পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ২য় ধাপে সিলেট জেলার ১২টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব উপজেলাতে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে । কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি।
সেই সুযোগে উপজেলার অধিকাংশ উপজেলায় দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলার হেভিওয়েট নেতারা। এসব হেভিওয়েট বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলীয় প্রার্থীদের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। অনেকেই এসকল বিদ্রোহী প্রার্থীদের ‘আতঙ্ক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
সর্বশেষ অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ ফ্যাক্টরের কারণেই অধিকাংশ আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা পরাজয়বরণ করেছিলেন। ১৩টি উপজেলার মধ্যে মাত্র ৪টিতে জয় পান আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এবছর নির্বাচনে ১২টির মধ্যে ৮টি উপজেলাতেই দলীয় মনোনয়নবঞ্চিতরা চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপির দলীয় প্রার্থী না থাকা স্বত্ত্বেও আবারো পরাজয়ের ‘আতঙ্ক’ নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
নয়টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে অংশ এসব বিদ্রোহী প্রার্থীরা হেভিওয়েট হওয়ায় বিএনপিবিহীন নির্বাচন জমে উঠতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। আর এসব বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেকেই নৌকাকে হারিয়ে জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রেও আত্মবিশ্বাসী। কোন কোন উপজেলাতে একাধিক প্রার্থী বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন নির্বাচনে।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জোরেশোরে প্রচারণা চালিয়ে এসব প্রার্থীরা নির্বাচনের মাঠে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস তৈরি করেছেন। আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের এসব নেতারা নিজেদের বলয়ের কর্মী-সমর্থকদেরও বিভাজিত করে নির্বাচনের মাঠে ব্যস্ত রেখেছেন।
সিলেট জেলার আটটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট বিদ্রোহী প্রার্থীরা হলেন সিলেট সদরে আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিরাজী, কানাইঘাটে জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক মস্তাক আহমদ পলাশ, দক্ষিণ সুরমায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ময়নুল ইসলাম, জৈন্তাপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল আহমদ, বিয়ানীবাজারে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আবুল কাশেম পল্লব, গোয়াইনঘাটে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ, কোম্পানীগঞ্জে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম আহমদ, ফেঞ্চুগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা নূরুল ইসলাম।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে প্রত্যেকটি উপজেলায় গিয়ে তৃণমূলের মতামতের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রে নাম প্রেরণ করা হয়েছিল। কেন্দ্র দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। যদিও তারা যাতে প্রার্থী না হন সে ব্যাপারে তাদের সতর্ক করা হয়েছিল। সেটা উপেক্ষা করে প্রার্থী হয়েছেন তারা।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী কামাল আহমদ বলেন, আমি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী নই। দলই আমাদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। গত নির্বাচনে আমি জয়ী প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম। তাই এবছর তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমাকে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করেছেন। তৃণমূলের একজন প্রার্থী হিসেবে আমি জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ফায়দা নিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় অনেকেই চেয়ারম্যান পদ বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টায় ছিলেন। সেই পদ বাগিয়ে নিতে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত যেসব প্রার্থী ‘স্বতন্ত্র’ কিংবা ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তারা শুধুমাত্র ‘আত্ঙ্ক’ নয় জয়ের দৌঁড়ে অনেকটা এগিয়ে আছেন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন অনেকে।