জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

দেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে চা শিল্পের উপর! 

দেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে চা শিল্পের উপর! ২০২৪ সালে চায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ১০ কোটি ৮০ লক্ষ কেজি। কিন্তু চায়ের মোট উৎপাদন হয়েছে ৮ কোটি ৩০ লক্ষ ৪২ হাজার কেজি । অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাংলাদেশ উৎপাদন কমেছে ৯৯ লক্ষ কেজি চা।

কোনো বছর লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে বেশি , আবার কোনো বছর লক্ষ্যমাত্রা ঘরে পৌছতে পারেনি চায়ের মোট উৎপাদন । চা বাগান গুলো শ্রমিক অসন্তোষ , উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় কারণে দেশে এবার চায়ের উৎপাদন অনেক কমে গেছে ।

 

বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে জানা যায় , ২০২৪ সালে চায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ১০ কোটি ৮০ লক্ষ কেজি । কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে উৎপাদন কমেছে ৯৯ লক্ষ কেজি চা । ২০২৩ সালে ১০ কোটি ২০ লক্ষ কেজি চা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছিল ১০ কোটি ২৯ লক্ষ ১৮ হাজার কেজি চা । অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে ৯ লক্ষ ১৮ হাজার কেজি চা বেশি। ২০২২ সালে চা এর লক্ষ্যমাত্রা ১০ কোটি কেজি চা ধরা হলেও উৎপাদন হয়ে ছিল ৯ কোটি ৩৮ লক্ষ কেজি চা।

 

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে দেউন্দি টি কোম্পানি সহ অন্যান্য চা বাগান সংশ্লিষ্টরা বলেছেন , দেশে চায়ের কেজি প্রতি গড় উৎপাদন খরচ হয় ২২০ – ২৪০ টাকা । বাজারে নিলাম বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে গড়ে ২০০ – ২২০ টাকা। কয়েক বছর ধরে টানা লোকসানের ফলে উৎপাদন কামিয়ে দিচ্ছেন চা বাগান কোম্পানি মালিকরা । ফলে সার্বিক চা উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে ।

এছাড়াও বিরূপ আবহাওয়া , শ্রমিক অসন্তোষ ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়া এবং নিলামে চায়ের কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় কারণে এবার চা উৎপাদনে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় নি।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য মতে , ক্ষুদ্রায়তনের বাগান দেশের ১৬৯ চা বাগানে ২০২৪ সালে জানুয়ারি মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত অর্জিত ৮ কোটি ৬৬ লাখ ৫২ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে ।

এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১৭ লাখ ৫০ হাজার , ফেব্রুয়ারি মাসে ৪ লাখ ২০ হাজার , মার্চ মাসে ১৫ লাখ ৯৩ হাজার , এপ্রিল মাসে ৪৮ লাখ ৮২ হাজার , মে মাসে ৪৭ লাখ ৭৫ হাজার , জুন মাসে ১ কোটি ২৮ লাখ ২৪ হাজার , জুলাই মাসে ১ কোটি ১৪ লাখ ৩৫ হাজার , আগষ্ট মাসে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৬ হাজার , সেপ্টেম্বর মাসে ১ কোটি ২২ লাখ ১৭ হাজার , অক্টোবর মাসে ১ কোটি ৪৯ লাখ ২৩ হাজার , নভেম্বর মাসে ৯৯ লাখ ৭৮ হাজার , ডিসেম্বর মাসে ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। এদিকে হবিগঞ্জ , মৌলভীবাজার , সিলেট , চট্টগ্রাম ও ক্ষুদ্রায়তনের বান্দরবন, খাগড়াছড়ি এবং পনচগড় জেলা মিলে ৫৯ হাজার ১৮ হেক্টর জমিতে ১৬৯ টি চা বাগানে উৎপাদন হয় । তবে হবিগঞ্জ জেলায় চায়ের জন্য বিখ্যাত ।

এ জেলায় মোট চা বাগান ১৪ টি এবং জমির পরিমাণ ১৫ হাজার ৭০৩.২৪ হেক্টর । মৌলভীবাজার জেলায় চা বাগানের মোট ৯০ টি এবং চা চাষের ভূমির পরিমাণ ৩৩ হাজার ১শ ৬০ হেক্টর । সিলেট জেলায় চা বাগান মোট ২০ টি এবং চা বাগানের মোট জমির পরিমাণ ২৮০২০.৭৬ একর মধ্যে বছরে উৎপাদন চায়ের পরিমাণ ১৮ হাজার ২৫২ কেজি ( প্রায় ) ।

চা বাগান মালিকপক্ষের সংগঠন ” বাংলাদেশ চা সংসদ ( বিটিএ) এর সিলেট ব্রানচ চেয়ারম্যান এবং অভিজ্ঞ টি – প্লান্টার জি এম শিবলী বলেন , এবার চা বাগানে গ্রীষমকালে তীব্র খর বয়ে গেছে। এছাড়া সার , সেচ, কীটনাশক এর মূল্য বৃদ্ধি , উৎপাদন খরচের কম মূল্যে চা বিক্রি। এসব কারণে দেশে চায়ের উৎপাদনে প্রভাব ফেলেছে ।

 

এছাড়া জাতীয় উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ১০ ভাগ অবদান রাখা ন্যাশনাল টি কোম্পানি ( এন টি সি) চা বাগান গুলোতে বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতে দীর্ঘ সময় জুড়ে শ্রমিক ধর্মঘট চলায় বাগান গুলোতে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল । এ গুলোই উৎপাদন লক্ষ্যে মাত্রায় এর প্রভাব পড়েছে।

তিনি আরো বলেন , দেশের বৃহত্তম চা কোম্পানি ফিনলে চা বাগান গুলোতে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ ভাগ চা কম অর্জিত হয়েছে । সরকারি ভাবে চায়ের দাম ১৬০ টাকা ধরে নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও অন্যান্য চা বাগান মালিকদের এক কেজি চা তৈরিতে খরচ পড়ে ২ শ থেকে ২শ২০ টাকা। সেখানে নিলামে চা বিক্রি করতে হয় ১৮০ থেকে ২ শ টাকা দরে। এতে করে চা উৎপাদনে প্রতিটি বাগান মালিকরা কিছুটা হলেও আগ্রহ হারাচ্ছে ।