৮০ বছরের মো. নজিমুদ্দিনের বাড়ি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামে। ভিক্ষা করে সংসার চালান তিনি। নিজের থাকার ঘর মেরামত করার জন্য দুই বছর ধরে ভিক্ষা করে জমিয়েছিলেন ১০ হাজার টাকা। ওই টাকা দিয়ে তিনি ঘর মেরামত না করে তা দান করেছেন কর্মহীন মানুষের খাদ্যসহায়তার জন্য খোলা করোনা তহবিলে।
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার বাতিয়াগাঁও এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদের হাতে ওই টাকা তুলে দেন নজিমুদ্দিন। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঘরে থাকা কর্মহীন দুস্থ-অসহায় মানুষকে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
রোববার ইউএনও রুবেল মাহমুদের পরামর্শক্রমে খাদ্যসহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে অসহায় দরিদ্র মানুষের তালিকা তৈরি করতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দ্য প্যাসিফিক ক্লাবের সদস্য ও ইউপি সদস্যরা গান্ধীগাঁও গ্রামে যান। এ সময় ভিক্ষুক নজিমুদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ইউএনওর পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হবে জানিয়ে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র দেখতে চান তাঁরা। তখন নজিমুদ্দিন ওই তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত না করার অনুরোধ জানান।
এ সময় নজিমুদ্দিন বলেন, নিজের থাকার ঘর মেরামত করার জন্য ভিক্ষা করে ১০ হাজার টাকা জমিয়েছেন তিনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ টাকা তিনি অসহায় মানুষকে খাদ্য দেওয়ার জন্য দান করবেন।
এরপর মঙ্গলবার দুপুরে প্যাসিফিক ক্লাবের সদস্যরা ইউএনও রুবেল মাহমুদের কাছে নজিমুদ্দিনকে নিয়ে যান। এ সময় ইউএনওর হাতে ওই ১০ হাজার টাকা তুলে দেন তিনি।
নজিমুদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ভিক্ষা কইরা খাইয়া দুই বছরে এই টাকা জমাইছি। আমার ঘরডা ভাইঙ্গা গেছে। অহন আর ঘর-দরজা দিলাম না। অহন মানুষ কষ্ট করতাছে। তাই আমি এই টাকা ইউএনও সাহেবের হাতে দিলাম। এই টাকা দিয়া কিছু মানুষ হইলেও খাইয়া বাঁচুক।’
ইউএনও রুবেল মাহমুদ বলেন, বর্তমানে অনেক মানুষ কর্মহীন। এ জন্য সরকারি সহায়তার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে করোনা তহবিল খোলা হয়েছে। আজকে একজন ভিক্ষুক তাঁর ভিক্ষা করে জমানো ১০ হাজার টাকা এই তহবিলে দিয়েছেন। এটি অসহায় মানুষের প্রতি মহানুভবতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সমাজের বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান, নজিমুদ্দিনের মতো আপনারাও এ দুর্যোগের সময় অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।