেউ কিছু খুঁজছে না তার
অন্ত দেশের দুঃখ।
ভিড়ের বাধা হর্ষে চিরে
চলছে সবে হায়
দেখেও কেউ বলছে না যে
“কি হয়েছে ভাই?”
কেমন তবু একটা লোকে
এমনি দেখে তারে
মনের জ্বালা খুঁজতে তার
বলল গিয়ে ধারে।
বলতে আমার লাগছে দ্বিধা
লাগছে আরো লাজ
কাজের খোঁজে থাকলে বসে
পারবে দিতে কাজ।
বান বাদলে করতে পারলে
মাঠের কর্ম ভাই
তোমায় আমি নিতে পারি
আমার নিজের গাঁয়।
আকিলপুরে জন্ম লালন
আকিলপুরেই থাকি
মোক্তার আলী নামটা আমার
জানবে গেলে বাকী।
আলীর কথায় বলে বেটা
ক্ষণিক ভেবে দিলে;
“কর্ম খোঁজেই আছি বসে
নিশ্চয়ই যাব নিলে।“
ক্ষুদার জ্বালায় কালা হয়ে
অন্ন দিতে আতে
শহর ছেড়ে গাঁয়ে যায়
মোক্তার আলীর সাথে।
বুকের মাঝে দুঃখের আগুন
উষ্ণ হাওয়ার ঢেউ
কও কথা ভাবছে মনে
জানেনা যে কেউ।
কিযে কর্ম করতে হবে
যেতে হবে কই
ওসব কথা ভেবে ভেবে
ফুটছে বুকে খৈ।
পাঠের কাজই করছে আগে
জানে পাঠের কাজ
পাঠের বদলে কেমনে করবে
মাঠের কর্ম আজ?
এমনি কথা ভেবে ভেবে
আকিলপুরে যায়
আকিলপুরে গিয়ে প্রথম
গোছল করে খায়।
মোক্তার আলী ভালো লোক
বুঝেছে তার মর্ম
ধীরে পরে দেয় তারে
পাঠদানের কর্ম।
রেবা নামক এক মেয়েকে
প্রথম বেটা পড়ায়
কয়েক মাসে শীর্ষ সংখ্যা
হালির উপর গড়ায়।
আকিলপুরে এমনি তার
কর্ম হয় শুরু
কাজের জন্য নেওয়া লোক
হয়ে যায় শুরু।
হায়রে ধন!
ধন নিয়ে কেউ
হেলাফেলা করছে
আর কেউ ধুকে ধুকে
অনাহারে মরছে।
বিধির বিধান বুঝা দায়
কে বা বুঝতে পারে
কেউ থাকে অট্টালিকায়
কেউ ঘুরে দ্বারে দ্বারে।
মক্কাতেও নাছে ঢেঁকি
মক্কাতেও ভাংগে ধান
তেমন কথা বলে লোকে
শুনছি তেমন গান।
তেমনি বেটা ছন্দে ছন্দে
মনমাধুরীর চন্দনে
আকিলপুরের সবকে আনে
ধীরে ধীরে বন্ধনে।
যে জন কথা বলছি আগে
গাইছি যাহার গান
সুমন নামে ডাকে তারে
সুমন বিপ্লব নাম।
চোখ নজরে যদিও তারে
যায়না তেমন গোনা
তার ভিতরে মুক্তা কিন্তু
তার ভিতরে সোনা।
কাঁদা জলেই পদ্ম ফোটে
স্বচ্ছ জলে নয়
দিনের মনই ধনের ভান্ডার
বাস্তবেতে হয়।
দেশ জাতিকে নিত্য যারা
চিত্ত সুধা করে দান
তাদের কাছে অঙ্গ শোভার
নাই যে কোন মান।
চিত্ত ধনেই ধনী তারা
চিত্ত শোভা চায়
চিত্ত সুধা দানতে পারলেই
শান্তি তারা পায়।
এমন সুধা দানে যারা
তারা হল কবি
সর্ব দেশের গর্ব তারা
সর্বকালের রবি।
জীবন মরণ বিষটা তারা
