৪টি মামলায় ৫ মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও টানা ৩ বারের নির্বাচিত হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ।
আজ সোমবার (২৯ জানুয়ারী) বিকালে হবিগঞ্জ কারাগার থেকে তিনি মুক্ত হন।
বিকাল ২ টার সময় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ হবিগঞ্জের হাজার হাজার নারী পুরুষ আলহাজ্ব জি কে গউছকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেন। পরে বিশাল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে দলের নেতাকর্মীরা জি কে গউছকে তার বাসভবনে নিয়ে যান। পথে পথে মানুষ দাড়িয়ে তাদের প্রিয় নেতা জি কে গউছকে স্বাগত জানান। মানুষের ফুলের মালা ও ভালবাসায় তিনি সিক্ত হন।
এরআগে গত ১১ জানুয়ারী বিচারপতি মোঃ রেজাউল হক ও বিচারপতি মোঃ খাইরুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৯ আগষ্ট বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশের দায়েরকৃত পুলিশ এসল্ট মামলায় জি কে গউছের জামিন মঞ্জুর করেন।
এরআগে গত ৩ ডিসেম্বর একই আদালত হবিগঞ্জ কারাগারে জি কে গউছকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় ২০১৫ সালে হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় জি কে গউছকে জামিন দেন। বিষয়টি নির্শ্চিত করেন জি কে গউছের আইনজীবি এডভোকেট আমিনুল ইসলাম।
জানা যায়, গত ১৯ আগষ্ট বিএনপির চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবীতে কেন্দ্র ঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচী ছিল। ওই দিন বিকাল ৫টার দিকে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর ঈদগার সামন থেকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছের নেতৃত্বে পদযাত্রা কর্মসূচী শুরু করে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি।
শায়েস্তানগরস্থ বিএনপির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে পদযাত্রা কর্মসূচী শেষ হয়। এ সময় পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে প্রধান সড়ক ছেড়ে ভিতরের রাস্তায় চলে যেতে বলে। কিন্তু হাজার হাজার লোক সমাগম হওয়ায় ভিতরের রাস্তায় জায়গা না হওয়ায় নেতাকর্মীরা প্রধান সড়কেই অবস্থান করছিল। এ সময় নেতাকর্মীদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলি বর্ষণ শুরু করে।
এতে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়।
এছাড়াও সদর থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেব সহ কয়েক পুলিশ সদস্য আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েকশ রাউন্ড রাবার বুলেট, টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি বেগতিক হলে পুলিশ রায়ট কার এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
এ ঘটনায় আলহাজ্ব জি কে গউছকে প্রধান আসামী করে বিএনপির ১২শ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ এসল্ট ও বিস্ফোরক আইনে হবিগঞ্জ সদর থানায় ২টি মামলা দায়ের করা হয়।
পরদিন ২০ আগষ্ট আওয়ামিলীগ শান্তি সমাবেশ শহরে মিছিল বের করে। এইসময় বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে আওয়ামিলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে।
এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা বাদী হয়ে বিএনপির দুইশতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করে। এই ৩টি মামলায় নেতাকর্মীদের জামিনের ব্যবস্থা ও আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে ঢাকায় যান জি কে গউছ।
২৯ আগষ্ট ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়ে হাইকোর্ট থেকে বাসায় ফিরার পথে জি কে গউছকে উঠিয়ে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। পরদিন ৩০ আগষ্ট ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকা সিএমএম কোর্টে হাজির করা হয়।
একই সাথে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন ডিবির কোতয়ালী জোনাল টিমের উপ পরিদর্শক আফতাবুল ইসলাম। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে গত ২ সেপ্টেম্বর একই আদালতে হাজির করে আবারও ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত রিমান্ড না মঞ্জুর করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।
এদিকে ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই পবিত্র ঈদের দিন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় হবিগঞ্জ কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় বিএনপি নেতা আলহাজ্ব জি কে গউছকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করে একাধিক খুনের মামলার আসামী ইলিয়াছ মিয়া ওরফে ছোটন নামে এক যুবলীগ কর্মী।
এ ঘটনায় হবিগঞ্জ কারাগারের জেলার মো. শামীম ইকবাল বাদী হয়ে হামলাকারী ইলিয়াছকে একমাত্র আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার এসআই সাহিদ মিয়া। আদালত ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২০২৩ সালের ২০ জুলাই হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল আলীম রায় ঘোষণা করেন। রায়ে কুখ্যাত সন্ত্রাসী ইলিয়াছকে দেড় বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেন। ইলিয়াছ শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার দাউদনগর গ্রামের সালেহ আহাম্মদ কনার পুত্র।
একই ঘটনায় হবিগঞ্জ সদর থানার এসআই সানা উল্লা বাদী হয়ে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় উল্টো জি কে গউছকেই আসামী করা হয়।
দীর্ঘ ৮ বছর পর গত ৫ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি (তদন্ত) বদিউজ্জামান এই মামলায় হবিগঞ্জ কোর্টে জি কে গউছের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে শ্যোন এরেস্ট দেখাতে আবেদন করেন। আদালত জি কে গউছের উপস্থিতিতে শোনানীর দিন ধার্য্য করলে গত ৪ সেপ্টেম্বর তাকে কেরানীগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জ কারাগারে নিয়ে আসা হয়। পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর শোনানী শেষে জি কে গউছকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় এবং পুলিশের রিমান্ড আবেদন না মঞ্জুর করা হয়।
গত ৩ ডিসেম্বর এই মামলায় বিচারপতি মোঃ রেজাউল হক ও বিচারপতি মোঃ খাইরুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ জি কে গউছের জামিন মঞ্জুর করেন।
একই আদালত গত ১১ জানুয়ারী গত ১৯ আগষ্টে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশের দায়েরকৃত পুলিশ এসল্ট মামলায় জি কে গউছের জামিন মঞ্জুর করেন।
এরআগে গত ৯ অক্টোবর হবিগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত বিস্ফোরক আইনে দায়েরকৃত মামলায় জি কে গউছ জামিন লাভ করেন।