এম শাহআলম, পইল মাছের মেলা থেকে: হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামে প্রতিবছরের মতো এবারও ঐতিহাসিক মাছমেলা অনুষ্ঠিত শুরু হয়েছে। পৌষ সংক্রান্তিতে আয়োজিত এ মেলাটি প্রায় দুই শতাধিক বছর ধরে চলে আসছে। একদিনের জন্য বসলেও মেলা চলবে বুধবার দুপুর পর্যন্ত।
মঙ্গলবার(১৫ জানুয়ারী) সকাল থেকেই মাছ মেলায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। শুধু হবিগঞ্জ জেলা নয়, সিলেট, মৌলভীবাজর, সুনামগঞ্জ, ্ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ অন্যান্য জেলা থেকেও প্রচুর লোক আসেন মেলায়।
এ মেলায় বোয়াল, বাগাই, বড় আকৃতির আইড়, চিতল, গজার, রুই, কাতলসহ নানা প্রজাতির বড় বড়গ মাছ নিয়ে আসেন বিক্রেতার। এছাড়াও পুটি, চিংড়ি, কৈ, চাপিলা, চান্দা মাছ উঠে ব্যাপক হারে।
মেলার প্রধান আকর্ষণ মাছ হলেও এতে কৃষি উপকরণ, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, ভোগপণ্য, আখ, শিশুদের খেলনাও ছিল উল্লেখযোগ্য। পইলসহ আশপাশের গ্রামগুলোর মানুষ এ মেলাটিকে তাদের পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য বলে ধারণ করেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কয়েকশ’ বিক্রেতা অংশ নিয়েছেন পইল মাছের মেলায়। বড় বড় মাছের সঙ্গে অনেকে দেশীয় নানা প্রজাতির ছোট মাছও নিয়ে এসেছেন। বেচাকেনাও চলে ব্যাপক। প্রত্যেকটি দোকানের সামনে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। মানুষজন মাছের দাম হাকাচ্ছেন, কিনছেন, আবার কেউ কেউ সেলফি তুলতেও ব্যস্ত বলে জানা যায়। শুধু সেলফি তুলেই শেষ নয়। মাছ মেলার ছবি দিয়ে কেউ কেউ আবার ঝড় তুলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও।
মাছ বিক্রেতা সমুজ আলী জানান, বিভিন্ন নদী ও হাওর থেকে মাছ আসে এখানে। এ মেলাকে লক্ষ্য করে চলে মাছ ধরারও উৎসব। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিবছরই এ মেলায় মাছ নিয়ে আসি। বাজারের তুলনায় মেলায় মাছের দাম বেশি হলেও সবাই আনন্দের সঙ্গে মাছ কেনেন।’
বিক্রেতা সুরুজ আলী জানান, মাছ মেলায় আগের সেই অবস্থা নেই। তারপরও বিস্ময় তৈরি করেছে নতুন প্রজন্মের জন্য। তিনি বলেন, ‘আগে সিলেট অঞ্চলের তরতাজা মাছ দিয়ে মেলা বসত। আর এখন বেশিরভাগ মাছ আসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। যা বরফ দিয়ে রাখা হয়। কতগুলোতো বক্সে থাকতে থাকতে বেঁকে গেছে। দেখেই অনুমান করা যায় এই মাছগুলো দূর থেকে আনা হয়েছে।’
মেলায় ঘুরতে আসা এম শাহআলম জানান, ‘এখানে শুধু মাছ কেনাটাই বড় কথা নয়। বাপ-দাদার মুখে বড় বড় মাছের গল্প শোনা ছাড়া দেখা হয়নি। এখানে এসে বড় বড় মাছগুলো দেখে চোখ জুড়িয়ে নিলাম। মাঝে মধ্যে তাদের গল্পগুলো অবিশ্বাস্য মনে হত। কিন্তু এখানে এসে সেই ভুলও ভেঙে গেল।’
পইল ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মঈনুল হক আরিফ জানান, ‘ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বাগ্মী নেতা বিপিন চন্দ্র পালের জন্মভূমি পইল গ্রামে প্রতিবছর এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রতিবছরের মতো এ বছরও মেলা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।’