শীতার্ত মানুষের কম্বল বিতরণ, করোনায় কর্মহীন নিন্ম আয় হতদরিদ্রের খাদ্য সামগ্রী নিজ গাড়ীতে নিয়ে বেড়িয়েছেন। শীতার্ত কিংবা ক্ষুধার্ত মানুষের যেখানে খবর পেয়েছেন সেখানে ছুটে গেছেন। নিজ হাতে তুলে দিয়েছেন খাদ্য সামাগ্রী, গায়ে জড়িয়ে দিয়েছেন উষ্ণ কম্বল। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে নিজেও হয়েছেন আক্রান্ত। অদম্য পরিশ্রমী, প্রচার বিমুখ, শিক্ষানুরাগী, সৎ সাহসী ও দক্ষ একজন জেলা প্রশাসক ছিলেন মোহাম্মদ কামরুল হাসান।
হবিগঞ্জে যোগদানের পর তিনি উপলব্দি করেন শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে এ জনপদ। জেলা শহরে মাত্র দুটি সরকারী বিদ্যালয়ের উপর সকলের চাপ। এ দুটি স্কুলে প্রতি বছর ৩য় ও ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ছাত্রছাত্রী ভর্তির জন্য হাজার হাজার তদবির আসে। মন্ত্রী, উচ্চ পদস্থ আমলা, গন্যমান্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তি কেউ বাদ যান না। এসব তদবির রক্ষা করা সম্ভব হয় না। এতে হিমশিম খেতে হয়। অনেকের বিরাগ ভাজন হতে হয়। এসব চিন্তা করে বিকল্প পথ খুঁজেন জেলা প্রশাসক।
তিনি বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলটি হাই স্কুলে উন্নত করার উদ্যোগ গ্রহন করেন। কোন সরকারী বরাদ্দ নেই অথচ আত্মবিশ্বাস ও মনোবলকে পুঁজি করে নেমে পড়েন। বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তির সাহায্য ও কাবিখা প্রকল্পের সামান্য টাকা দিয়ে প্রথমে বিয়াম স্কুলের সীমানা দেয়াল নির্মান করেন। এর পর ৫ তলা ভবনের নির্মান কাজ শুরু করেন। এ কাজের পালিং শেষে বেইজ নির্মান কাজ চলছে। এ কাজের জন্য মনে অনেক কষ্ট নিয়ে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসক।
কোন এক প্রবাসী বিয়াম স্কুলের জন্য আর্থিক সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তাকে নিরুৎসাহী করেছেন স্থানীয় বিশেষ মহল। জেলা প্রশাসকের উদ্দোগে গত দু বছরে বিয়াম স্কুলের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। শেখ রাসেল ডিজিটাল ক্লাস রুম, অনলাইন রেকর্ডিং ক্লাসরুম, বাংলা ভার্সন চালু হয়েছে এ স্কুলে।
এদিকে হবিগঞ্জে প্রথম কিন্ডার গার্টেন দি রোজেস স্কুলটি প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিল। এর হাত থেকে রক্ষার জন্য তিনি স্কুলটি কে হাই স্কুলে উন্নিত করে জেলা কালেক্টরেট স্কুল নামকরণ করেন। ঐ স্কুলে ৪টি শ্রেণী কক্ষের সেমি পাকা একটি ভবন নির্মান কাজ চলছে। স্কুলটিতে বর্তমানে প্রান ফিরে পেয়েছে।
হবিগঞ্জে একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মানের দাবি দীর্ঘ দিনের। মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জেলা প্রসাশক ভাষার মাসে কালেক্টরেট ভবন এলাকায় শহীদ মিনার নির্মান করে ২১ ফেব্রুয়ারী শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এর জন্য এল আর ফান্ড ও কর্মকর্তাদের একদিনের বেতন ঢেলে দেন।
১৯৫৪ সালে প্রতিষ্টিত পৌর সাধারণ পাঠাগারটি দীর্ঘদিন যাবৎ অরক্ষিত অবস্থায় পড়েছিল। জেলা প্রশাসকের চেষ্টায় এটি সংস্কার ও মেরামত করে পাঠক সেবার উপযোগী করা হয়েছে।
এদিকে কোর্ট মসজিদের তৃতীয় তলার ছাদ ঢালাইসহ সম্প্রসারণ কাজ করা হয়েছে। তাঁর প্রচেষ্টায় জেলা কলেক্টরেট ভবন, সার্কিট হাউস ও জেলা প্রশাসকের বাস ভবনে নান্দনিক গেইট নির্মান করা হয়েছে। কোন সরকারী বরাদ্দ ছাড়া শুধু ব্যক্তি উদ্দোগে প্রায় দু কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করে জেলা প্রশাসক যে নজির সৃষ্টি করে গেছেন তাঁর জন্য তিনি জেলা বাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
কেন্দীয় শহীদ মিনারে যতদিন শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে, বিয়াম কিংবা রোজেস স্কুলে যতদিন ছাত্রছাত্রীর কোলাহল থাকবে ততদিন হৃদয়ের মনি কোটায় থাকবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ কামরুল হাসান। তাঁকে কুমিল্লায় জেলা প্রাশাসক হিসেবে বদলী করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জে তিনি শেষ কর্মদিবস ব্যস্ততার মধ্যে কাটিয়েছেন। কর্মকর্তা, কর্মচারী, গন্যমান্য ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের ফুলেল শুভেচ্ছা আর ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন। বিদায়ী জেলা প্রশাসকের অসমাপ্ত কাজ পরবর্তী জেলা প্রশাসক এসে সমাপ্ত করবেন এটাই সকলের প্রত্যাশা।