জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

সিলেটের জকিগঞ্জে প্রেমিকের বাড়িতে শিকলে বেঁধে প্রেমিকাকে নির্যাতন

সৈয়দ সালিক আহমেদ

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কাজলসার ইউনিয়নে পরকীয়া প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকাকে শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনাটি (১৩এপ্রিল) মঙ্গলবার রাতে উপজেলার কাজলসার ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের নোয়াবাড়িতে এ ঘঠনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে এলাকা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। খবর পেয়ে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রেমিক জাকারিয়া আহমদের বসতঘরের বারান্দার খুটিতে প্রেমিকার কোমরে শিকল পেচিয়ে তালা দিয়ে আটকানো অবস্থায় উদ্ধার করে।

স্থানীয়রা জানান, কামালপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে জাকারিয়া আহমদ (২২) এর সাথে বেশ কয়েক বছর থেকে একই গ্রামের প্রবাসী আফতাব উদ্দিনের স্ত্রীর ফারহানা বেগম (৪২) এর পরকিয়া প্রেম চলে আসছিল। মঙ্গলবার প্রেমিক জাকারিয়া বিয়ে করে নববধূ বাড়িতে নিয়ে আসলে পরকিয়া প্রেমিকা ফারহানা বেগম প্রেমিকের বাড়িতে রাত ৮টার দিকে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে কথা বার্তা শুরু করেন। এনিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায় হাতাহাতি ও মারধর হয়। পরে প্রেমিক জাকারিয়ারসহ তার পরিবারের লোকজন প্রেমিকা ফারহানাকে আটকে শিকল দিয়ে বসতঘরের বারান্দায় বেঁধে তালা লাগিয়ে মারধর করেন। খবর পেয়ে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরকিয়া প্রেমিকা ফারহানা বেগমকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। পরে জাকারিয়ার ফুফু বাদী হয়ে ফারহানার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় পুলিশ ফারহানাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পরকিয়া প্রেমিকা ফারহানা বেগমের স্বামী আফতাব উদ্দিন (আতাব) বলেন, তিনি দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুর প্রবাসে ছিলেন। এ সময় পার্শ্ববর্তী বাড়ির জাকারিয়া আহমদ তার বাড়িতে খরচ এনে দিতো। বিগত কয়েক বছর থেকে জাকারিয়া তার অগোচরে স্ত্রী ফারহানার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে নিজের মোবাইলে বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও তুলে রাখে। তিনি দেশে এসে নিজ স্ত্রীর সাথে জাকারিয়ার পরকিয়া সম্পর্কের বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে বাড়িতে আসতে নিষেধ করেন । তবুও সে মোবাইলে সম্পর্ক রেখে সময়ে সময়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ঘটনার দিন তিনি তারাবীর নামাজ পড়তে বের হলে জাকারিয়া মোবাইল ফোনে তার স্ত্রী ফারহানাকে প্রলোভন দেখিয়ে বাহিরে বের হতে বললে তিনি বের হন। এ সময় সে জড়িয়ে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় ফারহানা চিৎকার শুরু করলে পার্শ্ববর্তী জাকারিয়ার বাড়ির লোকজন এসে তার স্ত্রীকে ধরে বাড়িতে নিয়ে মারধোর করে লোহার শিকল দিয়ে বারান্দায় বেঁধে রাখেন। তিনি দাবী করেন, তার স্ত্রীর নানা আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও মোবাইলে তুলে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে জাকারিয়া দীর্ঘ দিন থেকে তার স্ত্রী ফারহানার নিকট থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি এ ঘটনায় আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট বিচার দাবী করেন।

অপরদিকে এ ঘটনায় প্রেমিক জাকারিয়ার আহমদের ফুফু সালেহা বেগম বাদী হয়ে পরকিয়া প্রেমিকা ফারহানা বেগমকে আসামী করে জকিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে তিনি পরকিয়া প্রেমের বিষয়টি উল্লেখ করে বসতঘরে অনধিকার প্রবেশ, মারধর, ভাঙচুর ও ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ করেন। এ মামলায় পুলিশ ফারহানা বেগমকে আটক দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।

তবে স্থানীয় লোকজন এক পক্ষের মামলা নিয়ে পরকিয়া প্রেমিকা ফারহানা বেগমকে জেল হাজতে প্রেরণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাকারিয়া একটি চরিত্রহীন ছেলে। সে ২০১৭ সালে বারহাল এলাকার এক স্কুল শিক্ষিকাকে প্রেম নিবেদন করে ব্যার্থ হয়ে জোরপূর্বক অপহরণ করে এলাকায় নিয়ে আসে। পরে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে অপহরণকারী জাকারিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এলাকাবাসী এ ঘটনায় উভয়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।

এ বিষয়ে জকিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল কাসেম বলেন, খবর পেয়ে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ গিয়ে ফারহানা বেগমকে শিকল থেকে ছাড়িয়ে থানায় নিয়ে আসে। এরপরও ফারহানার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তবে ফারহানা বেগমকে বেঁধে মারধরের ঘটনায়ও একটি এজাহার এসেছে। পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জকিগঞ্জ সার্কেল) সুদীপ্ত রায় এ প্রসঙ্গে জানান, পরকীয়া প্রেমঘটিত কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। ফারহানাকে শিকলে বেধেঁ রাখার দায়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।