নিজে করে পান
দেশ জাতিকে যায় করে
অমৃতটা দান।
তেমনি একজন শিল্পী সুমন
তেমনি একজন কবি
ছন্দ ছড়ায় নিত্য আঁকে
নির্যাতীতের ছবি।
সব লেখকেই চিনে তারে
সবার কাজেই লাগে
কাব্য ছড়ার সব আসরেই
থাকে সবার আগে।
খুলনা জিলা জন্ম জিলা
খুলনায় কবির বাড়ী
খুলনার প্রদীপ সিলেট জ্বালতে
সিলেট জমায় পাড়ি
সিলেট এসে ধীরে ধীরে
শিকড় গজার পরে
প্রতিভা পাঠাগার নামে
একটা পাঠাগার করে।
দুইয়ে তিনে পাঁচটা বই
পাঁচটাই ছিল তার
পাঁচটা দিয়ে করে শুরু
পাঁচশ করে পার।
ঐখান হতেই উত্তান কবির
ঐখান হতেই যাত্রা
ঐখান হতে বাড়ায় পরে
কর্মকান্ডের মাত্রা।
পাঠাগারের পক্ষ হতে
অল্প কয়দিন পরে
“পল্লী সাহিত্য নামকরণে
একটা সংকলন করে।
এমনিভাবে করে আরো
একদশ তিনটা
দেশ জাতিকে দেয় সুমন
তার পুরা চিনটা।
এত কিছু করার পরও
শান্তি নাই তার
নূতন কিছু করতে আরো
নিত্য হাহাকার।
শিক্ষার্থীদের শিক্ষা করতে
দশের হিতে দান
তাইতো করে একাডেমি
“মঞ্জুশ্রী নাম।“
সবার হৃদে আফছার নামে
একাডেমির পক্ষ হতে
আর এক সংকলন প্রকাশ করে
নিরানব্বই উনিশ শতে।
সংকলনটি ছড়িয়ে পড়লে
শহর বন্দর দেশ
পাঠক কুলে নন্দিত হয়
মর্ম গুণে বেশ।
এমনিভাবে চারটা বছর
নিজেই একা লড়ে
এক খুঁটিতে রাখে তা
কোন মতে ধরে।
চার বছরেও না পাওয়াতে
তেমন কারো সাড়া
দু হাজার বন্ধ হয়
একাডেমির ধারা।
যাদের জন্যে কাঁদছে সুমন
লড়ছে নিজে একা
তাদের চোখে জলের ফোঁটা
যায়না কভু দেখা।
তাদের মতে পানসে ওসব
তাদের মতে বাজে
তাইতো তারা চায়না জড়তে
ওসব নীরস কাজে।
তাদের কান্ড দেখে সুমন
মুখটা করে ভার
সিলেট ছেড়ে ঢাকা যায়
বন্ধুর কাছে তার।
যাওয়ার কালে ভাবে সুমন
আসবেনা আর ফিরে
করার হলে করবে কিছু
রাজধানীতে ধীরে।
উলুবনে মুক্তা ছিটে
হবে না যে ফল
মরা গাছের জরা মূলে
দেবে না আর জল?
রাজধানীতে থাকবে এখন
থাকবে ঢাকা শহর
সকাল বিকাল দেখবে হেথা
রঙিন গাড়ির বহর।
দেশ গুণীদের খুঁজে খুঁজে
থাকবে তাদের মাঝে
তাদের সনেই কাটবে কাল
লেখা লেখির কাজে।
এক দুই তিন করে
মাস যায় দশটা
ঢাকায় কিন্তু পায়না খুঁজে
আকিলপুরের রসটা।
ঢাকা শহর লাগছে ফাঁকা
লাগছে না যে ভালো
অন্ত জ্বালায় মুখটা তাই
শুকিয়ে হয় কালো।
সিলেট সনে নাড়ীর বাধন
মনের বাঁধন যার
কেমনে থাকবে ঢাকা সেজন
বন্ধুর কাছে তার?
