হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর, চুনারুঘাট ও বানিয়াচং উপজেলায় হাত ধোয়ার স্টেশন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। করোনা মহামারির সংক্রমণ রোধে স্কুল-কলেজসহ গণজমায়েত হয় এমন স্থানের আশেপাশে হাত ধোয়ার এসব স্টেশন নির্মাণ করা হবে।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর এই স্টেশন নির্মাণ করবে। এজন্য ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এছাড়াও সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা। সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও জগন্নাথপুর উপজেলা। মৌলভীবাজার জেলার মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলায় হাত ধোয়ার স্টেশন নির্মাণ করা হবে।
পাশাপাশি দেশের ৩০টি জেলার ৯৮টি উপজেলায় হাত ধোয়ার স্টেশন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একই প্রকল্পের আওতায় শুধু হাত ধোয়ার স্টেশন নির্মাণই নয়, এর পাশাপাশি আর্সেনিক ও আয়রনের সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের নির্বাচিত গ্রামগুলোতে কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকারের সহযোগিতায় পাইপলাইনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহের স্কিম বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্প এলাকায় হতদরিদ্র জনগণের মাঝে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন স্থাপন, স্কুল এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ওয়াশ পরিষেবার ব্যবস্থা ও ব্যবহার বাড়ানো হবে। নির্বাচিত জনগোষ্ঠীর হাইজিন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম ও হাইজিন কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং টেকসই বিকেন্দ্রীকরণকৃত ওয়াশ পরিষেবা পরিচালনা ও পরিবীক্ষণের জন্য এর সঙ্গে সম্পর্কিত সরকারি সংস্থাগুলো এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো হবে।
এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় হবে এক হাজার ৮৮২ কোটি ৫৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেবে ৫০ কোটি ৮২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।
এছাড়া চীনের নেতৃত্বাধীন এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক বা এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ও বিশ্বব্যাংকের অঙ্গভুক্ত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) নিজস্ব তহবিল থেকে ঋণ বাবদ পাওয়া যাবে এক হাজার ৮৩১ কোটি ৭৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ প্রকল্পটি সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পেয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় লার্জ পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম ৭৮টি, কমিউনিটি পর্যায়ে পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম ৩ হাজার ৩৬৪টি, পাবলিক স্যানিটেশন ও হাইজিন সুবিধা ৩৫টি, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে স্যানিটেশন ও হাইজিন সুবিধা ৫০০টি, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর টয়লেটে রানিং ওয়াটার সুবিধাদি প্রদান ৭৮০টি, অতি দরিদ্রদের জন্য টয়লেট ৩ লাখ ৫১ হাজার ২৭০টি এবং কোভিড-১৯ রোধে পানির সুবিধাদিসহ ৮৮২টি হাত ধোয়া স্টেশন নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধ্যায়-২ এ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনের বিষয়ে সবার জন্য নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ, স্যানিটারি ল্যাট্রিন সুবিধাভোগী নগরবাসীর অনুপাত শতভাগ বাড়ানো ও স্যানিটারি ল্যাট্রিন সুবিধাভোগী গ্রামীণ জনগণের অনুপাত ৯০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে প্রকল্পটি সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
পরিকল্পমন্ত্রী এম এ মান্নান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের ৩০টি জেলার ৯৮টি উপজেলার গ্রামীণ এলাকায় নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও কোভিড-১৯ রোধে রানিং ওয়াটারসহ হাইজিন সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়বে।’
তিনি জানান, বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটি কোভিড পরবর্তী সময়ের জন্য উপযোগী। শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সতর্ক মনিটরিং করবে।