হবিগঞ্জের মাধবপুরে ২০২৪ সালের এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্রের ৫টি কেন্দ্রেই পরীক্ষা কেন্দ্রের সভাপতি ও ইউএনও একেএম ফয়সাল,মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম ও কেন্দ্রসচিবদের যোগসাজসে প্রায় ৭ লক্ষ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় উপজেলা জুড়ে শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আলোচনাও সমালোচনার ঝড় বইছে।
সরেজমিন অনুসন্ধান ও একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়,বিগত মাধবপুর উপজলার এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার ৫টি কেন্দ্রের মধ্যে,মাধবপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরদের কাছ থেকে কেন্দ্র ফি বাবদ আয় হয়েছে ৩ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮০৫ টাকা। সম্ভাব্য ব্যয় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫০০ টাকা।
এতে হিসাববিহীন বা আত্মসাৎ হয়েছে ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৩০৫ টাকা।
গোবিন্দপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে আয় হয়েছে ২ লক্ষ ৪৭ হাজার ৬১০ টাকা।ব্যয়ের পরিমাণ ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। আত্মসাতের পরিমান ১ লক্ষ ২২ হাজার ১১০ টাকা।
জগদীশপুর স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে আয় হয়েছে ৬ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬৫৫ টাকা।ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা। আত্মসাৎ ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ১৫৫ টাকা।
চৌমুহনি খুর্শিদ হাই স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে আয় হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ৫২৫ টাকা।ব্যয়ের পরিমাণ ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা।
আত্মসাৎ ৬৮ হাজার ২৫ টাকা।
দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্র মাওলানা আসাদ আলী ডিগ্রী কলেজে অতিরিক্ত ২১৫ টাকা ফিসহ আয় ১ লাখ ৭১ হাজার ৬০০ টাকা।
ব্যয় হয়েছে ৮১ হাজার ৪৬০ টাকা। আত্মসাৎ হয়েছে ৯০ হাজার ১৪০ টাকা।
৫ টি কেন্দ্রে মোট আয় ১৬ লাখ ৬ হাজার ১৯৫ টাকা। একাধিক সূত্র ও বিশ্লেষনে পাওয়া তথ্যে ৫ কেন্দ্রের মোট ব্যয় ৮ লক্ষ ৬৭ হাজার ৪৬০ টাকা। হিসাববিহীন বা আত্মসাতের হওয়া টাকা পরিমান ৭ লক্ষ ৩৮ হাজার ৭৩৫ টাকা।
নিয়মমত ওই টাকা পরীক্ষা কেন্দ্রের ব্যাংক হিসাব জমা থাকার কথা থাকলেও কোন টাকাই ব্যাংক হিসাবে জমা নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমাদের কয়েকটি কেন্দ্রে বরং কিছু টাকার ঘাটতিও পড়েছে। যেমন মাওলানা আসাদ আলী ডিগ্রী কলেজের কেন্দ্রে। তার মতে পরীক্ষা কেন্দ্রে আর্থিক কোন নিয়ম-দুর্নীতি হয়নি।
জানা যায়,এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মানবিক শাখার কেন্দ্র ফি ৪৮৫ টাকা আর বিজ্ঞান বিভাগের ফি ৫১৫ আর মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার কেন্দ্র ফি ৪৩৫ টাকা।কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রের ডিওটি করা শিক্ষকদের প্রতিদিন ১৫০-২০০ টাকার বেশি দেওয়া হয় না।
চৌমুহনী খুর্শিদ স্কুল এন্ড কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব মোহন মিয়া জানান,পরীক্ষার হলে ডিউটিতে শিক্ষকদের আমরা ২০০ টাকা করে সম্মানি দিয়েছি। ইউএনও স্যারকে আমরা একটি অংশ সম্মানী দিয়েছি। এসব দিয়ে দিয়ে অবশিষ্ট কোন অর্থ ফান্ডে থাকে নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছু পরীক্ষার হলে ডিউটি করা একজন হাই স্কুলের শিক্ষক জানান,লক্ষ লক্ষ টাকা পরীক্ষা কেন্দ্রে উত্তোলিত হয়। কিন্তু আমাদের দেয়া হয় ১৫০-২০০ টাকা। যাওয়া আসার খরচ ও দুপুরে খাওয়া বাবদ আমাদের আরো ঘাটতি দিতে হয়। আর বিপুলসংখ্যক টাকা এরা আত্মসাৎ করে লুটেপুটে খাচ্ছে।ইউএনও ও শিক্ষা কর্মকর্তা এসবের ভাগ নিয়ে থাকেন।এই সব কেন্দ্রেই কম বেশি নকল চলে।এসবও নকলের অন্যতম কারণ।এসব অনিয়ম নিয়ে লেখালেখি করার কারণে স্থানীয় এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে মাধবপুরের ইউএনও একেএম ফয়সালকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও ফোন রিসিভ হয়নি।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রভাংশু সোম মহানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,বিষয়টি এই খতিয়ে দেখা হবে। অনিয়মে কোন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্ট থাকলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।।