আকিলপুরে আসবে আবার
জ্বালবে জ্ঞানের আলো
প্রদীপ হতে জ্বালবে প্রদীপ
নাষবে দেশের কালো।
এসব কিছু করতে সুমন
মনে করে পণ
আকিলপুরে এসে আবার
শুরু করে রণ।
দেশ দরদী লোকদের নিয়ে
চেষ্টা করে দিবাযামী
আকিলপুরে আবার করে
আর এক একাডেমি।
একাডেমির নামটা রাখে
গাঁয়ের সনে রেখে মিল
‘ড. মঞ্জুশ্রী একাডেমি’
ঐ নামেতেই তার সিল।
সাবেক চেয়ারম্যান লালা মিয়া
মিনতী হেপী কুদ্দুছ আর
এমনি আরো অনেক আছে
হিতাকাঙ্খী তার।
তাদের নিয়ে সুমন কবি
হাজার দুই এক সনে
মরুর বুকে ফুল ফুটাতে
ঝাঁপিয়ে পড়ে রণে।
একাডেমী একটাতে
বিভাগ রাখে পাঁচটা
শিক্ষা, সাহিত্য, স্বাস্থ্য
সংগীত আর বিজ্ঞানটা।
শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে
কোচিং সেন্টার করে
শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিয়ে
রাখছে হেথায় ধরে।
বিনা পয়সায় করছে কবি
উপ –শিক্ষাদান
নিজের খেয়ে চাইছে কবি
রাখতে শিক্ষার মান।
ভাড়া ঘরেই কোচিং সেন্টার
নিজের কিছুই নাই
বেঞ্চ টেবিল ও হাতে গণা
হয়না বসার ঠাঁই।
অন্তসারে সেরা কিন্তু
জুড়ি মেলা ভার
দিনে দিনে বাড়ছে তাই
পড়ুয়াদের হার।
এমনি ভাবে রাখছে কবি
বিদ্যা দানের ধারা
আকিলপুরকে করবে কবি
একটা ‘মডেল পাড়া’।
প্রদীপ হতে জ্বলবে প্রদীপ
আঁধার দেবে ঠেলে
শান্তি নামের সুখের পাখি
উড়বে ডানা মেলে।
শিক্ষা পরে সাহিত্য
লেখক তৈরীর কারখানা
দেশ জনতার বিবেক আর
দেশ জনতার সারখানা।
সাহিত্যকে এগিয়ে নিয়ে
করতে লেখক সৃষ্টি
ঐদিকেতে দেয় তাই
সুমন কবি দৃষ্টি।
সব লেখকে দানতে কবি
তাদের মেধার দাম
এক কবিকে সংবর্ধনা দেয়
আফছার উদ্দিন নাম।
একাডেমি থাকলে টিকে
পেলে সবার সাড়া
সুমন কবি রাখবে জিন্দে
সংবর্ধনার ধারা।
মফস্বলের গুণী জ্ঞানী
মফস্বলের কবি
অবহেলায় থাকবেনা আর
মূল্য পাবে সবি।
দেশ জনতা থাকলে বুঝে
সুমন কবির সনে
পূর্ণ হবে কবির আশা
জিতবে কবি রণে।
সে সুদূর হতে আসছে চলে
একটা প্রবাদ খাঁটি
‘বীর ভোগ্য বসুন্ধরা’
লাঠি থাকলেই মাটি।
ওসব কিছু ভেবে সুমন
চিন্তে করে ওসব দিক
স্বাস্থ্য বিভাগ রাখে তাই
সবার স্বাস্থ্য রাখতে ঠিক।
সপ্তায় একদিন ডাক্তার এনে
গাঁও রোগীদের ডেকে
বিনা পয়সায় ঔষধ দেবে
একাডেমি থেকে।
গাঁয়ের যত কৃষি মজুর
গাঁয়ের যত চাষা
তাদের থেকে রোগ তাড়ানোই
সুমন কবির আশা।
কোথায় পাবে ডাক্তার কিন্তু
কেবা দেবে টাকা
টাকা ছাড়া স্বপ্ন সবই
