বাবুল মিয়া ও আলাউদ্দিন অপরাধচক্রের সক্রীয় সদস্য। বয়স আঠারো কিংবা তার একটু বেশী। তাদের পরিচয় হয় জেলখানায়। সেখানে সূচনা হয় অপরাধচক্রের নীল নকশা।
জেল থেকে বেরিয়ে জড়িয়ে পড়ে চুরি, ছিনতাই, দস্যুতার মত কুখ্যাত অপরাধে। ধীরে ধীরে অপরাধের মাত্রা ও সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে গড়ে তুলে অপরাধ জগৎ। নেতৃত্ব দিতে থাকে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের। কিন্তু এই অপরাধ যে এতটা নির্মমতায় পরিনত হবে তা কেউ কখনো কল্পনা করতে পারেনি।
কিন্তু তারাই সংঘটিত করেছে লোমহর্ষক এক হত্যা কান্ড। ছিনিয়ে নিয়েছে ভিকটিমের চালিত পিকআপ। লাশ গুম করার জন্য ফেলে রেখেছে সাতছড়ি গহীন জঙ্গলের উচুঁ টিলায়। এমন তথ্যই বেড়িয়ে এসেছে ভিকটিমের পিতা প্রদীপ সরকারের দায়েরকৃত নিখোঁজ জিডি তদন্ত করতে গিয়ে।
গত ১৫ মে (শুক্রবার) প্রদীপ সরকার নামে একজন অসহায় লোক হবিগঞ্জ সদর থানা হাজির হয়ে একটি সাধারন ডায়রী করেন যে, তার ছেলে সাগর সরকার একজন পিকআপ চালক। কবির মিয়ার পিকআপ গাড়ীতে ড্রাইভার হিসেবে ছিল। গত ১৩ মে (বুধবার) থেকে সে বাড়িতে ফিরে আসছে না। এমনকি অনেক জায়গায় খোঁজাখুজি করার পরও তার কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। উক্ত জিডির সূত্র ধরে আমরা তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
প্রথমে ধারনা করা হয়েছিল ভিকটিম সাগর সরকার সম্ভবত তার চালিত কবির মিয়ার মালিকানাধীন পিকআপ গাড়ীটি অন্যত্র বিক্রয় করে নিজেকে আত্মগোপন করে রেখেছে।
তৎপ্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম (পিপিএম-সেবা) পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জসহ অন্যান্য অফিসারগনের নিয়ে একটি চৌকস টিম গঠন করে এবং দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ভিকটিমের চলিত পিকআপ গাড়ীটি মাধবপুর থানাধীন মনতলা থেকে উদ্ধার করে।
পিকআপ গাড়ীটি উদ্ধারের পর রহস্য মোড় নেয় অন্যদিকে তৈরী হতে থাকে নতুন নতুন সন্দেহ। পরবর্তীতে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে তদন্ত কার্য পরিচালনা করে ভিকটিম সাগরের বন্ধু বাবুল মিয়া (২২), পিতা- তাজু মিয়াকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে।
জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার নিকট হতে লোমহর্ষক এই হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়। পুলিশ বাবুল মিয়ার তথ্য মোতাবেক তার আরেক সহযোগী আলাউদ্দিন (২০), পিতা-আব্দুল কাদিরকে আটক করে।
উভয়কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, অপরাধচক্রের সক্রীয় সদস্য গাড়ী চালক বাবুল মিয়ার পরিকল্পনা মোতাবেক তার পরিচিত আলাউদ্দিনসহ একটি অপরাধী গ্রুপ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গাড়ী ভাড়ার নাম করে ভিকটিম সাগর সরকার (১৮) কে প্রথমে শায়েস্তাগঞ্জ নিয়ে যায়।
সেখান থেকে মাধবপুর নিয়ে যাওয়ার কথা বলে পথিমধ্যে অর্থ্যাৎ চুনারুঘাট থানাধীন সাতছড়ি রাস্তার পাশে জঙ্গলের উচুঁ টিলার উপর উঠিয়ে কৌশলে তার সহযোগীদের নিয়ে গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য সেখানে ফেলে রেখে গাড়ীটি নিয়ে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে মাধবপুর উপজেলার মনতলা নামক সীমান্তবর্তী এলাকায় চলে যায়।
পরবর্তীতে তাদের তথ্য ও দেখানো মতে হবিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম (পিপিএম-সেবা) সহ হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ও সঙ্গীয় অন্যান্য অফিসারদের নিয়ে আজ ১৮ মে বিকাল অনুমান ০৪:০০ ঘটিকায় সাগর সরকারের মৃতদেহ চুনারুঘাট থানাধীন সাতছড়ি জঙ্গল হতে উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, ঘটনাটি ভিকটিমের পিতা প্রদীপ সরকারকে অবহিত করা হয়েছে এবং হত্যা মামলার রুজু করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।