আকিকুর রহমান রুমন:- হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে রাস্তায় গেইট ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের ঘন্টাব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ২০জনের মতো আহত হওয়ার পাওয়া গেছে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় পরিস্থিতি সামাল দেন বলে জানা যায়। আহত রমিজ উল্লা(৬৫)আলী আমজদ(৪৫)মিয়া,মোবাশ্বির (৩২)মিয়া,
স্বাধীন(২৫)মিয়া, মোহাদ্দিস (২৪)মিয়া, মোজাক্কির (২২)মিয়া, শাহেদ(২৮) মিয়া,জাহেদ (২৭)মিয়া, কাউছার(২২)মিয়া,ফজলুর রহমান(৫০) মোবারক(১৯)মিয়া,সুমন আলী(২২) আলী(৫০)মিয়া,মঞ্জিল(৪০)
মিয়া, জাকারিয়া (২৫)মনিরুল (৩০)সাইদুল (৩২)সাইদি (২২)শাহিন (২০)মিয়া ও মহিলাসহ আরও বেশ কয়েকজনকে বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি সহ বিভিন্ন প্রাইভেট ও প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়াও গুরুতর আহত রমিজ উল্বা(৬৫) ও আলী আজমত(৪৫) মিয়াকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে।
২০জুন (বৃহস্পতিবার) হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলা সদরের ৪নং দক্ষিণ পশ্চিম ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিয়া পাড়া মহল্লায় রাস্তার গেইট ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে দুপুর দেড়টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত দু’পক্ষের লোকজনের মধ্যে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়,
বাসিয়া পাড়া মহল্লার ৪০ থেকে ৫০টি ঘরের লোকজন তাদের পূর্ব পুরুষদের ব্যবহারকৃত একটি দৈনন্দিন চলাচলের রাস্তা ব্যবহার করে আসছিলেন কিন্তু এই রাস্তাটির কিছু জায়গা এই ওয়ার্ডের সাবেক(মেম্বার)নুরুল ইসলাম মিয়ার কাগজ পত্রের জায়গা বলে তিনি দাবী করে আসছিলেন।
এনিয়ে মূলত দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিলো এই দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে।
এমনকি গত রোজা ঈদেও এই রাস্তা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং নুরুল ইসলাম মেম্বারের লোকজনের দ্ধারাতে প্রতিপক্ষের লোকজন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
সেই সংঘর্ষ এবং রাস্তা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মামলা মোকদ্দমা চলে আসছিলো।
মেম্বার নুরুল ইসলাম মিয়া ও তার মেয়ে বাদী হয়ে নারী নির্যাতন মামলাসহ ২টি মামলা করেন প্রতিপক্ষের লোকজনের উপর।
অপরদিকে পূর্বের সংঘর্ষে আহত হওয়ার ঘটনাসহ প্রতিপক্ষের ছাবু আলী ও ইরিছ উল্লাহ বাদী হয়ে মেম্বার পক্ষের লোকজনকে আসামি করে দু’টি মামলা করেন।
বর্তমানেও উভয় পক্ষের মামলা চলমান রয়েছে বলেও জানা যায়।
এদিকে এসব ঘটনা নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন জানান, ১৫/২০বছর পূর্বে মেম্বার থাকাকালীন সময়ে তাদের পূর্ব পুরুষের ব্যবহার করা কাগজের রাস্তাটি মেম্বার দুই কাগজ তৈরী করে তার নামে করে নেয় কিন্তু এটা অবশেষে আমরা কাগজ পত্র ঠিকটাক করিয়ে আমাদের নামে করিয়া নেই।
এমনকি মেম্বার নুরুল ইসলাম মিয়ারও সাক্ষর রয়েছে আমাদের রাস্তায় চলাচলের কাগজের মধ্যে।
যার কারণে এই রাস্তাটি শরিফ উদ্দিন সড়কের সাথে গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে।
আমরা সবাই মিলে সেখানে একটা গেইট তৈরী করি কিন্তু গত ১৭জুন সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহার ঈদের দিন থেকে লাগাতর ৩দিন ধরে বৃষ্টি থাকায় আমাদের লোকজনের কোন চলাচল হয় নাই এই রাস্তা দিয়ে।
আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে মেম্বারের নেতৃত্বে তার লোকজন আমাদের গেইটটা ভেঙে ফেলে।
তাদের এমনটা কারণ জিজ্ঞেস করতে গেলে মেম্বার পক্ষের লোকজন আমাদের উপর চড়াও হয়।
এসময় আমাদের লোকজনও নিজেদের আত্মরক্ষার্থে তাদের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করি।এসময় উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
অন্যদিকে সংঘর্ষের খবর পেয়ে আশপাশের এলাকার লোকজন সামাল দিতে আসেন।
তাদের কাছ থেকে পাওয়া সূত্রে জানা যায়, উভয় লোকজনের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষে নেতৃত্ব দেন,আব্দুল হাই,আলী মিয়া,রাসেল মিয়া,মঞ্জিল মিয়া,ফজলু রহমানসহ তাদের লোকজন।
তারা সবাই একত্রিত হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র সহকারে হাঁকডাক ছেড়ে মেম্বারের লোকজনের উপর চড়াও হয়।
এসময় নুরুল ইসলাম মেম্বার পক্ষের শানুর মিয়া,
শাহজাহান মিয়া,হাফিজুল মিয়া, জাকারিয়া মিয়া,
লিংকন মিয়া,
মনিরুল মিয়া, রিহাদ মিয়া,রিয়াজ মিয়া, সারওয়ার মিয়া,সাইফুল মিয়া, জীবন মিয়া,কবির মিয়া,ডালিম মিয়াসহ তাদের লোকজনও দেশীয় অস্ত্র সস্র নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর ঝাপিয়ে পড়েন।
এতে উভয় পক্ষের প্রায় দেড় ঘন্টার মতো সংঘর্ষ চলে।
এমনকি তাদের সংঘর্ষ চলাকালে ইটপাটকেল ও দেশীয় অস্ত্র টেটা ফিকলের ব্যবহার বেশি হয় বলেও জানান তারা।
সংঘর্ষের পর নুরুল ইসলাম মেম্বারের লোকজন জানান,এখানে তাদের কোন রাস্তার কাগজ পত্র নেই। বরং মেম্বার তার নিজের কাগজের জায়গা দান করেছেন তারা ব্যবহার করার জন্য।
এমনকি ম্যাপের মধ্যেও এদিকে কোন রাস্তা নেই বলে জানান তারা।
এই রাস্তাটা একটা ইস্যু , মূলত প্রতিহিংসা মূলক ৪নং ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ার মিয়ার ইন্ধনের নেতৃত্বে ঐ এসব হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বলেন, আমাদের উপর এই হামলার মূল ইন্ধন দাতা হচ্ছে চেয়ারম্যান এবং তিনি ঐ এই সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটিয়েছেন।
কারণ নুরুল ইসলাম মেম্বারসহ আমরা সকল আত্বীয় স্বজন সবাই তার বিরুদ্ধে কাজ করেছিলাম বলেই তিনি এমনটা করে তার জেদ মেটাচ্ছেন।
আমরা সাবেক চেয়ারম্যান রেখাছ মিয়ার পক্ষে নির্বাচনে অংশ নিয়ে কাজ করেছিলাম।
আর রেখাছ মিয়া পরাজয় করার পর থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ার মিয়া আমাদের উপর একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছেন।
তাদেরকে তিনি অন্যদিকে তাদের চলার জন্য নতুন একটা রাস্তা নির্মান করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাদেরকে ব্যবহার করে যাচ্ছেন।
এমন অভিযোগ করার পর ৪নং দক্ষিণ পশ্চিম ইউপির চেয়ারম্যান মোঃআনোয়ার মিয়ার সাথে মুঠোফোনে রাতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে,তাহার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাম্বারে সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে সংঘর্ষের সর্বশেষ জানতে বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি)মোহাম্মদ দেলোয়ার হুসাইন এর সাথে মুঠোফোনে রাত ১০টা ৫২মিনিটে যোগাযোগ করা হলে তিনি এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,সংঘর্ষ সামাল দেওয়ার পর থেকে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
সংঘর্ষ চলাকাল থেকে এই পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি এবং কোন পক্ষ হতে থানায় কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি।