প্রতিবছরের মতো এবছরও নোবেল পুরস্কারের এই ক্যাটাগরি নিয়েই সবার আগ্রহ বেশি। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বিকালে নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে শোনা যাচ্ছে বেশ কয়েকজনের নাম। তবে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে সুইডিশ বংশোদ্ভূত দুনিয়া কাঁপানো জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থানবার্গের নাম। এছাড়া নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন, ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ, ব্রাজিলের আদিবাসী নেতা ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মী রাওনি মেতুকতিরের নামও শোনা যাচ্ছে।
নোবেল শান্তি পুরস্কারের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য মতে, এ বছর নোবেল পুরস্কারের জন্য ৩০১টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। যার মধ্যে ২২৩ জন ব্যক্তি এবং বাকি ৭৮টি প্রতিষ্ঠান। তবে গত ৫০ বছর ধরে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করার আগে মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করে না নোবেল প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার জোর সম্ভাবনা আছে গ্রেটা থানবার্গের। তার পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে অনলাইনে বাজিভিত্তিক ওয়েবসাইটগুলো বড় অঙ্কের বাজিও ধরেছে তাকে। অনলাইনে যারা বাজি ধরছেন তারা বেশ আত্মবিশ্বাসী যে এবারের শান্তির নোবেল পুরস্কারটি গ্রেটার হাতেই উঠতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে নোবেল পুরস্কারের বিকল্প হিসেবে পরিচিত সুইডেনের ‘রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন গ্রেটা। এছাড়া অ্যামনেস্টির শীর্ষ সম্মানও পেয়েছেন এই জলবায়ুকর্মী।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ভূমিকার দাবিতে ২০১৮ সালে সুইডেনের পার্লামেন্টের বাইরে অবস্থান নেওয়া শুরু করে স্কুল শিক্ষার্থী গ্রেটা থানবার্গ। তার এই অবস্থানের মধ্য দিয়ে দুনিয়াজুড়ে বেগবান হয় জলবায়ু আন্দোলন। তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে এই আন্দোলনে শামিল হয় লাখ লাখ মানুষ। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ আয়োজিত এক সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনরোধে বিশ্বনেতারা যথাযথ ভূমিকা রাখছেন না অভিযোগ করে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তোলেন এই জলবায়ুকর্মী।
এছাড়া ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে এক বন্দুকধারীর হামলার পর সাহসী পদক্ষেপ আর মহানুভবতার জন্য তিনি গোটা বিশ্বের প্রশংসা পাওয়া জাসিন্ডাকেও সম্ভাব্য বিজয়ী ভাবা হচ্ছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে মনোনয়ন পাওয়া ৭৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটিকে এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কারের সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো গোটা বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ।
তবে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্দোলনরত কিশোরী গ্রেটাকে নিয়ে অনুমান সঠিক হলে সে হবে সর্বকনিষ্ঠ নোবেল জয়ী। এখন পর্যন্ত সর্বকনিষ্ঠ নোবেল জয়ী তালিকায় নামটি আছে পাকিস্তানের নারী অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাইয়ের। ২০১৪ সালে সে যখন শান্তিতে নোবেল পায় তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। তবে জলবায়ু আন্দোলনকর্মী কিশোরী গ্রেটা থানবার্গের বয়স এখন ১৬ বছর।
তবে স্টকহোম পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মিথ তার ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি মনে করেন, এই পুরস্কারের অন্যতম দাবিদার গ্রেটা। তিনি বলেন, প্রথমত আমি মনে করি ও যা করে দেখিয়েছে তা দুর্দান্ত। আর জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারটা নিরাপত্তা ও শান্তির সঙ্গে জোরালোভাবে সম্পর্কিত।
এদিকে গ্রেটা থানবার্গ নিজে নোবেল পুরস্কার নিয়ে কী ভাবছে তা জিজ্ঞাসা করা হয়। সুইস সম্প্রচারমাধ্যম আরটিএসকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সে বলেছে, এই পুরস্কার তাদের আন্দোলনের জন্য সম্মানের। তবে তারা পুরস্কারপ্রাপ্তির আশায় এই আন্দোলন করছেন না।