জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

ফয়ছল চৌধুরী যাকে নিয়ে গর্ব করবে বাঙালি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম

আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে আমি যে এসেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে। এসেছি আমার পেছনে হাজার চরণচিহ্ন ফেলে শুধাও আমাকে ‘এতদূর তুমি কোন প্রেরণায় এলে’?

গল্পটা সব সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়ার। এক বাঙালির বিশ্বকে জয় করার। গৌরবের, অহংকারের। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে স্কটল্যান্ড পার্লামেন্টের সদস্য হওয়ার। গল্পটা বাঙালির। গল্পটা বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের সন্তান ফয়ছল চৌধুরীর। স্কটিশ পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশি সদস্য। তার জন্ম হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বদরদি গ্রামে।

ইকুয়ালিটি অ্যান্ড হিউম্যান রাইট অ্যাকটিভিস্ট ফয়ছল চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে লেবার পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। লেবার পার্টি থেকে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত ওয়েষ্ট মিনস্টার পার্লামেন্ট নির্বাচনে এডিনবরা সাউথওয়েস্ট আসনে লড়াই করেন ফয়ছল চৌধুরী।

এ ছাড়া ২০১৪ সালে স্কটিশ রেফারেন্ডাম চলাকালীন ‘বাংলাদেশিজ ফর বেটার টুগেদার ক্যাম্পেইন’-এর সমন্বয়কারী ছিলেন তিনি।

ঐতিহাসিক গণভোট এবং অন্যান্য মূলধারায় রাজনৈতিক কর্মকান্ডে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটিকে যুক্ত করতে রয়েছে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা।

ব্যবসার পাশাপাশি পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী তরুণ বয়সেই শুরু করেন স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এডিনবরা অ্যান্ড লোদিয়ান রিজিওন্যাল ইকুয়ালিটি কাউন্সিলের (এলরেক) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিভিন্ন সংখ্যালঘু কমিউনিটির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার জন্য ২০০৪ সালে ব্রিটেনের রানি কর্তৃক ‘এমবিই’ খেতাবে ভূষিত হন তিনি।

IMG 20240121 WA0309
ফয়ছল হোসেন চৌধুরীর জন্ম হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার ৯নং বাউসা ইউনিয়নের বদরদি গ্রামের ঐতিহ্যবাহী চৌধুরী বাড়ীতে। তার বাবার নাম গোলাম রব্বানী চৌধুরী এবং মাতার নাম রোকেয়া চৌধুরী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সম্মানিত সদস্য ও হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জননেতা ডাক্তার মুশফিক হুসেন চৌধুরীর নাতি, বাউসা ইউনিয়নের বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব জুনেদ হোসেন চৌধুরীর বড় ভাই।

IMG 20240121 WA0324

হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে বাবা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গোলাম রাব্বানী চৌধুরীর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান ফয়ছল চৌধুরী।

IMG 20240121 WA0272

পরিবারের সঙ্গে প্রথমে ম্যানচেস্টার এবং পরে স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরায় বসবাস শুরু করেন। তিনি এডিনবরা শহরের নিউ টাউন এলাকায় বেড়ে ওঠেন। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বাবা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে বড় ছেলে হিসেবে তরুণ বয়সেই পরিবারের হাল ধরেন ফয়ছল চৌধুরী।

তখন থেকেই যুক্ত রয়েছেন পারিবারিক ক্যাটারিং ব্যবসায়। ব্যবসার পাশাপাশি পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী তরুণ বয়সেই শুরু করেন স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম। ২০১৭ সালে ব্রিটেনের জাতীয় নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থী হয়ে এডিনবরা সাউথ ইস্ট আসনে লড়াই করেন ফয়ছল চৌধুরী।

 

এর আগে যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীন হওয়ার প্রশ্নে ২০১৪ সালে স্কটল্যান্ডে গণভোটের সময় ‘বাংলাদেশিজ ফর বেটার টুগেদার ক্যাম্পেইন’ এর সমন্বয়কারী ছিলেন ফয়ছল চৌধুরী। মূলধারার রাজনীতিতে স্থানীয় বাংলাদেশিদের যুক্ত করতে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।

মামা ড. ওয়ালী তসর উদ্দিনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কমিউনিটি ওয়ার্কের হাতেখড়ি হয় ফয়ছল হোসেন চৌধুরীর। দীর্ঘদিন ধরে এডিনবরা অ্যান্ড লোদিয়ান রিজিওন্যাল ইকুয়ালিটি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বাংলাদেশি কমিউনিটি ছাড়াও বিভিন্ন সংখ্যালঘু কমিউনিটির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নেও ভূমিকা রয়েছে তার।

