ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি গ্রেফতার
ভারতীয় পুলিশের বিধিমালা লঙ্ঘন করায় ভারতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) তাকে গ্রেফতার করা হয়। হাথরসের পথে গ্রেফতার করা হল রাহুল গান্ধীকে। তার আগে দেওয়া হল গলাধাক্কা। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ধাক্কায় মাটিতে পড়েই যান তিনি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, হাথরসের নির্যাতিতার বাড়ি যেতে না দিয়ে রাহুলকে মাঝপথ থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
তার আগে পথের মধ্যেই পুলিশের সঙ্গে রাহুলের তর্কাতর্কি শুরু হয়। কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার রাহুলকে বলে, ‘‘আপনি ১৪৪ ধারা ভাঙছেন।’’ পাল্টা রাহুল বলেন, ‘‘১৪৪ ধারার অপব্যবহার করছেন আপনারা।’’
এ দিন প্রিয়ঙ্কা গান্ধীসহ কংগ্রেস নেতা-নেত্রীদের প্রতিনিধি দলের একটি কনভয় হাথরসের পথে রওনা হয়। মাঝপথে তাদের প্রথমে আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু নাছোড় রাহুল-প্রিয়ঙ্কাও। তাঁরা স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হেঁটেই রওনা দেন হাথরসের দিকে। রাহুল-প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে ছিলেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীও। দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ হাইওয়ের উপরেই তাঁদের কনভয় আটকে দেওয়া হয়।
আগে থেকেই রাহুল-প্রিয়ঙ্কা ঘোষণা করেছিলেন হাথরসে যাওয়ার কথা। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার ১৪৪ ধারা জারি করে যোগী সরকার। তাতেও কর্মসূচি বাতিল করেননি কংগ্রেস নেতা-নেত্রীরা। রাহুল-প্রিয়ঙ্কার কনভয় গ্রেটার নয়ডায় আসতেই আটকে দেওয়া হয়। সেখানে গাড়ি থেকে নেমে উত্তরপ্রদেশ-দিল্লি হাইওয়ে ধরে হাঁটতে শুরু করেছেন তাঁরা। রাহুল প্রিয়ঙ্কাকে যেখানে আটকানো হয়েছে, সেখান থেকে হাথরসের দূরত্ব প্রায় ১৪০ কিলোমিটার। সেখান থেকে কিছু দূরে এগনোর পরেই রাহুল-প্রিয়ঙ্কাদের আটকায় পুলিশ। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। রাহুলকে গলাধাক্কা দিতেও দেখা যায় পুলিশকে। পরে গ্রেফতার করা হয় কংগ্রেস সাংসদকে।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের অজুহাত, কোভিডের কারণেই রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ জারি রয়েছে। সেই কারণেই রাহুল-প্রিয়ঙ্কার কনভয় আটকানো হয়েছে। এক পুলিশ কর্তা বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে ১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যে প্রবেশের উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছিল। সেই নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়েছে। তাঁর দাবি, রাজ্য বহু পুলিশকর্মী করোনা আক্রান্ত।
গণধর্ষণ ও নির্মম অত্যাচারে হাথরসে দলিত মহিলার মৃত্যুর ঘটনায় দেশ জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ফের জীবন্ত হয়ে উঠেছে ২০১২ সালে নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের স্মৃতি। ইতিমধ্যেই দেশের একাধিক জায়গায় হাথরসের ঘটনাকে সামনে রেখে বিক্ষোভ-প্রতিবাদে নেমেছে বিরোধী দলগুলি। বুধবার মুম্বাইতে মোমবাতি মিছিল করেন কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা। বৃহস্পতিবার কলকাতাতেও একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছে। সেই আন্দোলন আরও জোরদার করতেই হাথরস যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন দুই কংগ্রেস নেতা-নেত্রী।
অন্য দিকে ঘটনার তীব্র নিন্দা করে যোগী সরকার তথা বিজেপির বিরুদ্ধে ধারালো আক্রমণ এর কথা নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি টুইট করেছেন, ‘‘হাথরসের দলিত তরুণীকে ঘিরে এই বর্বর এবং লজ্জাজনক কাণ্ডের নিন্দার কোনও ভাষা নেই। নির্যাতিতার পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানাই। আরও লজ্জাজনক ঘটনা হল, পরিবারের কারও অনুমতি এবং উপস্থিতি ছাড়াই তরুণীর দেহ সৎকার করে দেওয়া। যারা খালি ভোটের জন্য স্লোগান দেয় আর লম্বাচওড়া প্রতিশ্রুতি দেয় তাদের আসল চেহারাটা সামনে এনে দিচ্ছে এই ঘটনা।’’
হাথরসের জেলাশাসক পি লস্কর সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে আগেই জানিয়েছিলেন, জানিয়েছিলেন, রাহুল- প্রিয়ঙ্কার সফরের কোনও খবর তাঁদের কাছে নেই। তিনি আরও বলেছেন, ‘ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি’ এড়াতে জেলার সীমানা সিল করে দেওয়া হয়েছে এবং এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে যে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছে, তার সদস্যরা এদিন নিহত তরুণীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন লস্কর।