টাকা ছাড়া ফাঁকা।
দেশ জনতা বুঝত যদি
কেমন কল্যাণ তাতে
আপন হিতে থাকত সবে
সুমন কবির সাথে।
হাতের লক্ষ্মী রাখত ধরে
ঠেলত না যে পায়
স্বাস্থ্য সেবা পেত সবে,
যুগযুগান্তর গাঁয়।
কবির আশা পূর্ণ হত
স্বস্তি পেত কবি
স্বাস্থ্য বিভাগ থাকত টিকে
কালে হত রবি।
দেহের খাবার মাংস ভাত
মনের খাবার গান
তাইতো কবির সংগীত বিভাগ
করবে খাবার দান।
মনের খাবার দানতে তাই
সপ্তাহ সপ্তাহ পরে
শিল্পী গায়ক নিয়ে কবি
গানের আসর করে।
গাঁয়ের শিল্পী গাঁয়ের গায়ক
অবহেলায় যারা
তাদের নিয়ে পাগলা কবি
গরম করে পাড়া।
জারি, সারি, ভাটিয়ালি
পল্লী গীতির সুর
সবার মনে তাক লাগিয়ে
মেতে তুলে আকিলপুর।
কৃষক, শ্রমিক, কুলি, মজুর
দেশের যত প্রাণ
আসর মাঝে এসে সবে
মন মদিরা করে পান।
গাঁয়ের লোকে চাহে যদি
রাখতে ধরে এই ধারা
গানের বিভাগ থাকবে টিকে
হবে না যে কভু হারা।
নয়নহারি আলোর ধারা
নয়নহারি বিশ্ব
বিজ্ঞান ছাড়া আঁধার কিন্তু
বিজ্ঞান ছাড়া নিঃস্ব।
সুমন কবি বুঝতে পেরে
জ্ঞান বিজ্ঞানের অবদান
বিজ্ঞান বিভাগ করেছে তাই
রাখতে ধরে বিজ্ঞান মান।
হাতের কর্মের যুগটা এখন
হাতের কর্মের কাল
সবখানেতেই উড়ছে তাই
হাতের কর্মের পাল।
হাতের কর্ম বলতে বুঝায়
কারিগড়ি জ্ঞান
কম্পিউটার, কাপড় সেলাই
নানান কর্ম জ্ঞান।
বেকারত্ব তাড়াতে দেশের
মুছতে বেকার অভশাপ
ওসব কর্মের শিক্ষা দিতে
কবির মাথায় নিত্য তাপ।
লিখা পড়া করেও যারা
কর্মাভাবে বেকার তারা
কবির ইচ্ছে তাদের কবি
কর্মযোগী করা।
কর্মযোগী শিক্ষা পেলে
ওসব বেকার যুবকে
যেথায় হেথায় কর্ম পাবে
চলতে পারবে সুখে।
কেমন সুদূর চিন্তে কবির
কেমন মধুর সাধ
দশের হিতে কেবা করে
এমন চিন্তে দিবারাত?
কবির আশা, আশাই রইল
হল না যে পূর্ণ
সাধের সাথে সামর্থ নেই
তাইতো আশা চূর্ণ।
দেশ জনতা থাকলে পাশে
শক্ত হত কবির হাত
বিজ্ঞান বিভাগ থাক টিকে
পূর্ণ হত কবিত সাধ।
বেকার লোকে কর্ম পেত
একাডেমির বরে
প্রদীপ হতে জ্বলত প্রদীপ
সকল ঘরে ঘরে।
শান্তি সুখের হিমেল হাওয়ায়
দেশটা দিত ভেসে
মরুর বুকে প্রীতির কুসুম
ফুটত সদা হেসে।
খুন খারাবি থাকত না আর
থাকত না আর জং
দিনে দিনেই বদলে যেত
রক্তে আনা দেশের রং।
তাইতো বলছি এগিয়ে আসুন
বিত্তবান আর সরকার
কবির হাতকে শক্ত করি
শক্ত করাই দরকার।

লেখকঃ
আফছার উদ্দিন আহমদ চৌধুরী
(প্রতিবন্ধী, কবি, সাহিত্যিক, ছড়াকার ও গীতিকার)