জামাল ভুইয়ার দারুণ ফ্রি কিক লাফিয়ে ওঠা গুরপ্রিত সিংকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে গেলো। দূরের পোস্টে থাকা সাদউদ্দিন নিখুঁত হেডে খুঁজে নিলেন জাল। সল্ট লেকের গ্যালারিকে স্তব্ধ করে দিয়ে মেললেন ডানা। বাকিটা সময় দুর্দান্ত খেলা বাংলাদেশ গোল হজম করল শেষ দিকে। জয়ের স্বপ্ন ভাঙলেও ড্রয়ের তৃপ্তি নিয়ে মাঠ ছাড়ল জেমি ডের দল। খুলল পয়েন্টের খাতা।
কলকাতার ঐতিহ্যবাহী সল্ট লেক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ ও ২০২৩ সালের এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচটি ১-১ ড্র হয়েছে। বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে টানা দুই হারের পর প্রথম পয়েন্টের স্বাদ পেল ডের শিষ্যরা।
ফিফা স্বীকৃত পরিসংখ্যানে ভারতের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের ১১তম ড্র। শক্তিশালী দলটির বিপক্ষে ১৬ বছর পর জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও সুযোগ হারাল বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে সবশেষ ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে জিতেছিল তারা।
‘ভারত-ভারত’, ‘ছেত্রী-ছেত্রী’-স্বাগতিক সমর্থকদের গগণবিদারী গর্জনের মধ্যে শুরু থেকে চেনা ছকে ছিল বাংলাদেশ। উদান্ত সিং, গোলমেশিন সুনীল ছেত্রীকে কড়া পাহারায় রেখেছিলেন ডিফেন্ডাররা। রক্ষণের ডান দিকে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে ছিলেন রায়হান হাসান। বাঁ দিক দারুণভাবে সামলেছেন রহমত মিয়া। গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানাকে তাই প্রথমার্ধে কঠিন কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়নি। চতুর্থ মিনিটে সুনীলের সাইড ভলি অনায়াসেই গ্লাভসে নেন তিনি।
সপ্তম মিনিটে ডি-বক্সে ঢুকে রাহুল বাকের ট্যাকলে মোহাম্মদ ইব্রাহিম পড়ে গেলেও রেফারির সাড়া মেলেনি। চার মিনিট পর জামালের দূরপাল্লার শট, পরে তারই কর্নারে ইয়াসিনের শট থাকেনি লক্ষ্যে। প্রতিআক্রমণে ভারতকে চাপে রাখার কাজটুকু হচ্ছিল বেশ। ৩০তম মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগটি নষ্ট হয় বাংলাদেশের। আদিলের ভুলে বল পেয়ে ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা বিপলুর বাড়ানো ক্রসে জীবন পা ছোঁয়ানোর আগেই এক ডিফেন্ডার কর্নারের বিনিময়ে ফেরান।
৩৪তম মিনিটে রাহুলের থ্রোয়ে মানবীর সিংয়ের হেড দারুণ ক্ষিপ্রতায় ফিস্ট করে ফেরান রানা। একটু পর সোহেল রানার ছোট করে বাড়ানো বল ভালো জায়গায় পেলেও তালগোল পাকিয়ে সুযোগ নষ্ট করেন ভুটান ম্যাচে জোড়া গোল করা জীবন। ৪১তম মিনিটে আসে ভারতকে স্তব্ধ করে দেওয়া সেই গোল। তরুণ উইঙ্গার সাদউদ্দিনের হাত ধরে বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশ পায় প্রথম গোল।
এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন কাতারকে ড্রয়ে রুখে দিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা ভারতকে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে চাপ দিতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু সুযোগ নষ্ট হতে থাকে বারবার। ৫০তম মিনিটে ডিফেন্ডারদের ছিটকে দিয়ে ইব্রাহিমের বাড়ানো বলে জীবনের বাঁ পায়ের শট গোলরক্ষকের পায়ে লেগে ফেরে। পাঁচ মিনিট পর ইব্রাহিমের শট লাগে ক্রসবার।
ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া ভারতকে ৬০তম মিনিটে আরেক দফা হতাশ হতে হয় রিয়াদুল ইসলাম রাফির নৈপুণ্যে। সতীর্থের ফ্রি-কিকে আনাস এদাথোদিকার হেড গোললাইন থেকে হেডেই ফেরান তরুণ এই ডিফেন্ডার। রক্ষণে রায়হানকে তুলে নিয়ে বিশ্বনাথ ঘোষকে নামানোর পর ৭১তম মিনিটে জীবনের লব গুরক্রিতের মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর আদিল গোললাইন থেকে ফেরান। বল গোললাইন পেরিয়েছিল কিনা দাবি জানানো জীবনকে হলুদ কার্ড দিয়ে শাসিয়ে দেন রেফারি।
৭৬তম মিনিটে জীবনকে তুলে নিয়ে মাহবুবুর রহমান সুফিলকে নামান জেমি ডে। এরপর ইব্রাহিমের বদলি নামান রবিউল হাসানকে। অদল-বদলে তাল কাটেনি দলের। ম্যাচের লাগাম মুঠোয় রাখেন জামাল-সাদরা। ৮৭তম মিনিটে সুনীলের জোরালো শট হেডে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান ইয়াসিন। হতাশায় মুষড়ে পড়েন ভারতের সর্বোচ্চ গোলদাতা। কিন্তু ব্রেন্ডন ফেরনান্দেসের কর্নারে আদিলের বুলেট হেডে পরাস্ত হন রানা। শক্তিশালী ভারত শিবিরে ফেরে স্বস্তি। শেষ পর্যন্ত এই স্বস্তিটুকু নিয়ে মাঠ ছাড়ে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৮৩ ধাপ এগিয়ে থাকা ভারত।
বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে দ্বিতীয় ড্র করল ভারত। ওমানের কাছে হারের পর এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন কাতারের সঙ্গে ড্র করেছিল ইগর ইস্তিমাচের দল।
দুদলের এ নিয়ে ২৫ বারের মুখোমুখি লড়াইয়ে ১১টি ম্যাচ হলো ড্র। ভারতের জয় ১১টি, বাংলাদেশের তিনটি।