জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

শিক্ষা জীবনে আমার কিছু বিশেষ ব্যক্তি ।। হামিদ আহমদ হৃদয়

কেটে গেল আমার শিক্ষা জীবনের দশটি বছর। কেমন করে চলে গেল সেই দিনগুলি টেরই পেলাম না। যখন এই দিনগুলির কথা মনে হয় নিজেকে আমি আর বেধে রাখতে পারি না। ইচ্ছে করে আবার নতুন করে শুরু করি আমার ছেলেবেলার সেই পাঠশালা পলায়ন। জানি তা আর সম্ভব নয়। তবুও এই হৃদয় ব্যাকুল হয়ে উঠে। তার কারণ আজ আমি যা আবিষ্কার করলাম তা হল আমার এ দশটি বছরের সাথে জড়িয়ে থাকা বিশেষ ব্যক্তিত্ব এবং তাদের সাথে কাটানো মজার মজার দিনগুলি।

এবার আমি ২০১২ সালের এস এস সি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেছি। স্কুল পর্যায়ে দ্বিতীয় আর গ্রামের মধ্যে প্রথম হওয়ার গৌরব। কখনও ভাবিনি এরকম হবে। আমার এই কৃতিত্বের পেছনে রয়েছে আমার কয়েকজন প্রিয় মানুষের অবদান। যাদের সাথে এখনও দেখা হলে আমার মনের এই লালিত যে অকৃত্রিম শ্রদ্ধা তা যেন আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তেমন ভালো ছাত্র ছিলাম না। সব সময় দেরিতে যাওয়া, ক্লাসের পড়া না শিখা এবং সব সময় দুরন্তপনা ছিল আমার প্রাইমারি স্কুলের প্রতিদিনের রুটিন। হঠাৎ করে সেই রুটিনের পরিবর্তন এসে গেল। আমি পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিলাম। বৃত্তি পরীক্ষায় নাম দেওয়ার কোন ইচ্ছে ছিল না। হঠাৎ একদিন আমার শ্রেণি শিক্ষিকা যুথিকা দিদি যাকে আমরা সবাই “নয়া দিদি” বলে ডাকতাম। তিনি ক্লাসে এসে সবার সাথে করে আমার নামটাও দিয়ে দিলেন।

আমি অনেক আকুতি মিনতি করলাম যে আমার নামটা দিয়ে কি হবে? উনি আমাকে উৎসাহ দিয়ে বললেন “পরীক্ষায় পাশ করা বড় কথা নয় বরং অংশগ্রহণ করাটাই বড়”। আমি একটু ঘুম প্রিয় মানুষ। ঘুমাতে আমার অনেক ভালো লাগত। আমার এই শিক্ষা জীবনে যদি কোন বাধা এসে থাকে তা ছিল শুধু ঘুমের জন্য। প্রতিবারের মত সেবার ও শুরু হলো বৃত্তি কোচিং, কোচিং শুরু হত সকাল ১০ টায়। আমি প্রতিদিন উপস্থিত থাকতে পারতাম না। উপস্থিত থাকলেও যেতাম দেরিতে। তারপরও আমি এই ব্যাচের মধ্যে একা বৃত্তি পেলাম। যার কোনো সম্ভাবনাই ছিলনা। আমার এই বৃত্তি পাওয়াতে দু’জন ব্যক্তির অবদান।

তারা হলেন আমার প্রাইমারী স্কুলের হেড স্যার ও আমার গৃহ শিক্ষক শাহিন আহমদ। আমি যেদিন বৃত্তি কোচিং এ যেতাম না সেদিন হেড স্যার সকালে আমার বাড়িতে সহপাঠিদের পাঠাতেন এবং ওদের বলতেন আমাকে যেন ধরে নিয়ে আসে। ওরা এসে আমাকে ধরে নিয়ে যেত তখন উনার প্রতি আমার খুব রাগ হত। কিন্তু তখন হয়ত বুঝতে পারিনি কিন্তু এখন বুঝতে পারছি সেটা ছিল আমাদের প্রতি উনার একটা বাড়তি গাইড। হেডস্যার আমাদের ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে অনেক উপদেশ দিতেন যা এখনও আমার মনে পড়ে। আমরা সবাই সেবার অনেক জায়গায় বেসরকারী বৃত্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম এবং সকল স্থানে ভালো ফলাফল এবং স্কুলের গৌরব রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম।

