এম এ মজিদঃ ১শ ৯৬ বছর আগে পর্তুগাল থেকে স্বাধীনতা অর্জনকারী ব্রাজিল শুরু থেকেই খুব মজবুত অবস্থানের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা একটি দেশ। পর্তুগাল ব্রাজিলকে একটি কলোনী হিসাবে রাখতে চেয়েছিল।
সে জন্য আর্থিকভাবে ব্রাজিলকে কোনঠাসা করে ফেলে তারা। যেমনটি পাকিস্তান বাংলাদেশকে আর্থিকভাবে পিছিয়ে রাখার ষঢ়যন্ত্র করেছিল ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান ভাগের পর ১৯৭১ সাল পর্যন্ত।
পর্তুগালের সাথে যুদ্ধ করে ১৮২২ সালে ব্রাজিল স্বাধীনতা লাভ করে। ধীরে ধীরে দেশটি এগিয়ে যায়। বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে ব্রাজিলের যত অর্জন তার মধ্যে সাম্বা নৃত্যের বাহিরে ফুটবল অন্যতম।
বাংলাদেশের আয়তনের চেয়ে প্রায় ৫৫ গুন বেশি আয়তনের ব্রাজিলে লোক সংখ্যা প্রায় ২১ কোটি। ব্রাজিলের আদম শুমারী নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।
কিন্তু বাংলাদেশের আদম শুমারী নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সেই হিসাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা আর ব্রাাজিলের জনসংখ্যা খুব কাছাকাছি হতে পারে।
আটলান্টিক মহাসাগর বেস্টিত ব্রাজিলের জনসংখ্যায় রয়েছে নানা জাতি। কালো আর সাদা সেখানে প্রায় সমান সমান। এক রোনাল্দু ছাড়া ব্রাজিলকে তামাম দুনিয়ায় বেশির ভাগ পরিচিত করেছেন কালো রা।
ব্রাজিলের সাথে সেই ছোট বেলা থেকেই সম্পর্ক। বাস্তবে না, বইয়ের মাধ্যমে। একটি নাম মুখস্ত করতে কত দিন যে লেগেছে তার কোনো ইয়ত্বা নেই। এ্যাডসন আরান্তাস দু নাসিমেন্তু পেলে।
শুকনা কালো, প্রায় বের হয়ে আসতে থাকা সুন্দর ২টি চোখ, হাফ প্যান্ট ও হলুদ টি শার্ট পরিহিত যুবকের ফুটবলে লাথি দেয়ার এক ঈর্ষনীয় ছবি এখনও চোখে ঝলমল করে ভাসে।
জাম্বুরা ফল দিয়ে ফুটবল খেলা কিংবা কাগজ মুড়িয়ে ফুটবল বানিয়ে খেলার ইতিহাস কিন্তু পেলে কে দিয়েই শুরু। এক্ষেত্রে বলা যায় নেইমার অত্যন্ত ভাগ্যবানদের একজন।
যদিও দুজনই কৃষ্ণাঙ্গ এবং দুজনের বাবাই ছিলেন ফুটবলার। ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোর পেলে জন্ম গ্রহন করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে জাতীয় দলের প্লেয়ার হিসাবে বিশ্বকাপ খেলায় অংশ গ্রহণ করেন পেলে।
অপরদিকে ১৯৯২সালের ৫ ফেব্রুয়ারী জন্ম গ্রহণ করেন নেইমার। ১৭ বছর বয়সে ২০১০ সালের বিশ্বকাপে তাকে খেলতে দেয়ার দাবী জানিয়ে ১৪ হাজার ব্রাজিলিয়ান লিখিত আবেদন করেছিল। যা ব্রাজিলের ক্ষেত্রে এক ভিন্ন ইতিহাস।
কিন্তু কোচ ডুঙ্গা সেই আবেদন পুরোপুরি রাখেননি। সাইড লাইনে তাকে খেলতে দেয়া হয়েছিল। যদিও সাইড লাইনের খেলায় ঈর্ষনীয় পারফরমেন্স করেন নেইমার।
পেলে ছিলেন বিশ্বসেরা এ্যাথলেটদের একজন। নেইমারও বিেশ্বর ৪র্থ জনপ্রিয় এ্যাথলেট। পেলে জনপ্রিয় সেন্টুস ক্লাব থেকে আসা বিশ্বসেরা ফুটবলার, একই ক্লাবে নেইমারের হাতেকড়ি।
১৯৫৮ ও ১৯৬২ বিশ্বকাপ জয়ী পেলে ১৯৯৯ সালে শত বছরের সেরা খেলোয়াড় হিসাবে পুরস্কৃত হন। এক সেশন বাদে ১৯৭০ সালে আবারও পেলের হাত ধরে বিশ্বকাপ জয় করে ব্রাজিল। এমন ইতিহাস কেউ দেখাতে পারেনি, ভবিষ্যতেও কেউ পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ফুটবলের ব্রান্ড এ্যাম্বাসেডর পেলের বাবা দনদিনহু ডিকু এবং বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত নেইমারের বাবা নেইমার সিনিয়র ছিলেন ব্রাজিলের জাতীয় দলের ফুটবলার। মাত্র ১১ বছর বয়সে শুধু খেলার জন্য নিজ জন্মভুমিকে গুডবাই জানাতে হয় নেইমারকে।
রোনালদু, জিনেদিনে জিদানে, বেকহাম, কার্লুস, রবিন এর মতো বিশ্বসেরা প্লেয়ারদের সান্নিধ্যে থেকে ফুটবল খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে সমালোচকদের চোখে কেবলই পেনাল্টি পাওয়ার জন্য অভিনয় করে ডি বক্সের ভেতরে পড়ে যাওয়া নেইমারের।
বারসেলুনা, পিএসজি, রিয়াল মাদ্রিদের মতো সেরা সেরা ক্লাবগুলো সময়ে সময়ে লুফে নেয় নেইমারকে। নেইমার যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও বিয়ে করেননি তবুও তার গার্লফ্রেন্ড ক্যারোলিনা ডেন্টার ঘরে নেইমারের রয়েছে ডেভি লুকা নামের পুত্র সন্তান।
বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের চোখ এখন নেইমারের দিকে। যেমনটা ষাটের দশকে ছিল পেলের দিকে। মাইকেল থেমারকে হয়তো অনেকেই চিনবেন না। তিনি হচ্ছেন ব্রাজিলের ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট।
অপরদিকে নেইমার জুনিয়র ব্রাজিলের ক্ষমতাহীন ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার ২৬ বছরের এক যুবক। বিশ্ববাসী কাকে বেশি চিনে?
কেউ যদি বলে ব্রাজিল আর পেলে মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ কিংবা ব্রাজিল আর নেইমার মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ তাহলে কি ভুল হবে? শুভ কামনা নেইমার।
লেখকঃ আইনজীবী ও সংবাদকর্মী