নিজস্ব প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জ পিবিআইর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নিয়ে বাণিজ্যে মেতে উঠার অভিযোগ । হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মোহনপুর প্রকাশিত রাজাপুর গ্রামের ভিক্ষুক কন্যা রুমেনা আক্তার হত্যা মামলা নিয়ে বাণিজ্যে মেতে উঠার এ অভিযোগ।
প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করে নিরপরাধ ব্যক্তিদের চার্জশীটে জড়িয়ে দেয়ার ভয়-ভীতি দেখিয়ে বাণিজ্য শুরু করেছেন হবিগঞ্জ পিবিআইর এসআই মাইনুল।
এ ব্যাপারে আজ মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে ভুক্তভোগিদের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাহুবল উপজেলার কাইতগাও প্রকাশিত রাজাপুর গ্রামের মৃত মুদ্দত আলীর ছেলে মোঃ নজরুল ইসলাম।
তিনি রিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, একটি সরকারী পুকুরে ঘর নির্মাণের জের ধরে ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর বিকালে দখলবাজ কুতুব উদ্দিন গংদের সাথেএ্কই গ্রামের ইছাক আলীর লোকদের সংঘর্ষ হয়। এতে ইছাক আলীর পক্ষের শমসর উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি আহত হয়ে পরদিন হাসপাতালে মারা যান।
এ ব্যাপারে মামলা হলে নজরুল ইসলাম সহ গ্রামের নিরপেক্ষ লোকদের সাক্ষী করা হয়। কয়েক মাস পর হত্যা মামলাটি ২৩ লাখ টাকায় সালিশের মাধ্যমে আপোষ হয়। এরই মাঝে আসামী পক্ষ হত্যা মামলার সাক্ষী নজরুলসহ বাদি পক্ষের বিরুদ্ধে এসিড মামলাসহ আরও কয়েকটি হয়রানীমূলক মামলা দায়ের করেন।
কিন্তু এসব মামলা দিয়েও কিছু করতে পারেনি হত্যা মামলার আসামীরা। পরে ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট রাতে কুতুব উদ্দিনের ভাতিজা মৃত খিরাম উদ্দিনের স্বামী পরত্যিক্তা কন্যা রুমেনা আক্তার রহস্যজনকভাবে খুন হয়।
এব্যাপারে রুমেনা মা বানেছা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামী করে বাহুবল মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
থানা পুলিশ কয়েক মাস তদন্তের পর মামলাটি গত ডিসেম্বরে হবিগঞ্জ পিবিআইতে স্থানান্তর হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মামলা তদন্তের দায়িত্ব গ্রহনের পর পিবিআই এর এসআই মাইনুল ঘটনাস্থলে ভুক্তভোগি নজরুল ইসলামকে ডেকে নেন এবং অন্য একটি মামলার কাগজ দিতে বলেন। এর প্রায় এক মাস পর এসআই মাইনুল নিরীহ নজরুল ইসলামের নিকট এক লাখ টাকা দাবী করেন। কিন্তু নজরুল ইসলাম বাদী বা আসামী পক্ষের কেউ না হওয়ায় তিনি এসআই মাইনুলকে কোন টাকা দিতে অস্বীকার করেন।
এরপর তিনি নজরুল ইসলামের কাছে সন্দেহভাজন কুতুব উদ্দিনের পুত্র আবু সুফিয়ান ও ইছাক মিয়ার পুত্র সাইফুর কোথায় আছে সন্ধান চান। উল্লেখিত দুই যুবক প্রতিপক্ষের হওয়ায় তাদের কোন সন্ধান দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন নজরুল।
এর কিছুদিন পর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নজরুল অন্য একটি মামলায় হবিগঞ্জ আদালতে গেলে এসআই মাইনুল তাকে ধরে পিবিআই অফিসে নিয়ে যান এবং রুমেনা হত্যার সাথে আমি জড়িত মর্মে স্বীকারোক্তি দিতে ক্রস ফায়ারে হত্যার ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে ফাসনোর হুমকী দেন।
এমনকি তিনি রুমেনা হত্যায় কবিরপুরের জিতু মিয়া ও তার শ্যালক শ্রীমঙ্গলের সবুজের নাম বলতে নজরুলকে চাপ দেন। কোনভাবেই নজরুলের স্বীকারোক্তি আদায় করতে না পেরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। দীর্ঘ এক মাস ১৮দিন জেল হাজত বাসের পর গত ১ এপ্রিল নজরুল জামিনে বেরিয়ে আসেন।
এদিকে, নজরুল জেল হাজতে থাকাবস্থায়ই ৬ মার্চ তার প্রতিপক্ষের ইছাক মিয়ার ছেলে সাইফুর রহমান, জালালুদ্দিনের ছেলে মামুন মিয়া এবং নজরুলের ভাতিজা জোবায়ের ও আবু সাঈদকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেন মাইনুল। এ সময় মোবাইল ফোন ও মেমোরী কার্ডসহ ২ হাজার টাকা নিয়ে গেলেও মাইনুল আজ পর্যন্ত তা ফেরত দেননি। এমনকি কোন জব্দ তালিকায়ও এর কোন তথ্য লিপিবদ্ধ করেননি বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
এছাড়া নজরুলকে রিমান্ডে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে তার ভাই সাইফুল ইসলামের নিকট থেকে তিন দফায় মাইনুল ৮৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এমনকি জামিনে বের হয়ে আসলেও এসআই মাইনুল নজরুলকে রুমেনা হত্যার চার্জসীটে অন্তর্ভূক্ত করার হুমকী দিচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন মিথ্যা হত্যা মামলায় হয়রানির শিকার বৃদ্ধ ইউসুফ আলী, জহুর আলী, মকবুল হোসেন ও নিজাম উদ্দিন।