মরহুম মফিজ আলী এডুকেশন সোসাইটি কর্তৃক আয়োজিত ১ম বৃত্তি পরীক্ষায় সকল স্কুলের চেয়ে আমাদের ফলাফল ছিল প্রথম। আমি প্রথম স্থান এবং আমাদের সহপাঠি শেফা ২য় স্থান অর্জন করেছিলাম। আমি এখন পর্যন্ত আমাদের হেড স্যারকে হৃদয় ভরে শ্রদ্ধা করি সেই সাথে শ্রদ্ধা করি আমাদের স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা যুথিকা দিদি ও শিখা দিদিকে। উনারা আমাকে খুব স্নেহ করতেন। এখনও দেখা হলে আমাকে আমার পড়ালেখার খবর ইত্যাদি জিজ্ঞেস করেন। আমি স্মরণ করি আমার গৃহ শিক্ষক শাহিন আহমদকে। উনি আমাকে উনার বাড়িতে নিয়ে ও রাতে পড়াতেন। ভোর বেলা ঘুম থেকে ডেকে তুলে পড়াতে বসাতেন। পড়া লেখার ফাকে উনি একজন বড় ভাইয়ের দায়িত্বও পালন কম করেন নি। উনার কাছ থেকে শুনা অনেক হাদিস বাণী এখনও আমি ইসলাম পরীক্ষায় ভাল মার্কস পাই।

শেষ হলো প্রাইমারী জীবন ২০০৬ সালে। তার পর ভর্তি হলাম রাগীব রাবেয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে সকল শ্রেণিতে ভালো ফলাফল করতাম। কোনো ক্লাসে তৃতীয় স্থানের বাইরে যাইনি। তাই স্কুলের সকল স্যার মেডামরা আমাকে স্নেহ করতেন এবং ভালোবাসতেন। এখন আমার প্রিয় ব্যক্তির কথা বলি উনি হলেন “সুমন বিপ্লব” তিনি একজন ভালো লেখক। আমাদের গ্রামে ড. মঞ্জুশ্রী একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা। খুলনার ছেলে হলে কি হবে তিনি আমাদের গ্রামটি আপন করে পড়ে আছেন। উনার স্বপ্ন এই গ্রামটিকে একটি আলোকিত গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার।

আল্লাহ’তায়ালা যেন উনার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেন আমি এই দোয়া করি। সবার কথা বলা হলো এখন আমি যে দু’জন মানুষের কথা বলব তারা হলেন আমার জন্মদাতা পিতা মাতা। আমি আমার জীবনের চেয়ে তাদের বেশি ভালোবাসি। উনারা যদি আমার মাথার উপর না থাকতেন হয়তো আমি এতদূর আসতে পারতাম না। যত দিন আমার এ দেহে রবে প্রাণ তত দিন আমি তাদের সেবায় থাকব। মহান আল্লাহ তায়ালা যেন আমাকে সেই ক্ষমতা দান করেন। আমি একটা প্রাইভেট কলেজে ভর্তি হয়েছি যার নাম “ইউনিভার্স্যাল কলেজ”। প্রথম শ্রেণি থেকে এ পর্যন্ত আমার সকল সহপাঠি এবং যাদের কথা আমি এতক্ষণ বললাম সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছে এ দেশ এ গ্রাম ও আপনাদের সেবা করতে পারি।

হামিদ আহমদ হৃদয়
আকিলপুর, পরগনা বাজার, বিশ্বনাথ, সিলেট।