এস. এম. সুরুজ আলীঃ হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম-পিপিএম) এর বিদায় ও নবাগত পুলিশ সুপার এস.এম. মুরাদ আলীর আগমন উপলক্ষে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। আজ দুপুরে পুলিশ লাইন্সে জেলা পুলিশের উদ্যোগে এ সংবর্ধনা দেয়া হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) শৈলেন চাকমা সভাপতিত্বে এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজা আক্তার শিমুলের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, হবিগঞ্জ ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ রঞ্জন, সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার আবুল খয়ের, সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (মাধবপুর সার্কেল) মহসীন আল-মুরাদ, হবিগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এসএম সুরুজ আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ ছানু মিয়া।
বক্তব্য রাখেন ডিআইওয়ান সৈয়দুল মোস্তফা, কোর্ট ইন্সেপেক্টর মোঃ আনিসুর রহমান, টিআই অ্যাডমিন মোঃ হোসেনুজ্জামান, আরআই মোঃ রফিকুল ইসলাম, ওসি কন্ট্রোলরুম মাসুদা বেগম, হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলী, ডিবি অফিসার ইনচার্জ মোঃ আল-আমিন, মাধবপুর থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ এমরান মিয়া।
আরো বক্তব্য রাখেন, লাখাই থানার অফিসার ইনচার্জ সাইদুল ইসলাম, শায়েস্তাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ অজয় চন্দ্র দেব, নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ডালিম আহমেদ, বাহুবল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামরুজ্জামান, আজমিরীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নুরুল ইসলাম, চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আলী আশরাফ, হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি অপরেশন মোঃ নাজমুল প্রমূখ।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিদায়ী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম-পিপিএম) বলেন, হবিগঞ্জের মানুষ অত্যান্ত ভালো ও সহজ সরল টাইপের। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর সকল শ্রেণীর বিভিন্ন রাজনীতি দল, সামাজিক সংগঠন, ব্যবসায়ী, আইনজীবি, সাংবাদিকদের সাথে হবিগঞ্জের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য মতবিনিময় করেছি। বিভিন্ন স্কুল কলেজ, মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষক/শিক্ষার্থীদের সমাবেশ করেছি। এসব সমাবেশে হবিগঞ্জকে কি ভাবে দাঙ্গা মুক্ত করা যায় সেই বিষয় নিয়ে কাজ করেছি। যার ফলে হবিগঞ্জকে দাঙ্গা মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, শুধু দাঙ্গাই নয়, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, মাদককে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। করোনার এই পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করেছি। শুধু আমি নয়, আমার সকল পুলিশ সদস্য জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করছেন। সব সময় হবিগঞ্জকে পূর্ণ জেলা হিসেবে রাখার চেষ্টা করেছি। বিদায়ের মহুর্তে হবিগঞ্জবাসী তাদের ভালোবাসা দিয়ে এর মূল্যায়ন করেছেন। সেখানেই যাই না কেন সব সময় হবিগঞ্জবাসীর কথা আমার আজীবন স্মরন থাকবে। হবিগঞ্জবাসী যেন সুখে শান্তিতে থাকেন এটাই আমার কামনা।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, কনস্টেবল থেকে এসআই সকল কাজকেই আমি মূলায়ন করে তাদের সম্মানিত করেছি। আপনারা যারা অফিসার রয়েছেন তারা জুনিয়র অফিসারদের কাজের মূল্যায়ন করবেন এবং তাদের সহযোগিতা ও উৎসাহিত করবেন। নিজের দায়িত্ব যথারীতি পালন করবেন।
অনুষ্ঠানে নবাগত পুলিশ সুপার এস.এম. মুরাদ আলী বলেন, যে দেশের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে থাকে না। সে দেশে উন্নয়নও হয় না। আমাদের দেশে যেমন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তেমনি উন্নয়ন বাড়ছে।
এস. এম. মুরাদ আলী আরো বলেন, আমি মেহেরপুর জেলায় ২ বছর পুলিশ সুপার দায়িত্ব পালন করেছি। এক সময় মেহেরপুর জেলা সন্ত্রাসী প্রবল এলাকা ছিল। দায়িত্ব নেয়ার পর সেখান থেকে সন্ত্রাস মুক্ত করেছি। আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি। আমি যেখানেই যাই কেন? সেই এলাকাকে ভালো রাখাই আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য। ইনশাল্লাহ সকল সহযোগিতা নিয়ে কাজ করে হবিগঞ্জকে ভালোই রাখবো।
এ জন্য হবিগঞ্জবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা সততা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেমন তিনি নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তিনি বিভিন্ন মানবিক কর্মকান্ড করে হবিগঞ্জবাসীর মন জয় করেছেন। তা হবিগঞ্জবাসীর জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতে নবাগত পুলিশ সুপার এস. এম. মুরাদ আলীকে ফুলের তোড়া ও ক্রেস্ট দিয়ে বরণ করা হয় এবং বিদায়ী পুলিশ সুপারকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও ফুলের তোড়া উপহার দেয়া হয়।
পরে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা তার কার্যালয়ে এসে নবাগত পুলিশ এস. এম. মুরাদ আলীর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। দায়িত্ব হস্তান্তর শেষে তিনি তার কর্মস্থল ত্যাগ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।
এ সময় তিনি যেমন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তেমনি তার সহকর্মীরা অশ্রুসিক্ত হয়ে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় দেন।