জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

ভিক্ষা করলে পরিবারের খাবার জোটে-নইলে সবাই উপোষ

আকিকুর রহমান রুমন, বানিয়াচংঃ

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের পরিতোষ মোদকের পৈতৃক পেশা ছিল মিষ্টান্ন তৈরি ও বিক্রি করা। খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে পেশা হিসেবে বেছে নেন মোয়া-মুড়কি,বাদাম, ছোলা বিক্রি করা। বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশোনা করা তার ভাগ্যে জুটে নাই। একটি সড়ক দূর্ঘটনায় ভেঙ্গে যাওয়া পায়ের চিকিৎসা করাতে ঘর-বাড়ি বিক্রি করে দেন।

বর্তমানে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে,এখন ভিক্ষা করছেন।
ভিক্ষা করলেই চার সদস্যের পরিবারের সবার খাবার জোটে। পরিতোষ যেদিন ভিক্ষা করতে পারেননা, সেদিন সবাইকে উপোষ থাকতে হয়।

বানিয়াচং উপজেলার ২ নম্বর ইউনিয়নের রঘুচৌধুরী পাড়া গ্রামের পরিতোষ মোদক ৩৭ বছরের যুবক। এই বয়সেই পরিতোষের দেখা হয়ে গেছে পৃথিবীর নির্মমতা। তার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে সুখের বদলে আছে কেবলই কষ্টগাথা।

প্লাস চশমা লাগিয়েও চোখে ঝাপসা দেখেন। চোখের ডাক্তার বলে দিয়েছেন অপারেশন করতে হবে। তিনবেলা খাবারই জোটেনা চেখের চিকিৎসা কিভাবে হবে?
চার সন্তানের জনক পরিতোষ। দুটি সন্তান দত্তক দিয়ে দিয়েছেন। কারন তার স্ত্রী মনিকা মোদক মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। স্ত্রীকে জিঞ্জির দিয়ে বেধে রাখলে ঘরের মধ্যে মল-মূত্র ত্যাগ করে। ছেড়ে দিলে যেখানে ইচ্ছা চলে যায়। সন্তানদের কোন খোজ-খবর রাখেনা।

ভিক্ষা করতেও লজ্জা করে বলে সব দিন ভিক্ষা করতে বের হননা। সে কারনে ওইদিন দুই বাচ্চা ও মানসিক ভারসাম্যহীন স্ত্রীকে নিয়ে উপোষ থাকতে হয়। পরিতোষের স্ত্রীর উৎপাতে বাড়ির মালিক প্রায়ই বাড়ি ছাড়ার জন্য তাগাদা দেন বলেও তিনি জানান।

কিন্ত অসুস্থ স্ত্রী ও ছোট দুটি বাচ্চা নিয়ে এতবড় পৃথিবীর বুকে পরিতোষের যাওয়ার মত নিজস্ব কোন স্থান নেই। হতাশ পরিতোষ এখন কেবলই চোখের জল ফেলে দিন দিনরাত কাটাচ্ছেন।

পঅরিতোষ মোদক বলেন,এতবড় পৃথিবীতে আমার কোন যাওয়ার জায়গা নাই। আমি সরকারের নিকট সাহায্যর আবেদন করছি। আমাকে যেন মাথাগোজার ঠাই করে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মোঃ জাহেদ মিয়া জানান, পরিতোষের ঘর-বাড়ী নেই এই কথাটি সত্য। সে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খুবই অসহায় অবস্থায় আছে। তাকে যদি সরকারিভাবে একখানা ঘরের ব্যাবস্থা করে দেওয়া যায় তাহলে খুবই উপকার হবে।

এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ বলেন, পরিতোষ মোদকের কষ্ট দূর করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো। সামনের দিনে আবার যদি গৃহহীনদের জন্য ঘর আসে তাহলে অবশ্যই তার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। আমরা তার পরিবারের পাশে খুবই আন্তরিকভাবে থাকার চেষ্টা করবো।