জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

শায়েস্তাগঞ্জে পাকা ধানে বন্য শুকরের তান্ডব

চলছে কার্তিক মাস, এরপরই আসছে অগ্রহায়ণ মাস। অগ্রহায়ণ মাসেই শুরু হয় ধান কাটা। বেশিরভাগ কৃষকরা অগ্রহায়ণ মাসেই সারাবছরের ধানের খোরাক জমিয়ে রাখেন। বিগত কয়েকবছর যাবত শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নুরপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ বন্য শুকরের তান্ডবের কারণে ঠিকমত ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। বিশেষ করে সুরাবই, পুরাসুন্দা ও লাদিয়া গ্রামের মানুষরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পাশে কয়েকশ একর ধানের জমি রয়েছে। অন্যদিকে, জমির পাশ ঘেরেই রঘুনন্দন পাহাড় বয়ে গেছে। ধান পাকার মৌসুম এলেই পাহাড় থেকে দলবেঁধে জমিতে এসে হানা দেয় বন্যশুকরের দল৷ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইতোমধ্যে কাচা-পাকা ধানের বেশ কিছু সংখ্যক জমিতে বন্যশুকরের আক্রমণের দরুন জমির ফসল নস্ট হয়ে গেছে। কোন কোন জমিতে বন্যশুকর একেবারে পাকা ক্ষেতে নতুন করে যেন মই দিয়ে গেছে। এ অঞ্চলের অনেক মানুষ এদের আক্রমণের কারণে কৃষি কাজ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে। আবার কেউ কেউ ফসল নস্ট থেকে বাচানোর জন্য কাচা ধানই কোনমতে কেটে ঘরে তুলছে। এবার এসব জমিতে বেশ ভাল ফলন হয়েছিল, কিন্তু পাকা ধান ঘরে তুলতে পারবেন কিনা এ নিয়ে শংকিত অবস্থায় আছেন কৃষকরা।

এবার অত্র অঞ্চলের মানুষজন বিগত ১৫-২০ দিন যাবত ধান বাচাতে যৌথভাবে জমিতে রাতের বেলা মশাল জ্বালিয়ে পাহারা দিচ্ছেন। এছাড়াও জমির পাশে বাশ দিয়ে মাচাং বানিয়ে সারা রাত সেখানে না ঘুমিয়ে কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ রাতে কিছুক্ষণ পরপরই বেশ কয়েকরকম হুইসেল বাজিয়ে থাকেন, শব্দ পেয়ে যেন বন্যশুকর জমিতে না আসে।
দলবেঁধে শুকর হানা দিলে আত্মরক্ষার জন্য লাটিসোটা ও সাথেই রাখছেন তারা, তবুও ফসল বাচাতে হবে।

সুরাবই গ্রামের কৃষক মোঃ শাহিন মিয়া জানান, প্রতিবছরই এরকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে আমাদের কিন্তু সরকার থেকে কোন সহায়তা আমরা পাচ্ছিনা। যেসব জমিতে একর প্রতি ২০-২৫ মণ ধান হত, বন্য শুকরের তান্ডবের কারণে সেখানে ৫-৬ মণ ধান হয়। সেজন্য সোনার ধান বাচাতে আমরা নিজেরাই সম্মিলিত ভাবে কস্ট করে যাচ্ছি।

এই বিষয়ে কৃষক মোঃ হান্নান মিয়া জানান, শুকর কখনো গভীর রাতে, আবার কখনো ভোর রাতে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ধানের ক্ষেতে নামে। যে জমিতে এরা নামে এ জমির ফসল সম্পুর্ণ নস্ট করে ফেলে। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই, এই পাহাড়ের কিনার দিয়ে যেন তারকাটা বেড়া দেয়া হয়, তাহলে আমাদের ফসল আর নস্ট হবে না।

সুরাবই গ্রামের হেলিম মিয়া জানান, রাত হলেই এদেরকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্য আমরা মশাল জ্বালিয়ে দেই, যেন আগুন দেখে ওরা ভয় পায়, কিন্তু বন্য শুকররা খুবই হিংস্র। আমরা রাতে অনেক ভয় নিয়েই জমিতে ফসল পাহারা দিয়ে আসছি, এদের আক্রমণ থেকে আমরা বাচতে চাই।

সচেতনমহলের কেউ কেউ মনে করেন পাহাড়ে খাদ্যসঙ্কটের কারণে ওরা ধানের জমিতে নেমে আসছে, বনবিভাগ থেকে পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করলে ওরা ধান খেতে আসত না।

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ শহিদুর রহমান জানান, আসলে বনবিভাগ থেকে বন্যশুকরদের রক্ষা করার নির্দেশনা রয়েছে। কৃষকদের ফসল বাচাতে কিছু পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে।

মাটি থেকে ৫-৬ ফুট উচু করে মাচাং বানিয়ে সেখানে, টিন বেধে শব্দ করে কিংবা মশাল জ্বালিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেই ফসল রক্ষা করতে হবে, এদেরকে তাড়িয়ে দেয়া যেতে পারে, কিন্তু কোনভাবেই তাদেরকে মারা যাবে না।

এছাড়া এ বিষয়ে অবগত থাকলে ও আমাদের তেমন কিছু করার নেই। বনজংগলে ওদের জন্য আমরা আলাদা খাদ্যের ব্যবস্থা ও করতে পারছি না।