৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ৭:৫৯

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

জেলায় এখনও ৩১টি অস্ত্র জমা হয়নি, উদ্ধারের নেই কোনো অগ্রগতি

সারা দেশে আওয়ামীলীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে যে সমস্ত আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল।

বর্তমান সরকার সেই-সব অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে জমা দেওয়ার আহবান জানান।

এরই ধারাবাহিকতায় হবিগঞ্জ জেলার ভিতরেও যে সমস্ত বেসামরিক জনগণকে লাইসেন্সকৃত অস্ত্র দেওয়া হয়েছিলো সে-সব অস্ত্রের মধ্যে সরকারের নির্ধারিত সময়ের ভিতরে ২৭৭টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

জেলার তথ্য অনুযায়ী ৩০৮টি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে পুরো জেলার ভিতরে।
এই ৩০৮টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ২৭৭টি অস্ত্র জমা হলেও ৩১টি অস্ত্র জমা হয়নি আজও।

সরকারের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও এতোগুলা অবৈধ অস্ত্র কাদের হাতে রয়েছে এবং কারা এই অস্ত্র গুলো ব্যবহার করার জন্য তাদের কাছে রেখে দিয়েছেন এসব আলাপ আলোচনা ঐ এখন সর্বত্র মহলে শুনা যাচ্ছে।

এসব অস্ত্রবাজদের উদ্দেশ্যে নিয়েও উঠছে নানান প্রশ্ন।

০৪ সেপ্টেম্বর থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘোষণার পরও এই ৩১টি অস্ত্র উদ্ধারে আজ ৬ দিন অতিবাহিত হলেও এসব অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সংস্থার পক্ষ হতে উদ্ধার অভিযানে কাউকে গ্রেফতার কিংবা এসব অস্ত্র উদ্ধার করার কোন খবর পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ২টি অস্ত্র আজও জমা হয়নি বলে থানা পুলিশ নিশ্চিত করেন।

কিন্তু এতোসব অবৈধ অস্ত্র গুলো তাহলে কাদের হাতে রয়েছে এবং থানা থেকে লুন্ঠনকৃত এই ২টি অস্ত্র কারা ব্যবহার করার জন্য লুকিয়ে রেখেছেন।
তাদের  নিয়ে আতংক ও শঙ্কায়  রয়েছেন কেউ কেউ।

এসব অস্ত্র লুটপাটের বিষয়েও অনেকের নামে রয়েছে গুঞ্জন। কিন্তু অস্ত্র উদ্ধারের আজ ৭দিন হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদেরকে এসব অস্ত্র উদ্ধারের জন্য কারও বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করার খবর পাওয়া যায়নি।
তবে এই দু’টি অস্ত্রের ব্যাপারে একটি গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছেন, একটি ছেলের উপর তাদের নজরদারি রয়েছে।
এই ছেলেটি ছাত্র আন্দোলনের সাথে নিজেকে একত্রিত করে গত ৫ আগষ্ট বানিয়াচং থানা থেকে দিনের বেলা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল বের করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার খবরও লোকমুখে শুনা গেছে।

এছাড়াও বিদ্যুৎ বিহীন অন্ধকার ঘুরের মধ্যে থানার ভিতর থেকে সেনা সদস্যদের সহযোগীতার বাহানা করে,থানার উত্তর পাশে শাহী ঈদগাহের এদিকে বেশ কয়েকটি অস্ত্র লুকিয়ে ফেলারও আলাপ আলোচনা শুনা গেছে।

থানার পুলিশ সদস্যকে গনপিঠুনি দিয়ে হত্যা করার পর আন্দোলনকারীগণ থানা ত্যাগ করেন।
তারপর এই যুবকটি ঈদগাহের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে তার লুকানো অস্ত্র গুলো পেন্টের ভেতরে করে নিয়ে যাওয়ারও কথা শুনা গেছে ; সেই রাতে উপস্থিত হওয়া অনেকেরই কাছ থেকে।

তাই অনেকের দাবি এই ছেলেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই এবং তার বাড়ি তল্লাশি করলেই বেড়িয়ে আসার সম্ভবনা রয়েছে লুন্ঠনকৃত অস্ত্র গুলোর।

এদিকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া এসব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স গত ৩ সেপ্টেম্বর স্থগিত করে একটি আদেশ জারি করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আদেশে বলা হয়, এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।
কিন্তু হবিগঞ্জ জেলায় নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র এখনো জমা হইনি।

এব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রভাংশু সোম মহান বলেন, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী হবিগঞ্জের ন’টি উপজেলায় বিভিন্ন বেসামরিক জনগণকে লাইসেন্সের বিপরীতে দেওয়া অস্ত্রগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট থানা গুলোতে জমা পড়েছে।
তবে বাকি থাকা ৩১টি লাইসেন্সে ইস্যুকৃত অস্ত্র গুলো সম্পর্কে তথ্য নেওয়া হচ্ছে।

এছাড়াও তিনি বলেন, বাকি ৩১টি লাইসেন্সধারীর সঙ্গে যোগাযোগেরও চেষ্টা করা হচ্ছে।

এসময় হবিগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট আবু জাহির, সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার সায়েদুল হক সুমন, সাবেক মন্ত্রী মাহবুব আলীসহ তাদের অস্ত্র গুলো জামা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রভাংশু সোম মহান বলেন, আমি কারো ব্যক্তিগত তথ্য দিতে পারবো না।

এব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোঃ রেজাউল হক খান বলেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেশির ভাগ আগ্নেয়াস্ত্রই জমা পড়েছে।
আর যেগুলো এখনো জমা দেওয়ার বাকি রয়েছে সেই অস্ত্র গুলোর ব্যাপারেও কাজ চলছে।

 

বানিয়াচংয়ের অস্ত্রের ব্যাপারে থানার নবাগত ওসি(তদন্ত) আব্দুর রহিম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,

বানিয়াচং থানা হতে লুট হওয়া সরকারি মালামাল অস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্র গুলোও  নির্ধারিত সময়ের ভিতরে সবাই জমা দেন নাই।

এর মধ্যে লাইসেন্সে পাওয়া অস্ত্রের মধ্যে ১২টি অস্ত্র এখনোও  জমা হয়নি।

এছাড়াও থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ২টি অস্ত্র এখনো জমা হওয়ার বাকি রয়েছে।

কিন্তু এই অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে সকল অস্ত্র জমা কিংবা উদ্ধার করাটা সম্ভব হয়নি।

তাই এসব অস্ত্র উদ্ধারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পাশাপাশি দেশের সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা ও সদস্যগনসহ বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী এসব অস্ত্র উদ্ধার করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

আশা রাখছি এসব অস্ত্র উদ্ধারে খুব শীঘ্রই আমরা সফল অভিযান পরিচালনা করতে পারবো।