১৬ বছর যাবত পর্দানশীন নারীদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদে ও ছবি ছাড়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর মাধ্যমে এনআইডি(NID) করার দাবীতে সমাবেশ।
৩০ জানুয়ারি রোজ বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটায় ‘পর্দানশীন নারী অধিকার পরিষদ’ হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মুখচ্ছবি ছাড়া নির্ভরযোগ্য শনাক্তকরণ পদ্ধতি ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর মাধ্যমে এনআইডি ও অন্যান্য পরিচয়পত্র চেয়ে সমাবেশ করেন।
সেখানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যেখানে সংবিধান অনুযায়ী ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম। সংবিধানের ৪১(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিজ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার পূর্ণ অধিকার আমাদের আছে। কিন্তু পর্দানশীন নারীরা প্রতিনিয়ত বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের মৌলিক ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শুধুমাত্র পরিপূর্ণ পর্দা মানার কারণে তাদের এনআইডি প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে, শিক্ষার অধিকার সংকুচিত করা হয়েছে এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবা পেতে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
বিগত ১৬ বছর ধরে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কতিপয় সাবেক কর্মকর্তাদের অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক নীতির ফলে বহু পর্দানশীন নারী এনআইডি পাননি। ফলে তারা জমিজমা সংক্রান্ত অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা, চাকরি, বাসাভাড়া নেওয়া, সন্তানদের স্কুলে ভর্তি, ব্যাংক একাউন্ট, ট্রেনযাত্রাসহ — ইত্যাদি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শিক্ষাক্ষেত্রেও পরিচয় যাচাইয়ের জন্য চেহারা ও ছবি মেলানোর সেকেলে পদ্ধতি চাপিয়ে দিয়ে হেনস্তার মতো ঘটনা ঘটছে, যা পর্দানশীন নারীদের জন্য চরম অপমানজনক ও ধর্মীয় বিধানের পরিপন্থী।
বক্তারা আরো বলেন, চেহারা ও ছবি মিলিয়ে পরিচয় যাচাই পদ্ধতি একটি দুর্নীতিবান্ধব পদ্ধতি, যা প্রতারণা ও জালিয়াতির সুযোগ তৈরি করে। অপরদিকে, আধুনিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাই পদ্ধতি অধিক নির্ভরযোগ্য, সুনির্দিষ্ট, নিখুঁত এবং দুর্নীতিরোধক। ব্যাংকিং, ই-পাসপোর্ট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অন্যান্য খাতেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাই ব্যবস্থাকে গ্রহণযোগ্য মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তাই এনআইডি, শিক্ষা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে পরিচয় যাচাইয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করা এখন সময়ের দাবি।
বক্তারা আরো বলেন — অনেকে জানেন না, এখনও বহু পর্দানশীন নারী জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) পাননি। এটা কোনো ছোট্টো সংখ্যা নয়, সংখ্যাটা ৩০ লাখেরও বেশি৷ অথচ তারা এই দেশেরই নাগরিক, তাদের পিতা-মাতা বাংলাদেশি, এবং তারা নিজেরাও এই দেশের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন। আমরা এমন একটি সমাজে বসবাস করছি, যেখানে নারীদের অধিকার নিয়ে অনেকে অনেক কিছুই বলেন, কিন্তু পর্দানশীন নারীদের অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে তারা নিশ্চুপ। একজন নারী যদি তার ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে চান, তাহলে কেন তাকে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে? একজন পর্দানশীন নারীর মৌলিক অধিকার সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মুখচ্ছবি ছাড়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট মাধ্যমে এনআইডির দাবী আমরা করছি।
আমরা সাংবিধানিক অধিকারের ভিত্তিতে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলব ও নিজের গোপনীয়তা বজায় রাখব, এতে কেউ বাধা দিবে কেন? উচিত ছিল আমাদের পর্দা পালন ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলাতে সাহায্য করা। আমাদের গোপনীয়তা যেনো বজায় থাকে সেই ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমরা বিগত ১৬ বছর যাবত অধিকার বঞ্চিত আছি। — বলেন বক্তারা৷
আজকের সমাবেশ থেকে পর্দানশীন নারীরা নিম্নলিখিত তিনটি দাবি উত্থাপন করছেন:
১. বিগত ১৬ বছর ধরে পর্দানশীন নারীদের এনআইডি আটকে রেখে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সাবেক নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।
২. পর্দানশীন নারীদের ধর্মীয় ও গোপনীয়তার অধিকার সংরক্ষণ করে অবিলম্বে এনআইডি ও শিক্ষার অধিকার প্রদান করা। পরিচয় যাচাইয়ে চেহারা ও ছবি মেলানোর সেকেলে পদ্ধতি বাতিল করে আধুনিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করা।
৩. ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার সময় নারীদের জন্য নারী সহকারী নিশ্চিত করা।
উপস্থিত বক্তারা আরো বলেন, আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবিলম্বে আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করবে। অন্যথায় দেশব্যাপী ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও পর্দানশীন নারীরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে, ইনশাআল্লাহ।
‘পর্দানশীন নারী অধিকার পরিষদ’এর পক্ষে আহ্বায়ক আহমদ নিশা মীর ও তার দুই সহকারী সমাবেশ শেষে স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও জেলা শিক্ষা অফিসারের বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।