২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১:২৮

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

হবিগঞ্জে ক্ষোভের ঢাল হলেন গউছ

ওয়েছ খছরু : জ্বলছিল বানিয়াচং থানা। পুলিশ অবরুদ্ধ। হাজার হাজার মানুষ থানা ঘেরাও করে আছে। সড়কে পড়েছিল ৯ লাশ। কঠিন সময়। ক্ষোভ প্রশমনের কেউ নেই। তখনই বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ক্ষোভের মুখে ‘ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন জি কে গউছ। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। ৫ই আগস্ট মধ্যরাত। প্রশাসনের নানা পর্যায় থেকে ফোন করা হচ্ছে।

ধরছেন না গউছ। হঠাৎ ফোন দিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বললেন; ‘আপনার কথা মানুষ রাখে। আপনাকে বানিয়াচং যেতে হবে।’ বসে থাকতে পারলেন না জি কে গউছ। ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। রাতের অন্ধকারে ছুটে গেলেন হাওর জনপদ বানিয়াচংয়ে। কয়েক হাজার ক্ষুব্ধ মানুষ থানা ঘেরাও করে আছে। ৫৬ জন পুলিশ সদস্য বন্দি। তাদের নিজেদের হেফাজতে চায় ক্ষুব্ধ জনতা। সেনাবাহিনীর গাড়িতে উঠলেন জি কে গউছ। হাতে নিলেন মাইক। জনগণের ক্ষোভ প্রশমিত করতে বক্তব্য দিলেন। তবুও মানুষ শান্ত হচ্ছিলো না। একপর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ফোন দিলেন। মাইকে ভাষণ দিতে অনুরোধ করলেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মাইকে বক্তব্য দিলেন। আশ্বস্ত করলেন ক্ষুব্ধ জনগণকে। বিচার করা হবে আশ্বাস প্রদান করেন। গতকাল বিকালে জি কে গউছ মানবজমিনকে জানিয়েছেন; ‘আমি কিছু না। কেবল ঢাল হয়েছিলাম। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্য শোনার পর মানুষ শান্ত হয়। ঘরে ফিরে যায়। এরপর আমরা বানিয়াচং থানা থেকে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে আসতে পেরেছি।’ সেদিন ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিলো বানিয়াচংয়ে। গুলিতে মারা গিয়েছিলেন ৯ জন। ক্ষুব্ধ জনতা থানা ভাঙচুর ছাড়াও আগুন দেয়। কিন্তু পুলিশ সদস্যদের জীবিত ফিরিয়ে আনা ছিল চ্যালেঞ্জ। শুধু বানিয়াচং নয়, হবিগঞ্জের মাঠের লড়াইয়ে লড়াকু সেনাপতি হিসেবে সক্রিয় ছিলেন তিনি। টাউন হল তখন দখলে আওয়ামী লীগ। সশস্ত্র ক্যাডারদের গুলি। ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হচ্ছে। লাশ পড়ছে। হবিগঞ্জের বাসাতেই তখন জি কে গউছ। নিজে বিপর্যস্ত। মামলা হচ্ছে। হত্যা মামলা। নিজেও আসামি। তবুও দমে নেই। কর্মীরা মাঠ ছাড়ছে না। পেছন থেকে সাহস, শক্তি সবই দিচ্ছেন। পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। ২রা আগস্ট। টাউন হল থেকে কলেজ ফটকের সামনে পর্যন্ত রণক্ষেত্র। গুলির লড়াই। গুলিতে মারা গেলেন এক কর্মী। ৪ঠা আগস্ট ফের লড়াই। চরম অনিশ্চয়তা। কর্মীরা গুলিবিদ্ধ হচ্ছেন। একজন মারাও গেলেন। হাল ছাড়লেন না জি কে গউছ। বেশিক্ষণ লড়াই করতে হলো না। টিকতে পারলো না আওয়ামী লীগ। মাঠ ছাড়তে বাধ্য হলো। হবিগঞ্জ দখলে নিলো ছাত্র-জনতা। হবিগঞ্জবাসীর জন্য চরম দুঃসময় ছিল ১লা আগস্ট থেকে ৪ঠা আগস্ট। এই সময়ে হবিগঞ্জ ছিল রণক্ষেত্র। হাসিনার পদত্যাগের একদিন আগেই ছাত্র-জনতা দখলে নেয় হবিগঞ্জ। ওখানে মারা গেছেন দুইজন। গুলিবিদ্ধসহ আহত সংখ্যা কয়েকশ’। ৫ই আগস্টের আগে ও পরে ওখানে ‘ম্যাজিকম্যান’ ছিলেন তিনি। ৫ তারিখে বিজয় মিছিলে উচ্ছ্বসিত হবিগঞ্জ। ক্ষোভও আছে মানুষের। জনতার মিছিলে শরিক হয়ে নিজে দিলেন নেতৃত্ব। তখন মানুষের ক্ষোভ। টার্গেটে ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাসাবাড়ি। সংখ্যালঘুরা ছিলেন ভয়ে তটস্থ। জি কে গউছ বেরিয়ে পড়লেন। সন্ধ্যার পর থেকে সংখ্যালঘুদের বাসা-বাড়িতে নেতাকর্মীদের পাঠালেন। হামলা থেকে রক্ষা করলেন মন্দির থেকে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর। হবিগঞ্জ সদরের ইসকন মন্দিরসহ অর্ধশতাধিক মন্দির, মণ্ডপ পরিদর্শন করেন তিনি। আতঙ্কগ্রস্ত সংখ্যালঘুদের আশ্বাস দেন। তার কথায় আশ্বস্ত হন সংখ্যালঘুরা। শুধু সংখ্যালঘুই নয়, প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের নেতাদের বাসা বাড়িতেও গিয়েছেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সান্ত্বনা দিয়েছেন। ছুটে গেছেন শায়েস্তাগঞ্জ ও মাধবপুরেও। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারের পাশে সামর্থ্য মতো দাঁড়িয়েছেন। একইসঙ্গে জনগণের ক্ষোভ কমাতেও কাজ করেন। এমন দৃশ্য হবিগঞ্জের ইতিহাসে বিরল। জি কে গউছ তিনবার ছিলেন হবিগঞ্জের পৌর মেয়র। তাকে বলা হয় জনতার নেতা। জনগণের প্রতিনিধি। জনপ্রিয়তাই তার কাল হলো। আওয়ামী লীগ নেতারা অনেকবার তার শায়েস্তানগরের বাসা ভাঙচুর করেছে। পরিবার- পরিজনকেও আক্রান্ত করেছে। ১৬ বছরে অর্ধশতাধিক মামলায় আক্রান্ত হয়েছেন। ১৫১৭ দিন কারাবাস করেছেন। তবুও মুহূর্তে ভুলে গেলেন সব। দিনশেষে সব ভুলে ঢাল হিসেবে দাঁড়ালেন তাদের পাশেই। জি কে গউছ বলেন; অনেক কষ্ট পেয়েছি। জেল-জুলুমের শেষ ছিল না। আমার পরিবার, নেতাকর্মী সবাই আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু যাদের কারণে আমার ওপর নির্যাতন হয়েছে আমি তো তাদের মতো হতে পারি না। রাজনীতি তো মানুষের জন্যই করি। আজীবন এভাবেই করবো। বলেন- ‘তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেন’- এ নীতিতে আমি বিশ্বাসী। আজীবন এ বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।