হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে মেধাবী ছাত্রী তামান্না আক্তারের জিপিএ-৫ পেয়েও অর্থের অভাবে কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
এক দিন মুজুর পিতার সন্তান মেধাবী তামান্না আক্তার কলেজে ভর্তি হতে না পারলে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন তার স্বজনরা।
জিপিএ-৫ বা গোল্ডেন-এ প্লাস পেয়ে ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ থাকা স্বত্তেও ভর্তির অর্থ জোগাড় করতে না পেরে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের প্রহর গুনছে তামান্না আক্তার নামের ওই মেধাবী শিক্ষার্থী।
জানা যায়, তামান্না আক্তার বানিয়াচং উপজেলা সদরের ১নং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মজলিশপুর গ্রামের হতদরিদ্র দিন মুজুর মো: সিতু মিয়ার কন্যা ও বানিয়াচং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
তামান্নার বাবার নিজস্ব কোন বাড়িঘর নেই। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে নিজের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।
তামান্নার বাবা যেদিন দিন মুজুরী করে আয় করতে পারেন সেদিন পরিবারের সবার ভাত জুটে,নয়তোবা সবাইকে উপোস থাকতে হয়।
হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান তামান্না আক্তার ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখা চালিয়ে আসছিলেন।
এসএসসি পর্যন্ত শুধু মনের জোরে পড়ালেখা চালিয়ে ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হয়েছেন।
অদম্য ইচ্চাশক্তি আর দৃঢ় মনোবলই ভালো ফলাফল করতে সহায়তা করেছে ওই মেধাবী শিক্ষার্থীকে।
তামান্না আক্তারের পিতা মো:সিতু মিয়া জানান, ছোটবেলা থেকেই আমার এই মেয়ে পড়ালেখার প্রতি খুবই আগ্রহী।
কিন্তু টাকার অভাবে কিছুই দিতে পারিনি। অধিকাংশ দিনই না খেয়ে স্কুলে যেতো। পড়াশুনা ছাড়া তাদের কোনো চাহিদা নেই। নিজ মেধাগুণে এ পর্যন্ত আসতে পেরেছে। আমার সহায় সম্বল বলতে কিছুই নেই। ঘর বাড়ি কিছুই নেই।
প্রতিবেশীর বাড়িতে নিজের পরিবার নিয়ে বসবাস করতেছি। মেয়েটি এখন কলেজে ভর্তি হবে কিন্তু খরচ চালানের সাধ্য আমার নাই।
৫ মেয়ে সহ ৭ জনের পরিবারের ভরণপোষন অনেক কষ্টে আর ধার-দেনা করে চালাতে হয়।
আমি সরকার ও বিত্তবান মানুষের কাছে হাত পেতে বলতে চাই আমার মেয়েটিকে আপনারা সাহায্য করেন। সে একদিন মানুষের মত মানুষ হয়ে এই সমাজেরই উপকার করতে পারবে।
এ ব্যাপারে মেধাবী শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার জানান, এ পর্যন্ত পড়ালেখা করতে প্রচুর দুঃখ-কষ্ট আর সংগ্রাম করতে হয়েছে দারিদ্রতার বিরুদ্ধে।
আমার বাবার নিজস্ব কোন থাকার জায়গা ও বাড়িঘর নেই।
আমাদের পরিবারে প্রতিদিন তিনবেলা খাবার জুটেনা।
যেদিন বাবা দিন মুজুরী করে টাকা রোজগার করতে পারেন, সেদিনই শুধু খাবার জুটে।
প্রতিদিন পায়ে হেটে বাড়ি থেকে স্কুলে যেতাম।
ভালো কোন জামা ছিল না।
আমি আরও পড়ালেখা করতে চাই। নিজের পরিবারের অর্থকষ্ট ছাড়া পড়ালেখায় কোনদিনই আমি পিছিয়ে ছিলাম না।
তাই আরও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই।
তবে আমার বাবা-মায়ের পক্ষে আমার পড়ালেখা চালানো আর সম্ভব না।
কিছুদিন পরই কলেজে ভর্তি হতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন।
ভর্তি ও বই কেনার টাকা যোগাড় করতে না পারলে আমার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে। আমাকে সরকারের পক্ষ থেকে খরচ দিয়ে হলেও আমার পড়ালেখা চালানোর জন্য আমি দাবি জানাচ্ছি।
তামান্না সম্পর্কে জানতে তার স্কুল বানিয়াচং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার খানম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তামান্না আক্তার অত্যন্ত দরিদ্র অসহায় পরিবারের সন্তান।
আমরা আমাদের বিদ্যালয় থেকে সব সময় আর্থিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি আমাদের সাধ্যমত।
ইতিমধ্যে তার এক বড় বোন আমাদের বিদ্যালয় থেকে জিপিএ পেয়ে বর্তমানে হবিগঞ্জ কলেজে পড়ালেখা করছে।
আমি চাই আপনাদের সঠিক লিখনির মাধ্যমে মেধাবী তামান্নাসহ এমন আরও হাজারো তামান্না আক্তার যেন উপকৃত হয়।