করোনা মহামারিতে এডিনবরায় বসবাসরত অভাবগ্রস্ত এথনিক মাইনরিটি পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্যদ্রব্য বিতরণের এক ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ হাতে নেন ফয়ছল চৌধুরী। তার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে এলরেক এর উদ্যোগে ‘ফুড সাপোর্ট’ প্রকল্পের আওতায় প্রতি সপ্তাহে ৫৫ থেকে ৬৭ অসহায় পরিবারকে জরুরি খাবার পৌঁছে দেয়া হয়। তার এই কাজ স্থানীয় কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রশংসিত হয়।

IMG 20240121 WA0247

গত বছরের ৬ মে স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরার লোথিয়ান অঞ্চল থেকে স্কটিশ লেবার পার্টির প্রার্থী হিসাবে জয়ী হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফয়ছল চৌধুরী। গ্রেট ব্রিটেনে মূলধারার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটিকে যুক্ত করতে ফয়ছল চৌধুরী অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি স্কটিশ মূলধারার নানাবিধ কর্মকান্ডে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন।

IMG 20240121 WA0181

তিনি ক্লাইমেট ইমার্জেন্সি স্কটল্যান্ডের চেয়ার, এডিনবরা স্লেভারি অ্যান্ড কলোনিয়াল লেগাসী রিভিউ গ্রুপের সদস্য, মিউজিয়াম অ্যান্ড গ্যালারিস স্কটল্যান্ডের বোর্ড মেম্বার, ইএসএমএসের ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ডাইভার্সিটি টাস্ক ফোর্সের অ্যাডভাইজার এবং ড্রামন্ড হাই স্কুল প্যারেন্ট কাউন্সিলের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। স্কটল্যান্ডের বৃহত্তম মাল্টিকালচারাল আয়োজন এডিনবরা মেলার প্রতিষ্ঠাকালীন ডিরেক্টর ফয়ছল চৌধুরী গিল্ড অব বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টার ইন স্কটল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ সমিতি এডিনবরার চেয়ারম্যান, কাউন্সিল অব বাংলাদেশিজ ইন স্কটল্যান্ডের (সিবিএস) সাধারণ সম্পাদক এবং যুক্তরাজ্য নবীগঞ্জ এডুকেশন ট্রাস্টের ট্রাস্টি মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সাইক্লোন আপিল এবং ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সাইক্লোন সিডর আপিলে তিনি তহবিল সংগ্রহ ছাড়াও দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘সেন্ট কলম্বাস হসপাইস’ লিউকেমিয়া ও ক্যান্সার আপিলসহ ‘ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন’ এর জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছেন ফয়ছল চৌধুরী।

 

স্কটিশ মূলধারায় বাংলাদেশি কমিউনিটির ভাবমূর্তি তুলে ধরতে ফয়ছল চৌধুরী সব সময় সদা তৎপর থাকেন। তার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে প্রথমবারের মত স্কটল্যান্ডে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়, যার পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল সিটি অব এডিনবরা কাউন্সিল।

IMG 20240121 WA0303

এ উপলক্ষ্যে সেদিন স্কটিশ পার্লামেন্টে একটি পার্লামেন্টারি মোশনও উত্থাপন করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ সমিতির উদ্যোগে ২০১২ সালে স্কটিশ পার্লামেন্টে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়।

 

 

ফয়ছল চৌধুরী এ মাটির গর্বিত সন্তান। তিনি আমাদের ইতিহাস, আমাদের অনুপ্রেরণা, আমাদের শক্তি, আমাদের আর্দশ । তেজোদৃপ্ত অঙ্গীকারে, বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। প্রমাণ করেছেন এদেশের সন্তানরা অনুপ্রেরণা হতে পারে সবার, নেতৃত্ব দিতে পারে বিশ্বকে।

IMG 20240121 WA0006

তিনি তাঁর কাজে, কর্মে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন আমাদের সব থেকে বড় পরিচয়- পরিচয়ে আমি বাঙালি, আমার আছে ইতিহাস গর্বের-কখনোই ভয় করিনাকো আমি উদ্যত কোনো খড়গের। একই হাসিমুখে বাজায়েছি বাঁশি, গলায় পরেছি ফাঁস; আপোষ করিনি কখনোই আমি- এই হলো ইতিহাস।