শেখ রিদওয়ান হোসাইনঃ
নারী—আমাদের মা
নারী—আমাদের বোন
নারী—আমাদের স্ত্রী
নারী—আমাদের কন্যা
একটি নারী দিবস এসে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় নারীদের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধার কথা। নারী আছে বলেই ধরণী আজ মানুষের সুরে মুখরিত। নারী আমাদের বড় আপনজন। নারী তো তিনিই যার পায়ের নিচেই অঙ্কিত রয়েছে ‘জান্নাত’। নারী কোনো এক অদ্ভুত সুন্দর ফুল যার দাম পুরো পৃথিবী হাজার বার বিক্রি করলেও সমান কিনতে পাওয়া যাবে না।
কাজী নজরুলের সেই বিখ্যাত উক্তি, “এ পৃথিবীতে যা কিছু চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী-অর্ধেক তার নর”। এ উক্তিটির যথার্থতা বোঝা খুব সহজ! তবে নারীকে সেই ‘অর্ধেক’ কাজের মূল্য সবাই বাস্তবে কতোটা দেয়?
ছেলে যখন আম্মা বলে ডাকে, ‘মা’ তখন ছেলের ডাকার ভঙ্গি দেখেই বুঝতে পারেন উনার ছেলের কি দরকার। ভাই যখন তার বোনকে একটি নতুন পথের গাড়িতে তুলে দেয়,তখন সেই ভাইয়ের বুকফাটা চিৎকার বোঝার সাধ্যও কিন্তু কারোও নেই।
নারী তো এমনই! তারা কুসুমকোমল। তাদের অফুরন্ত আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কাছে পুরো পৃথিবীই যেনো শ্রদ্ধায় নত। নারীকে নিয়ে সাহিত্য পাড়ায় কখনোই আয়োজনের কোনো কমতি হয় নি,তবে কমতিটা ছিলো তাদেরকে দেওয়া আমাদের সম্মানে। নতুন বর যখন বিয়ের পরে চাকরি হারিয়ে ফেলে,তখন নববধূকে বোদ্ধারা ‘অপয়া’ ট্যাগ লাগাতে বিন্দুমাত্র অপেক্ষা করেন না। সন্তান পাওয়ার দীর্ঘ অপেক্ষা শুরু হলে সমাজ নারীর দিকেই বা চোখ দেয়! অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে নিয়ে যদি যুবক ছেলে পালিয়ে যায়,সমাজের ‘চুনকালিটা’ পরে মেয়ের বাবার উপর। আহা! কি অদ্ভুত সব নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ নারী।
নারী কালো! নারীর বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে! নারীকে বেশি কথা বলতে নেই! সমাজের সকল মাথা ব্যাথা এ ‘নারী’কে নিয়েই! নারীকে পাবলিক বাসে হেনস্তা করলে সেটা নারীরই দোষ। নারী চাকরি করতে পারবে তবে বেতনটা খাটো। এ সমাজে ‘নারীর’ ইচ্ছা নাই!
অথচ নারীদের কি দারুণ ইতিহাস রয়েছে ইসলামে। কি সম্মান এই ধর্ম নারীদের দিয়েছে। মেয়ে শিশু হয় বলে যখন পুরুষ শিশু চান,জানেন হাদীস কি বলে? হাদীস বলে–মেয়ে শিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক। হাদিস শরিফে আরও আছে, যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তান থাকবে; আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।
তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম__আল হাদিস। আমাদের প্রিয় নবী যখন অবসর সময় পেতেন,সংসারের কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করতেন। অথচ আমাদের সমাজে চিত্রটা ভিন্ন। স্ত্রীকে সাহায্য যদি কোনো স্বামী করেও থাকে তাকে ‘বউমুখি’ বলেও ব্যঙ্গ করা হয়।
একজন নারীর চাওয়া পাওয়া তার সম্মান। আজকের এই নারী দিবসে আমরা যেনো নতুন করে আমাদের নোংরা মানসিকতাকে উপড়ে ফেলি। ‘অপয়া’ শব্দ দ্বারা নারী জাতিকে বিভক্ত না করে তাদেরকে একটি সুন্দর পথচলার সমাজ যেনো আমরা দিতে পারি৷ শুভ বিশ্ব দিবস।