নবীগঞ্জ উপজেলায় গৃহবধূ রাজনা বেগম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় প্রধান আসামী স্বামীসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৯।
শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ডালিম আহমেদ গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বড় আলীপুর গ্রামের সবুজ মিয়ার ছেলে ও নিহত রাজনার স্বামী জাকারিয়া মিয়া (২৫), মৃত আনোয়ার মিয়া চৌধুরীর ছেলে সফিক মিয়া চৌধুরী (৫৬) ও তার ছেলে আকরাম চৌধুরী মাসুম (২১)।
এর আগে গত (২ ফেব্রুয়ারি) নিহত রাজনা বেগমের ভাই সুফি মিয়া বাদী হয়ে রাজনার স্বামী জাকারিয়া আহমদসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয় ।
জানা যায়- বিগত প্রায় ৬ মাস পূর্বে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড় আলীপুর গ্রামের সবুজ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া মিয়ার সাথে পশ্চিম তিমিরপুর গ্রামের মৃত আঃ রহিমের মেয়ে রাজনা বেগমের বিয়ে হয়। এরপর থেকে জাকারিয়া ও রাজনা একসাথে সংসার করে আসছিলেন। গত ১০-১২ দিন পূর্বে রসুলগঞ্জ বাজারের সফিক মিয়া চৌধুরীর মালিকানাধীন একটি বাসা ভাড়া নেন জাকারিয়া মিয়া ও তার স্ত্রী রাজনা বেগম। এরপর থেকে স্বামী-স্ত্রী ওই বাসায় বসবাস করে আসছিলেন।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে রাজনা বেগমের মা রাজনাকে দেখতে ওই ভাড়া বাসায় যান। এসময় তাদের বসবাসরত কক্ষের দরজা বন্ধ দেখে ডাকাডাকি করেন। এক পর্যায়ে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে মেয়ের রক্তাক্ত দেহ বিছনার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। এসময় তার চিৎকারে আশাপাশের লোকজন এসে পুলিশকে খবর দেয়।
খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিজ কক্ষের বিছানার ওপর থেকে গলাকাটা অবস্থায় রাজনা বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় একটি রক্তমাখা বটি দা উদ্ধার করা হয়। এঘটনার পর থেকে রাজনা বেগমের স্বামী জাকারিয়া মিয়ার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিলনা।
গত (২ ফেব্রুয়ারী) রাজনা বেগমকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে গলাকেটে হত্যা ও সহযোগিতার অভিযোগ এনে নিহত রাজনার ভাই সুফি মিয়া বাদী হয়ে রাজনার স্বামী জাকারিয়া আহমদ, ভাড়া বাসার মালিক সফিক মিয়া চৌধুরী ও তার ছেলে আকরাম চৌধুরী মাসুমসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয় ।
মামলার পর আসামীদের ধরতে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মুন্সিগঞ্জ জেলার সরাজিদখান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামী রাজনার স্বামী জাকারিয়া মিয়া (২৫) কে গ্রেফতার র্যাব-৯।
ওইদিন রাতেই র্যাব-৯ এর অপর আরেকটি আভিযানিক দল নবীগঞ্জ উপজেলার রসুলগঞ্জ বাজারে অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলার আসামী ভাড়া বাসার মালিক সফিক মিয়া চৌধুরী (৫৬) ও তার ছেলে আকরাম চৌধুরী মাসুম (২১) কে গ্রেফতার করে।
র্যাব-৯ মিডিয়া অফিসার এএসপি সোমেন মজুমদার গণমাধ্যমে প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান- প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামলার প্রধান আসামী রাজনার স্বামী জাকারিয়া হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়-
জাকারিয়া পেশায় একজন সিএনজি চালক এবং রাজনা বেগমের সাথে ৪ বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর গত বছর পারিবারিক সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সিএনজি কেনার কথা বলে যৌতুকের টাকার জন্য রাজনা এবং তার পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে চাপ দিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে যৌতুকের টাকার জন্য প্রথমে জাকারিয়া তার স্ত্রী রাজনা বেগমের হাত-পা ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলে। ভয়-ভীতি দেখায় এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। পরবর্তীতে জাকারিয়া তার শ্বশুর বাড়িতে ফোন দিয়ে টাকা দাবি করে এবং সিএনজি কেনা বাবদ টাকা না দিলে রাজনাকে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে। শ্বশুর বাড়ির লোকজন টাকা দিতে রাজী না হওয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সে তার স্ত্রীর মুখ ওড়না দিয়ে বেধে ফেলে যাতে চিৎকার করতে না পারে। পরে রান্না ঘরের ধারালো বটি-দা দিয়ে স্ত্রীর গলা কেটে হত্যা করে ঘরের বাইরে থেকে তালা দিয়ে চলে যায়। (১ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতের দিকে বাসযোগে রওনা হয়ে ঢাকায় চলে যায় জাকারিয়া। ঢাকায় নিরাপদ আশ্রয় না পেয়ে সে তার একসময়কার কর্মস্থল মুন্সিগঞ্জের লতব্দী এলাকার ইট ভাটায় আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে গমন করে। অতঃপর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত (৩ ফেব্রুয়ারী) রাত ১১ টার দিকে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার লতব্দী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় রাজনা হত্যার প্রধান আসামী জাকারিয়াকে।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ডালিম আহমেদ গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন – ইতিমধ্যে গ্রেফতারকৃত সফিক মিয়া চৌধুরী ও তার ছেলে আকরাম চৌধুরী মাসুমকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। ওই মামলার প্রধান আসামী জাকারিয়াকে কারাগারে প্রেরণের প্রস্তুতি চলছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হবে।