এম এ মজিদঃ মিয়া মোঃ ইলিয়াছ, আমার দৃষ্টিতে সাকসেস এক তরুন। পড়ালেখা খুব বেশি না, কিন্তু ব্যবসায়ী পরিবার থেকে উঠে আসা ইলিয়াছ ছিলেন সফল একজন ব্যবসায়ী।
এক ঝাক ব্যবসায়ী মিলে যখন হবিগঞ্জ-ঢাকা সড়কে চলাচলকারী দিগন্ত পরিবহনকে টিকিয়ে রাখতে হিমসিম খাচ্ছিলেন, একযোগে সব দিগন্ত বাস কিনে ফেলেন মিয়া মোঃ ইলিয়াছ।
চাল ডাল পেয়াজ রসুনের ডিলার মিয়া মোঃ ইলিয়াছ কিভাবে সামলাবেন পরিবহনের মতো জটিল ব্যবসা? এমন প্রশ্ন ছিল মুখে মুখে। অল্প দিনের মধ্যেই প্রমানিত হলো ইলিয়াছ সাকসেস।
একে একে বাস বাড়তে থাকে, সাধারণ বাস থেকে যোগ হয় এসি বাস, হবিগঞ্জ থেকে ঢাকাসহ বাসের গন্তব্য বাড়তে থাকে।
হবিগঞ্জ থেকে চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুরের মতো দুরুত্বেও মিয়া মোঃ ইলিয়াছের দিগন্ত বাস ছড়িয়ে পড়ে। হবিগঞ্জ থেকে দুর পাল্লার পরিবহনে আধুনিকতার ছোয়া মূলত ইলিয়াছের মাধ্যমে।
হঠাৎ করেই এক তরুনের স্বাদ জাগলো ইউপি চেয়ারম্যান হবে। তাও হবিগঞ্জ শহর ঘেষা রিচি ইউনিয়নের। রিচি ইউনিয়নের সব গ্রামে যার পদচারণাও পড়েনি তখন।
পরিবহন ব্যবসার চেয়েও কঠিন ও জটিল বিষয় ইউপি চেয়ারম্যানের পদ। বয়স তখন ত্রিশের কোটায়। নির্বাচন করলেন, জয়ী হলেন, এবার এক তরুনের গণ মানুষের সাথে মেশার পালা।
একাধারে ৫ বছর ইউপি চেয়ারম্যান হিসাবে সফলতার স্বাক্ষর স্বরুপ পরের নির্বাচনে সকল ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মিলিয়ে যে ভোট পেলেন এর চেয়েও বেশি ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন ইলিয়াছ।
স্কুল জীবন থেকেই ব্যবসায়ী ইলিয়াছ মনে করলেন এবার তিনি রাজনীতি করবেন। ছাত্রদলের রাজনীতি না করেই যোগ দিলেন বিএনপির যুবদলে।
কঠিন এ পথ মারি দিয়ে উপরে উঠতে তার সময় লাগেনি। অল্প দিনের ব্যবধানে হয়ে গেলেন হবিগঞ্জ জেলা যুবদলের সভাপতি, পরে কেন্দ্রীয় যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
সাধারণ ব্যবসা, পরিবহন ব্যবসা, আবাসন ব্যবসা, রাজনীতি, জনপ্রতিনিধি সব স্তরে জেলা পর্যায়ের ঈর্ষনীয় ব্যক্তি ছিলেন মিয়া মোঃ ইলিয়াছ।
অল্পদিনের ব্যবধানে ছোট তিন ভাইয়ের মৃত্যুর পর স্বাভাবিক ছিলেন না ইলিয়াছ। শোকে মুহ্যমান ইলিয়াছ মৃত্যুর আগের দিন তার ফেইসবুকে এক মিলাদের ছবি দিয়ে শুধু লিখলেন “দোয়া চাই”।
মৃত্যুর দুইদিন আগে রাস্তায় গাড়িতে চলন্ত অবস্থায় সর্বশেষ তার সাথে আমার দেখা হয়। কোনো কথা হয়নি, শুধু হাসি বিনিময়ের মধ্যেই শেষ দেখার পরিসমাপ্তি ঘটে।
লেখকঃ আইনজীবী ও সংবাদকর্মী