জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

নবীগঞ্জ সরকারী কলেজের অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধের পর মুক্ত

বিভিন্ন অনিয়ম ও দূনীর্তির অভিযোগে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুর রহমানকে প্রায় দেড় ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অধ্যক্ষ পুলিশ ও শিক্ষকদের খবর দিলে তারা এসে তালা খুলে অধ্যক্ষকে মুক্ত করে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ থেকে ১.৩০ পর্যন্ত কার্যালয়ে তালা দিয়ে অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত ( অনার্স ২য় বর্ষের ) শিক্ষার্থী সাজ্জাদুর রহমান জানান- অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অধ্যক্ষ অনার্স ১ বর্ষে ভর্তির জন্য মাসিক ৫০০টাকা করে ৬ মাসের অগ্রিম বেতনসহ সর্বমোট ৮ হাজার টাকা নিচ্ছেন। এজন্য অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি না হয়ে চলে যাচ্ছে। আগামী রবিবার ভর্তির শেষ সময়। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে।

আন্দোলনরত ( বিবিএ ২য় বর্ষের ) শিক্ষার্থী মোঃ জুবেল আহমদ জানান- অধ্যক্ষ কলেজে যোগ দিয়েই বিভিন্ন অনিয়ম শুরু করেন। এর আগে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিনা রশিদ বেতন টাকা নিয়েছেন। এ নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে সেই টাকা ব্যাংকে জমা দেন। তিনি আরও বলেন- যারা উপবৃত্তি টাকা তাদের বেতন দিতে হয় না কিন্তু তিনি কলেজে যোগদানের পর থেকে তাদেরকেও বেতনের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।

নবীগঞ্জ সরকারী কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক মোঃ আমির হোসেন বলেন- গত জুন আমাদের কলেজে সরকারী হয়। অনার্স ১ম বর্ষ ভর্তি শুরু হয় জানুয়ারী মাসে। তখন ভর্তি ফি, বেতন, পরিক্ষা ফিসহ ৮ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে অনার্স ১ম বর্ষের শেষ পর্যায়ের ভর্তি চলছে। আগামী রবিবার ভর্তির শেষ তারিখ। অধ্যক্ষ স্যার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যেহেতু এক বর্ষের ছাত্র তাই তাদেরকেও ৮ হাজার টাকা দিতে হবে। কিন্তু ছাত্র ঐক্য পরিষদের নেতারা স্যারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেইনি। তাই আজ ছাত্র ঐক্য পরিষদ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ স্যারকে অবরুদ্ধ করে। পরে আমিসহ কয়েকজন শিক্ষককে খবর দিলে আমরা গিয়ে উনাকে মুক্ত করি। পরে ছাত্রদেরকে নিয়ে বৈঠকে বসা হয়। সেখানে স্যার এক হাজার টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত দিলেও তারা মানেনি। তাদের দাবী অন্যান্য সরকারী কলেজে ৫ হাজার ৪৪ টাকা নেয়। আমাদের কলেজেও তাই নিতে হবে। শিক্ষার্থী ও স্যার নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই বিকাল ৪ টা ৩০ মিনিটে বৈঠক শেষ হয়। তবে আগামী রবিবার আবারও বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বিনা রশিদে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন নেবার বিয়য়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন- এ নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ হতে দেখেছি। আর কিছু কলতে রাজি হননি।

নবীগঞ্জ সরকারী কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক রেজাউল আলম বলেন- অধ্যক্ষ স্যার যোগদানের আগে যারা উপবৃত্তি পেতেন তাদের কাছ থেকে বেতন কোন সময় নেওয়া হয়নি। কিন্তু তিনি যোগ দিয়েই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যারা উপবৃত্তি পাবে তাদেরকেও বেতন দিতে হবে।

কলেজের পুকুর থেকে সব মাছ অধ্যক্ষ নিয়ে যান এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন- কিছুদিন পূর্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মাছ ধরে নিয়ে গেছে । তবে অধ্যক্ষ স্যারের উচিত ছিল তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। যেহেতু তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি তাতে কি মনে হয় না তিনি এই ঘটনার সাথে জড়িত এ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন- তদন্ত করলে জানা যাবে তিনি জড়িত কি না ?

এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে অবরূদ্ধ ঘটনাটি সত্য স্বীকার করে তিনি বলেন- ২০২৩ -২৪ সেশনের অনার্স ১ম বর্ষের ভর্তি শুরু হয় জানুয়ারী মাসে। বর্তমানে শেষ পর্যায়ের ভর্তি চলছে। গত জুন মাসে কলেজ সরকারী হয়। জানুয়ারীতে ভর্তিতে ৮ হাজার টাকা নেয়ো হয়েছে।তাই একই বর্ষের ছাত্র হিসাবে তাদের কাছ থেকেও ৮ হাজার টাকা নেওয়া হবে। আগে সরকারী কলেজ ছিল না তাই নিয়েছেন এখন সরকারী নির্দেশনা না মেনে কিভাবে এত টাকা নিচ্ছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন- একই বর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দুইভাবে টাকা নিতে পারব না।

বিনা রশিদে আপনি বেতন টাকা জমা নিয়েছেন এবং তা গড়মিলেরও অভিযোগ রয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- কলেজে রশিদ বই না থাকায় নেওয়া হয়েছে। হিসাবে কোন গড়মিল নেই । সব টাকাই ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে।

আপনি আসার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যারা উপবৃত্তি পায় তাদেরকেও বেতন দিতে হবে কিন্তু এর আগে এমন নিয়ম ছিল না শিক্ষার্থীদের এই অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করেই ফোন কেটে দেন। এরপর কয়েকবার উনার মুঠোফোনে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে বৃন্দাবন সরকারী কলেজ হবিগঞ্জের অধ্যক্ষ প্রফেসর সৈয়দ মোহাম্মদ ছগীর বলেন- অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি বিভাগ ভেদে ১ বছরের বেতনসহ ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকার ভিতরে নেবার নিয়ম রয়েছে। অনার্স ১ম বর্ষে বেতন কত জানতে চাইলে তিনি বলেন- মাসিক বেতন ১৮ টাকা মাত্র।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে তিনি নবীগঞ্জ সরকারী কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন।