সেপ্টেম্বরে সরব হচ্ছে আওয়ামীলীগের রাজনীতির মাঠঃ
করোনা ভাইরাসের প্রকোপ না কমলেও অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে সারা দেশের জনজীবন। ধীরে ধীরে সরব হচ্ছে রাজনীতির মাঠও। দলীয় কার্যক্রমে ফিরছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এক দিন পরই শুরু হচ্ছে সেপ্টেম্বর মাস। এ মাস থেকেই সংগঠনের স্থগিত কার্যক্রম আবার সচল করতে যাচ্ছে দলটি।
দলের শূন্য পদগুলো পূরণ, সংসদীয় শূন্য পাঁচ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেয়াসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশেরও জোর আলোচনা চলছে। সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি দলটি সরকারে থাকায় এরই মধ্যে সেপ্টেম্বরে মন্ত্রিসভায় রদবদলের গুঞ্জনও রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, করোনার কারণে থমকে থাকা রাজনীতির চাকা সচল হবে সেপ্টেম্বর থেকে।
জেলা-উপজেলা সম্মেলন শুরু করার আগে ১০ সেপ্টেম্বর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত আসবে। ঘোষণা করা হবে আওয়ামী লীগের পাঁচ সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও। আর যেসব জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই সেটাও পূরণ করা হবে। এর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ শূন্য পদগুলোও পূরণ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
সূত্রে আরো জানা যায়, আওয়ামী লীগের তৃণমূল এখন অনেকটাই অগোছালো। দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন করার আগে বেশ কয়েকটি জেলা সম্মেলন করা হয়েছিল। সেখানে জেলা কমিটিগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি আর করা হয়নি। দলীয়ভাবে উদ্যোগ নিলেও মার্চ থেকে মহামারী করোনার কারণে থমকে যায় সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম।
তবে করোনা, ঘূর্ণিঝড় আমফান ও বন্যায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। চলতি আগস্টে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম না করলে এই শোকের মাসকে ঘিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেছে আওয়ামী লীগ।
মন্ত্রিসভায় রদবদলের গুঞ্জন : মন্ত্রিসভায় রদবদল আসছে এমন গুঞ্জন ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে। কয়েক দিনের মধ্যে এই রদবদল হচ্ছে বলে আলোচনা রয়েছে। রদবদল হলে ‘ব্যর্থ ও সমালোচিত’ কয়েকজন মন্ত্রী বাদ পড়তে পারেন। যুক্ত হতে পারেন নতুন কয়েকজন। রদবদলের আভাসে এরই মধ্যে কয়েকজন মন্ত্রী চিন্তায় পড়েছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
কেউ কেউ আবার রয়েছেন পদোন্নতির আশায়। মন্ত্রণালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা জানান, মন্ত্রিসভার রদবদলের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার। কাকে নিয়ে বা কাকে বাদ দিয়ে তিনি মন্ত্রিসভা চালাবেন সেটা তিনিই ভালো বলতে পারেন।
দলের প্রতি নিবেদিত এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন যেসব নেতা কোনো পদ পাননি, তাদের মন্ত্রিসভায় বিবেচনা করা হবে। তবে আসতে পারে একাধিক নতুন মুখ, যারা আগে কোনো সরকারেই মন্ত্রিসভায় ছিলেন না। পাশাপাশি আগে মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী ছিলেন- এমন কাউকেও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে বর্তমান মন্ত্রিসভার কোনো কোনো সদস্যের।
এ ছাড়া কয়েকজন প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর পদোন্নতি হতে পারে, যাদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দলীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়নি।
আ.লীগের শূন্য পদ পূরণ : প্রেসিডিয়ামের ফাঁকা পদ নিয়েই দলটির ভেতর-বাইরে আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা ১৯ জন।
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে একটি পদ ফাঁকা রেখে সভাপতিমণ্ডলীর ১৮ জন সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে নতুন মুখ হিসেবে আসেন শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান।
সম্প্রতি মোহাম্মদ নাসিম ও অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে আরো দুটি পদ শূন্য হয়। আগামী মাসে আওয়ামী লীগের তিনজন প্রেসিডিয়াম সদস্য, সম্পাদকমণ্ডলীর তিনজন ও কেন্দ্রীয় তিন সদস্যের নাম চূড়ান্ত করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক করতে পারিনি। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এ বৈঠক হবে।’ এ বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে মনে করেন এই প্রেসিডিয়াম সদস্য।
সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রস্তুত হয়ে আছে। শোকের মাস আগস্ট শেষ হলে সেপ্টেম্বর থেকে এ সংগঠনগুলোর কমিটি ঘোষণার কাজ শুরু করা হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানান।
গত বছরের ৬ নভেম্বর সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ২৩ নভেম্বর যুবলীগ, ২৯ নভেম্বর মৎস্যজীবী লীগ এবং ৯ নভেম্বর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১১ ও ১২ নভেম্বর। এই সংগঠনগুলোর সম্মেলনের দিনই কাউন্সিল অধিবেশনের পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রায় চূড়ান্ত। এখন নেত্রীর (শেখ হাসিনা) অনুমোদনের অপেক্ষা।
শুধু একটু দেখা হবে যে, কোনো অনুপ্রবেশকারী, দুষ্কৃতকারী, সুবিধাবাদী কেউ তালিকায় আছে কি না। তারা যাতে সংগঠনগুলোর কমিটিতে ঢুকতে না পারে, সে বিষয়টি একটু যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। সাধারণত শোকের মাস আগস্টে কমিটি দেয়া হয় না। আগস্ট শেষ হলে নেত্রী এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবেন।’
পাঁচ শূন্য আসনে উপনির্বাচন : আসন্ন পাঁচটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে রোববার আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা বসবে। বিকেল সাড়ে
রোববার (৩০ আগস্ট) ৪টায় গণভবনে সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ অফিস ও গণভবন সূত্রে জানা গেছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ ও দলীয় সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, কর্নেল (অব.) ফারুক খান ও ড. আব্দুর রাজ্জাক সভায় উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ অফিস সূত্রে জানা যায়, পাঁচটি শূন্য আসনের উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ১৪১ জন।
সূত্র : সোনালী নিউজ