হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় ঘটে যাওয়া মা ও শিশুকন্যা খুনের রহস্য উন্মোচনে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে ব্যাপক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে স্থানীয় পুলিশ। তাদের সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে যে কোন মুহূর্তে ঘটনার বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি সূত্র।
প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে ধর্ষণের পরই এ ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে খুন হওয়া বহুতল ভবনের ২য় তলার ভাড়াটিয়া ও বাহুবলের দ্বিগাম্বর বাজারের কাঁচামাল আড়তের শ্রমিক আমির আলীকে কড়া নজরে রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার (18-03-2021) ভোর সকালে পুলিশ এর একটি টিম দ্বিগাম্বর বাজারের একটি তিনতলা ভবন থেকে ভবনটির ভাড়াটিয়া সঞ্জিত দাশ এর স্ত্রী অঞ্জলী মালাকার (৩৫) ও কন্যা পূজা দাশের (০৯) লাশ ঘটনা স্থল থেকে উদ্ধার করে। সঞ্জিত দাশ স্থানীয় দ্বিগাম্বর বাজারের সবজি ব্যবসায়ী।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন তারা মিয়া ও স্থানীয় দ্বিগাম্বর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, “ উক্ত তিনতলা ভবনের ৩য় তলায় স্ত্রী-কন্যা নিয়ে সবজি ব্যবসায়ী সঞ্জিত দাশ এবং ২য় তলায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন সবজি আড়তের শ্রমিক সিলেটের বাসিন্দা আমির আলী। ”
রিপন আহমেদ নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “ বৃহস্পতিবার সকালে ওই ভবনের নিকটবর্তী ক্ষেতে ২য় তলার বাসিন্দা আমির আলীকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে আমরা তাকে উদ্ধার করে বাহুবল হাসপাতালে পাঠাই। এর কিছুক্ষণ পর ৩য় তলার বাসিন্দা সঞ্জিত দাশের কাছ থেকে জানতে পারি কে বা কারা তার স্ত্রী-কন্যাকে গলা কেটে হত্যা করেছে। ”
শুক্রবার বিকাল ৪টায় উপজেলার লামাপুটিজুরী শশ্মানঘাট এলাকায় নিহত মা-মেয়ের লাশের দাহ সম্পন্ন হয়েছে। দাহ অনুষ্ঠানে স্থানীয় পুজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
দাহ শেষে সঞ্জিত দাশ বলেন, “ আমি শতভাগ নিশ্চিত ২য় তলার বাসিন্দা আমির আলী-ই এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। ঘটনার রাত ৪টা ৪৩ মিনিটে আমির আলী আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, তার ঘর চুরি হয়েছে, ঘরে থাকা সেলাই মেশিনসহ সব চোররা নিয়ে গেছে। চোরের ভয়ে সবাই তার বাসায় গেলেও আমার স্ত্রী যায়নি। ”
তিনি আরো বলেন, “ দরজার পাশে আমির আলী ও তার সহযোগিদের আনাগুণা টের পেয়ে আমার স্ত্রী ওই রাত সাড়ে ৩টার দিকে আমাকে ফোন দিয়ে বলেছিল আমি যেন তাড়াতাড়ি ফিরে আসি। বাসায় তার ভয় লাগছে। উত্তরে আমি বলেছিলাম, এতদূর থেকে আমি কিভাবে আসব। এটাই তার সাথে আমার শেষ কথা। ”
নিহত মা-মেয়ের ময়না তদন্তকারী বাহুবল মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর কবির বলেন, অঞ্জলী মালাকারের গলা ও গলার দুইপাশে কাটা, দুই গালে এবং পেটের দুইদিকেও আঘাত ছিল। তবে শিশুটির শুধু গলা কাটা ছিল।