হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে নিখোঁজের তিন দিন পর মিশুক চালক আবিদুর ইসলামের (১৬), গলা কাটা লাশ উদ্ধার ঘটনার দায়েরী মামলাটি ৪ মাস পর তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে হবিগঞ্জের সিআইডিকে। বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে এক আদেশে মামলাটি সিআইডি’র কাছে হস্তান্তর করে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। তদন্তভার পেয়েই হবিগঞ্জের সিআইডি ইন্সপেক্টর আব্দুল বাসেত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
মৃত আবিদুর ইসলাম নবীগঞ্জ পৌর এলাকার কেলী কানাইপুর গ্রামের পাতা মিয়ার ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় এলাকাবাসী গুজাখাইর শরিষপুর এলাকার মরা কুশিয়ারা নদীতে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় তার মৃতদেহের পাশে থাকা শার্ট দেখে লাশটি মিশুক চালক আবিদুরের মর্মে তার পরিবার সনাক্ত করেন। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের এসপি মুরাদ আলী, সার্কেল এসপি আবুল খয়ের, পিবিআই ওসি শরীফ মোঃ রেজাউল করিম, নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ডালিম আহমদসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন।
পরে মৃতদেহ ময়না তদন্ত শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়। জানা যায়, মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ শহর থেকে আবিদুর ইসলাম (১৬) মিশুক গাড়িসহ নিখোঁজ হন। সে উপজেলার গুজাখাইর গ্রাম থেকে নবীগঞ্জে ফিরে যাত্রী নিয়ে পৌর এলাকার পূর্ব তিমিরপুরের দিকে রওয়ানা দেয়ার পর থেকে আর ফিরে আসেনি।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানায় একটি জিডি করা হয়। নিহত আবিদুর নিখোঁজের প্রায় দু’ঘন্টা আগে বিকাল প্রায় পৌনে ৬ টার দিকে তার খালাতো বোন মাফিয়া বেগম, বোন জামাই আব্দুর রহিম এর সাথে তার মিশুক গাড়ী নিয়ে শহরের গোল্ডেন প্লাজায় যায়। সেখান থেকে মধ্য বাজারের একটি হোটেলে নাস্তা খেয়ে মাছ বাজারে এসে খালাতো বোন জামাই’র সাথে মাছ ক্রয় করে নবীগঞ্জ- বানিয়াচং রোডস্থ খালাতো বোনের বাসায় আসে। পরে তাদের এখান থেকে তার গাড়ী নিয়ে বের হয়। পরে আর ফিরে আসেনি। ওই দিন সারা দিন খালাতো বোন জামাই’র ওর্য়াকসপে তার মিশুক গাড়ী মেরামত কাজে ছিল বলে সুত্রে জানাগেছে। এদিকে নিখোঁজ আবিদুর ইসলামের মরদেহ উদ্ধারকালে তার শরীর বিবস্ত্র অবস্থায় ছিল। গলা কাটা, পুরুষাঙ্গ কাটা, দু’ পা কাটা ও হাতের আঙগুল কাটাও ছিল। লাশের পাশ থেকে পুলিশ পড়নের শার্ট, পেন্ট, জুতা ও পকেটে থাকা ১৪৫ টাকা উদ্ধার করেছিল। তবে উদ্ধারকৃত জুতা মৃত আবিদুরের কি না এনিয়ে সন্দেহ রয়েছে পরিবারের লোকজনের। ধারনা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা যাত্রী সেজে আবিদুর ইসলাম (১৬)কে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে উর্পযুপুরি আঘাত করে খুন করে সরিষপুর এলাকার মরা কুশিয়ারা নদীতে আব্দুল গনির বাড়ি সংলগ্ন স্থানে কচুরি পেনার নীচে তার লাশ গুম করে পালিয়ে যায়। ৩ সেপ্টেম্বর সকালে পথচারী লোকদের দুর্গন্ধ লাগলে খবরটি ভাইরাল হয়। এক পর্যায়ে পুলিশে খবর আসলে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ডালিম আহমদ এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছেন। পরে খবর পেয়ে সার্কেল এসপি আবুল খয়ের এবং হবিগঞ্জ থেকে পিবিআই এর ওসি শরীফ মোঃ রেজাউল করিম এর নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনাস্থলে আসলে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত আবিদুর ইসলামের বাবা মুহিবুর রহমান পাতা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা দূর্বৃত্তের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ দীর্ঘ তদন্তে রহস্য উদঘাটন এবং মিশুক গাড়ীটি উদ্ধার করতে পারেনি।
ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও খুনিদের গ্রেপ্তার নিশ্চিত করতে বাদী পুলিশ হেড কোয়ার্টারে যে কোন গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা তদন্তের জন্য আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ হেড কোয়ার্টার ঘটনাটি আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর হওয়ায় মামলাটি হবিগঞ্জ সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব অর্পন করেন। এদিকে এলাকাবাসী নিরীহ মিশুক চালক আবিদুর ইসলাম হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার, মুল রহস্য উদঘাটনসহ মিশুক গাড়ীটি উদ্ধারের জোর দাবী জানিয়েছেন। মামলাটি সিআইডিতে যাওয়ার বিষয়টি নবীগঞ্জ থানার ওসি মো. ডালিম আহমদ নিশ্চিত করেছেন।